Monday 24 Mar 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

গাজায় বর্বর হামলা: বিশ্ব নেতারা নিশ্চুপ

আজহার মাহমুদ
২২ মার্চ ২০২৫ ১৯:৫২

গাজা উপত্যকা আজ এক ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। ইসরায়েলের অব্যাহত বর্বর হামলায় হাজারো নিরপরাধ মানুষ প্রাণ হারিয়েছে, লক্ষ লক্ষ মানুষ গৃহহীন হয়েছে। হাসপাতাল, স্কুল, মসজিদসহ অসংখ্য স্থাপনা ধ্বংস হয়ে গেছে। এই সহিংসতার পেছনে দীর্ঘ রাজনৈতিক ও সামরিক ইতিহাস রয়েছে, যা ফিলিস্তিনি জনগণের জন্য এক দীর্ঘমেয়াদী দুঃস্বপ্নে পরিণত হয়েছে।

গাজার এই সংকট কোনো নতুন ঘটনা নয়। ১৯৪৮ সালে ইসরায়েল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ফিলিস্তিনিদের ওপর নিপীড়ন শুরু হয়। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসনের সময় থেকেই ইহুদিদের পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া হয়, এবং ধাপে ধাপে ফিলিস্তিনি ভূখ- দখল করা হয়। ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর থেকে গাজা ও পশ্চিম তীর ইসরায়েলের দখলে চলে যায়। এরপর থেকেই গাজাকে একপ্রকার উন্মুক্ত কারাগারে পরিণত করা হয়েছে। অর্থনৈতিক অবরোধ, পানি ও বিদ্যুৎ সংকট, মানবিক সহায়তার উপর বিধিনিষেধ ইত্যাদির মাধ্যমে ফিলিস্তিনি জনগণের জীবনকে দুর্বিষহ করে তোলা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান যুদ্ধের সূচনা হয় ইসরায়েলের একতরফা সামরিক অভিযানের মাধ্যমে। ইসরায়েল দাবি করে, তারা হামাস ও অন্যান্য প্রতিরোধ গোষ্ঠীকে নির্মূল করতে চায়। কিন্তু বাস্তবে ইসরায়েলের এই হামলায় মূলত সাধারণ মানুষই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নারী, শিশু, বৃদ্ধ কেউই রক্ষা পাচ্ছে না। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আহ্বান ও নিন্দাকে উপেক্ষা করে ইসরায়েল তার আগ্রাসন চালিয়ে যাচ্ছে।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রায়সময় গাজার বর্বরতার দৃশ্য দেখা যায়। ভিডিওতে যা দেখা যাচ্ছে তার চাইতে শতগুণ মারাত্বক পরিস্থিতি গাজায় বিদ্যমান। অথচ এই অবস্থা থেকে উত্তরণে বিশ্বমহলের কোনো প্রতিক্রিয়া নেই। তারা শুধু মুখেই বলে যাচ্ছে এটা অন্যায়, এটা অপরাধ।

বিজ্ঞাপন

সম্প্রতি ইসরায়েল গাজায় যে সামরিক অভিযান পরিচালনা করছে, তা মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। তারা নির্বিচারে বোমাবর্ষণ করছে, রকেট হামলা চালাচ্ছে এবং অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করে ফিলিস্তিনিদের হত্যা করছে। আশ্রয়শিবিরগুলোর ওপর হামলা চালিয়ে নারী ও শিশুদের হত্যা করা হচ্ছে। এমনকি হাসপাতাল এবং রেড ক্রসের মতো সংস্থাগুলোও ইসরায়েলের হামলা থেকে রেহাই পাচ্ছে না। জাতিসংঘ ও মানবাধিকার সংস্থাগুলো ইসরায়েলের এই আগ্রাসনকে যুদ্ধাপরাধ হিসেবে চিহ্নিত করলেও, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হচ্ছে। উল্টো পশ্চিমা দেশগুলোর অধিকাংশই ইসরায়েলকে সমর্থন দিয়ে আসছে, ফলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর কোনো নিষেধাজ্ঞা বা শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। এটা একপ্রকার ইসরায়েলকে আসকারা দেওয়ার মতো বিষয়।

