কুষ্টিয়া: ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্র উপদেষ্টা, প্রক্টর, প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি ও অন্যান্য শিক্ষকদের গালিগালাজ করায় শাখা ছাত্রদল নেতাদের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
রোববার (২১ ডিসেম্বর) দুপুর আড়াইটার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসন ভবন চত্বরে এ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে প্রশাসন ভবনের সামনে সমবেত হয়।
শাখা ছাত্রদলের আহ্বায়ক সাহেদ আহম্মেদ, সদস্য নুর উদ্দিন ও রাফিজ আহমেদের বিরুদ্ধে তারা অভিযোগ তুলেন।
বিভাগগুলো হলো- আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ, অর্থনীতি বিভাগ এবং ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ।
মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘শিক্ষকদের অপমান সইবে নারে ইবিয়ান’, ‘প্রক্টরের অপমান সইবে নারে ইবিয়ান’, ‘ট্রেজারের অপমান সইবে নারে ইবিয়ান’, ‘প্রোভোস্টের অপমান সইবে নারে ইবিয়ান’ এবং ‘অপমানকারীদের কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেয়।
মানববন্ধনে শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘যেসব শিক্ষকদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করা হয়েছে, তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিশ্রমী ও সুনামধন্য শিক্ষকদের মধ্যে কয়েকজন। শুধু ওই শিক্ষকরা নন, বরং বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষকের সম্পর্কে একটি ছাত্র সংগঠনের শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের এ ধরনের ন্যাক্কারজনক মন্তব্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা চাই, তাদের ক্ষমা চাওয়া শুধু প্যাডে সীমাবদ্ধ না থেকে প্রকাশ্যে জনসম্মুখে হোক।’
তারা আরও বলেন, ‘ছাত্রদল নেতারা শুধু শিক্ষকদেরই অবমাননা করেনি, বরং ওই হলের ছাত্রীদের জড়িয়ে কুরুচিপূর্ণ ও আপত্তিকর মন্তব্য করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। নির্দিষ্ট কোনো সংগঠন নয়, যেকোনো দল-মতের শিক্ষার্থী যদি শিক্ষক ও ছাত্রীদের সম্পর্কে এমন বাজে মন্তব্য করে, তাহলে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। আমাদের প্রতিবাদের উদ্দেশ্য হচ্ছে, ভবিষ্যতে যেন কেউ শিক্ষক ও ছাত্রীদের বিষয়ে এমন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য না করতে পারে। আমরা তাদেরকে সতর্ক করছি।’
আরবী ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের শিক্ষার্থী রাউফুল্লাহ খান বলেন, ‘কয়েকজন শিক্ষককে উদ্দেশ্য করে যেসব ছাত্রনেতারা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেছেন, তারা আসলে কাদের নেতা? তাদের ভাষা যদি এমন হয়, তবে তা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। যারা শিক্ষক ও ছাত্রীদের জড়িয়ে অশালীন ও কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করেন, তারা কীভাবে নিজেদের ছাত্রনেতা বলে দাবি করেন? গালি দেওয়ার রাজনীতি, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্যের রাজনীতি এবং শিক্ষক-ছাত্র সবাইকে অপমান করার সংস্কৃতি থেকে আমাদের বেরিয়ে আসতে হবে। শুধু একটি প্যাডে লিখিত ক্ষমা চাওয়ায় বিষয়টি সীমাবদ্ধ রাখা চলবে না; বরং প্রকাশ্যে সংশ্লিষ্ট শিক্ষকের কাছে ক্ষমা চাইতে হবে। ছাত্র রাজনীতি হতে হবে ছাত্রদের কল্যাণে অপমান, অশালীনতা বা দম্ভ প্রদর্শনের জন্য নয়।’
ইলেকট্রিকাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শিক্ষার্থী মুবাশ্বির আমিন বলেন, ‘১৬ ডিসেম্বর কয়েকজন শিক্ষককে একটি সংগঠনের নেতারা কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য করে অপমান করেছে। তারা সেখানকার নারী শিক্ষার্থীদেরও হেনস্তা করেছে। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই। আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের মাটিতে আর কোনো শিক্ষকের অপমান সইবো না। যারা এ ধরনের ন্যাক্কারজনক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত তাদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। আমরা দেখেছি তারা তাদের সংগঠনের প্যাডে ক্ষমা চেয়েছে। কিন্তু অবিলম্বে তাদেরকে জনসমুক্ষে তাদের ক্ষমা চাইতে হবে। তারা যাতে ভবিষ্যতে এরকম দুঃসাহস আর না দেখাতে পারে এ জন্যই আমাদের আজকের এই কর্মসূচি।‘