ঢাকা: বাংলাদেশের অর্থনীতি এক গভীর দুষ্টচক্রে আটকে পড়েছে। এখানে উচ্চ মূল্যস্ফীতি, বিনিয়োগ স্থবিরতা, কর্মসংস্থানের সংকট ও ক্রমবর্ধমান বৈষম্য একে অপরকে আরও শক্তিশালী করছে। সংকট আর নীতিগত দুর্বলতা অর্থনীতিকে এক ধরনের ফাঁদে আটকে ফেলেছে। বর্তমান প্রবণতা অব্যাহত থাকলে আগামী নির্বাচিত সরকারের সামনে অর্থনীতি সামাল দেওয়া হবে সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ হবে। এখান থেকে বের হতে হলে গভীর সংস্কার ছাড়া বিকল্প নেই।
ভয়েস ফর রিফর্ম (বিআরআইএন) এর যৌথ উদ্যোগে বুধবার (২৪ ডিসেম্বর) আয়োজিত “অর্থনীতি কি দুষ্টচক্রের ফাঁদে” শীর্ষক লেকচার সিরিজ ও গোলটেবিল আলোচনা সভায় বক্তারা এমন অভিমত ব্যক্ত করেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের সাবেক লিড অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, দীর্ঘদিনের উচ্চ মূল্যস্ফীতি সাধারণ মানুষের প্রকৃত আয় কমিয়ে দিচ্ছে, একই সঙ্গে বিনিয়োগকারীদের আস্থায় বড় ধরনের ধস নামিয়েছে। ব্যাংক খাতের দুর্বলতা, খেলাপি ঋণ ও বৈদেশিক মুদ্রার চাপ একে অপরকে প্রভাবিত করে অর্থনীতিকে আরও নাজুক করে তুলছে। তার মতে, স্বল্পমেয়াদি সমাধানে জোর দিলে চলবে না, কাঠামোগত সংস্কারই হতে হবে অগ্রাধিকার।
সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সুফল সমাজের সব স্তরে পৌঁছাচ্ছে না। আয় ও সম্পদের বৈষম্য বাড়ছে, যা সামাজিক ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। তিনি সতর্ক করে বলেন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হলে তরুণদের হতাশা অর্থনীতির জন্য বড় বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. রাশেদ মাহমুদ তিতুমীর বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি এখন একটি কাঠামোগত ফাঁদে আটকে আছে। ব্যাংক খাতের শৃঙ্খলার অভাব, দুর্বল রাজস্ব ব্যবস্থা ও উৎপাদন খাতে বৈচিত্র্যের ঘাটতি এই দুষ্টচক্রকে আরও গভীর করছে। প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার ও জবাবদিহি ছাড়া এই সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব নয়।
পরিকল্পনা কমিশনের সদস্য ড. মঞ্জুর হোসেন বলেন, ভবিষ্যৎ নির্বাচিত সরকার সীমিত রাজস্ব, বাড়তি সামাজিক ব্যয় ও বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে অর্থনীতি পরিচালনার কঠিন বাস্তবতার মুখে পড়বে। বাস্তবসম্মত পরিকল্পনা ও অগ্রাধিকার নির্ধারণে ব্যর্থ হলে অর্থনৈতিক চাপ আরও বাড়বে বলে তিনি মন্তব্য করেন।