এই যুদ্ধ কীভাবে শেষ হতে পারে, তা নিয়ে নানা বিশ্লেষণ রয়েছে। একটি সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কঠোর হস্তক্ষেপ। জাতিসংঘ, ওআইসি, ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিশ্ব মোড়লরা যদি ইসরায়েলের ওপর কূটনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে, তাহলে হয়তো তারা তাদের আগ্রাসন বন্ধ করতে বাধ্য হবে। এছাড়া, ফিলিস্তিনকে একটি পূর্ণাঙ্গ স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া এবং শান্তি আলোচনার মাধ্যমে একটি স্থায়ী সমাধানের পথ বের করা প্রয়োজন।

ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীগুলোও ইসরায়েলের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু তাদের শক্তি সীমিত। ইসরায়েল সামরিকভাবে অত্যন্ত শক্তিশালী এবং পশ্চিমা দেশগুলোর কাছ থেকে প্রচুর সহায়তা পাচ্ছে। তাই শুধুমাত্র সামরিক প্রতিরোধ দিয়ে এই সংকটের সমাধান সম্ভব নয়। কূটনৈতিক ও রাজনৈতিক উপায়ে ফিলিস্তিনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে কার্যকর পথ।

ইসরায়েল এই বর্বরতা চালাচ্ছে মূলত তাদের উপনিবেশবাদী মনোভাবের কারণে। তারা ফিলিস্তিনের ভূখণ্ডকে সম্পূর্ণভাবে দখল করতে চায় এবং মুসলিমদের বিতাড়িত করে নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠার ষড়যন্ত্র করছে। ইহুদি বসতি স্থাপন, জেরুজালেমকে পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়া, এবং ফিলিস্তিনিদের শরণার্থী বানানোর পরিকল্পনা দীর্ঘদিন ধরেই ইসরায়েল বাস্তবায়ন করে চলেছে। পশ্চিমা বিশ্বের বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সমর্থন ও সামরিক সহায়তার কারণেই ইসরায়েল এতটা নির্ভীকভাবে এই হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।

এই পরিস্থিতিতে মুসলিম উম্মাহর করণীয় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রথমত, মুসলিম দেশগুলোকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে জোরালো কূটনৈতিক অবস্থান নিতে হবে। দ্বিতীয়ত, ইসরায়েলের পণ্য বর্জন করা এবং তাদের অর্থনৈতিক প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করা প্রয়োজন। তৃতীয়ত, ফিলিস্তিনিদের জন্য মানবিক সহায়তা পাঠানো এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে এই ইস্যুকে জোরালোভাবে তুলে ধরা দরকার। চতুর্থত, মুসলিম বিশ্বের বুদ্ধিজীবী, মিডিয়া ও সংগঠনগুলোর উচিত ইসরায়েলের বর্বরতার বিরুদ্ধে ব্যাপক প্রচারণা চালানো।

পরিশেষে বলতে চাই, গাজায় চলমান এই গণহত্যা ও দখলদারিত্বের অবসান হওয়া জরুরি। এটি শুধু ফিলিস্তিনের সমস্যা নয়, বরং এটি মানবতার সংকট। বিশ্ববাসী যদি ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে চায়, তাহলে ফিলিস্তিনিদের স্বাধীনতার পক্ষে দাঁড়ানো ছাড়া আর কোনো পথ নেই। মুসলিম বিশ্ব ও সমগ্র মানবজাতিকে এখনই ফিলিস্তিনের পক্ষে রুখে দাঁড়াতে হবে।

লেখক: সাংবাদিক

সারাবাংলা/এএসজি

আজহার মাহমুদ গাজায় বর্বর হামলা মুক্তমত

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর