ঢাকা: বাংলাদেশ যেন পুনরায় কোনো ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বদরবারে পরিচিতি না পায়, সেজন্য অপশাসনের বিরুদ্ধে রাজপথের লড়াই অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান।
তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, ‘মানুষকে ধোঁকা দিয়ে আর কাজ হবে না। আমরা একটি মানবিক বাংলাদেশ গড়তে চাই।’
বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের আবদুস সালাম মিলনায়তনে ডক্টরস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) আয়োজিত এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক এই সভাটি অনুষ্ঠিত হয়।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনব্যবস্থার কড়া সমালোচনা করে মঈন খান বলেন, ‘‘আওয়ামী লীগ দেশসেবার পরিবর্তে ‘আত্মসেবা’র রাজনীতি শুরু করেছিল। তারা মূলত সমাজের মুষ্টিমেয় ধনী ব্যক্তিদের নিয়ে একটি ‘অলিগার্কি’ (গোষ্ঠীতন্ত্র) কায়েম করেছিল। এর ফলে দেশের দরিদ্র মানুষ আরও দরিদ্র হয়েছে এবং সাধারণ মানুষের অর্থনৈতিক অধিকার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে।’
তিনি দেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রপরিচালকদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘বাংলাদেশ বর্তমানে ইনফরমাল ইকোনমির ওপর টিকে আছে। যারা ভবিষ্যতে দায়িত্ব নেবেন, তাদের এই সাধারণ মানুষের টিকে থাকার লড়াইকে গুরুত্ব দিতে হবে, ঠিক যেভাবে শহিদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান তার মাত্র সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে করেছিলেন।’
রাজধানী ঢাকার ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার চিত্র তুলে ধরে বিএনপির এই সিনিয়র নেতা বলেন, ‘বর্তমানে ঢাকা ৩ কোটি ৬৬ লাখ মানুষের শহর। ২০৫০ সাল নাগাদ এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম জনবহুল শহর হবে।’ এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে কীভাবে সুশৃঙ্খলভাবে পরিচালনা করা হবে এবং তাদের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে, তা নিয়ে এখনই সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে তিনি উল্লেখ করেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার উদ্যোগ প্রসঙ্গে ড. মঈন খান বলেন, ‘সংস্কার একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে ৫৪ বছরের স্বাধীনতার পরও আমাদের গণতন্ত্র খুঁজে ফিরতে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। স্বাধীনতার এত বছর পর আমাদের অর্জন কী? মানুষের কথা বলার অধিকার এবং খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা না গেলে সব অর্জনই ম্লান হয়ে যায়।’
তিনি আরও বলেন, ‘মানুষ হয়তো না খেয়ে থাকতে পারে, কিন্তু কথা না বলে থাকতে পারে না। ইতিহাসে যখনই কোনো স্বৈরশাসক মানুষের বাকস্বাধীনতা কেড়ে নিয়েছে, তখনই গণবিদ্রোহ হয়েছে।’
দেশের বর্তমান অস্থির রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে অতীত ও বর্তমান নেতৃত্বকে জবাবদিহিতার আওতায় আনার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি। তিনি বলেন, ‘আধুনিক রাষ্ট্রব্যবস্থা ক্রমশ নিষ্ঠুর হয়ে উঠছে, যা থেকে উত্তরণে আগামী দিনের নেতৃত্বকে জনগণের মৌলিক অধিকারের প্রতি অধিকতর সচেতন হতে হবে।’
আলোচনা সভায় ড্যাব-এর কেন্দ্রীয় নেতারাসহ বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মী ও পেশাজীবী প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।