হিলি: ১১ ডিসেম্বর পাক-হানাদার মুক্ত দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে হানাদারমুক্ত হয় দিনাজপুরের সীমান্তবর্তী এলাকা হিলি। পাক হানাদার বাহিনীর নির্মম নির্যাতন, হত্যা যজ্ঞ আর সম্ভ্রম হানির ঘটনা ক্ষনিকের জন্য হলেও কাঁদিয়ে তোলে হিলিবাসীকে। স্মরণ করিয়ে দেয় সেইসব ভয়াল দিনের কথা।
এদিন হিলির মুহাড়াপাড়ায় দেশের সর্ববৃহৎ সম্মুখযুদ্ধ সংগঠিত হয়েছিল বলে দাবি বীর মুক্তিযোদ্ধাদের। এই অঞ্চলের স্বাধীনতাকামী মানুষ সেদিন হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়ে ছিলো চরম সাহসিকতায়। হানাদার বাহিনী মেতে উঠেছিলো নির্মম হত্যাযজ্ঞে। আক্রমন চালিয়েছিলো নিরীহ হিলিবাসীর ওপর। বিজিবি ক্যাম্প এলাকায় প্রায় এক কিলোমিটার সুড়োঙ্গ করে সন্মুখ যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছিল হানাদারেরা।
পাকহানাদাররা উপজেলার ছাতনী গ্রামে শক্ত ঘাটি প্রতিষ্ঠা করে। বিভিন্ন দিকে ক্যাম্প গঠনের মাধ্যমে ভারী অস্ত্র-সস্ত্রে সজ্জিত হয়ে অবস্থান গ্রহণ করে। মুহাড়া পাড়ায় তারা একটি গভীর খাল কেটে বেশ কয়েকটি বাংকার তৈরী করে। ৬-৭ হাজার পাক সেনা ৪০টি ট্যাংক নিয়ে সেখানে অবস্থান করতে থাকে। ৬ ডিসেম্বর ভারত সরকার বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন করার পর হিলিতে ভারত-বাংলাদেশ মিত্র বাহিনীর সাথে পাক সেনাদের প্রচন্ড যুদ্ধ শুরু হয়।
প্রথমদিকে মুহাড়া পাড়া এলাকায় মুক্তিযোদ্ধাসহ মিত্র বাহিনী ব্যাপক বাঁধার সম্মুখীন হয়। পরবর্তীতে মিত্র বাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধারা আরো সু-সংঘঠিত হয়ে ১০ ডিসেম্বর মুহাড়া পাড়া এলাকাসহ পাক সেনাদের বিভিন্ন আস্তানায় আকাশ পথে এবং স্থলপথে একসঙ্গে হামলা চালায়।
এসময় দুইদিন ধরে প্রচন্ড যুদ্ধের পর পাকহানাদার বাহিনী পরাজিত হলে ১১ ডিসেম্বর বেলা ১টার দিকে মুক্তিযুদ্ধের ৭ নম্বর সেক্টরের আওতায় দিনাজপুরের হাকিমপুর (হিলি) হানদার মুক্ত হয়। যুদ্ধ চলাকালীন এখানে প্রায় সাত হাজার পাকিস্তানি সেনা নিহত হয়। শহীদ হন প্রায় ১৩০০ মুক্তিযোদ্ধা এবং মিত্র বাহিনীর ৩৪৫ জন সদস্য। আহত হন অনেকে।
শহীদদের স্মরণে হিলিতে নির্মাণ করা হয়েছে স্মৃতিস্তম্ভ “সন্মুখ সমর”।
প্রতিবছরের ন্যায় মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের আয়োজনে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি হিসেবে এই দিনে সীমান্তের জিরো পয়েন্ট মুক্তিযোদ্ধা সংসদ থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের হয়ে সম্মুখ সমর এ গিয়ে শেষ হবে। সেখানে সংক্ষিপ্ত আলোচনা শেষে নিহতদের রুহের মাগফেরাত কামনায় বিশেষ দোয়া করা হবে।
উক্ত কর্মসূচিতে মুক্তিযোদ্ধারাসহ এলাকাবাসী অংশ গ্রহণের জন্য উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এলাকায় মাইকিং করা হয়েছে। ওই দিন নিহত মুক্তিসেনাদের স্মৃতি চারণসহ বিভিন্ন কর্মসুচির মাধ্যমে দিনটি পালন করে থাকেন হিলিবাসী।