ঢাকা: জাতিসংঘের পরিবেশবিষয়ক সপ্তম অধিবেশনে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন, জীববৈচিত্র্য ক্ষয় ও দূষণ—এই ত্রি-মাত্রিক বৈশ্বিক সংকট মোকাবিলায় পূর্বানুমানযোগ্য, সুষম ও পর্যাপ্ত আন্তর্জাতিক অর্থায়নের জোরালো আহ্বান জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১১ ডিসেম্বর) কেনিয়ার নাইরোবিতে অনুষ্ঠিত অধিবেশনের প্লেনারিতে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতীয় বিবৃতি উপস্থাপন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. ফারহিনা আহমেদ। এ সময় পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো. জিয়াউল হক প্রতিনিধিদলে উপস্থিত ছিলেন।
ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘অর্থায়ন ও প্রযুক্তি সহায়তায় বৈশ্বিক ঘাটতি উন্নয়নশীল ও জলবায়ু-ঝুঁকিপূর্ণ দেশগুলোকে গভীর সংকটে ফেলছে। সহায়তা না থাকায় এসব দেশের সরকারগুলোকে স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও সামাজিক সুরক্ষার মতো মৌলিক খাত থেকে অর্থ সরিয়ে দুর্যোগ মোকাবিলায় ব্যয় করতে বাধ্য হতে হয়, যা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য গুরুতর ঝুঁকি সৃষ্টি করছে।’
তিনি ইউএনইএ-৭ –কে বিভিন্ন বহুপাক্ষিক পরিবেশ চুক্তির মাধ্যমে সমন্বিত ও সুষম সম্পদ আহরণে নেতৃত্ব দেওয়ার আহ্বান জানান।
বৈশ্বিক পরিবেশগত জরুরি অবস্থা উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ মোট বৈশ্বিক নিঃসরণের শূন্য দশমিক ৫ শতাংশেরও কম অবদান রেখেও বারবার জলবায়ু বিপর্যয়ের শিকার হচ্ছে। তাপদাহ, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি ও নদীভাঙনে লাখো মানুষ বাস্তুচ্যুত হচ্ছে।‘
তিনি জানান, জমা দেওয়া বাংলাদেশের উন্নত এনডিসি ৩ দশমিক শূন্য এ ২০৩৫ সালের মধ্যে নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে ২৫ শতাংশ বিদ্যুৎ উৎপাদনের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে—যা বর্তমান সক্ষমতার পাঁচগুণ। পাশাপাশি জাতীয় অভিযোজন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং স্থানীয়ভাবে নেতৃত্বাধীন অভিযোজন কর্মসূচি সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
১৮ কোটি মানুষের চাপ সামাল দিতে গিয়ে জীববৈচিত্র্য হুমকির মুখে—উল্লেখ করে সচিব বলেন, ‘বাংলাদেশ জাতীয় জীববৈচিত্র্য কৌশল ও কর্মপরিকল্পনা (২০২৬–৩০), জাতীয় সংরক্ষণ কৌশল, রামসার কৌশল (২০২৬–৩০) এবং ভূমি অবক্ষয় নিরপেক্ষতা লক্ষ্য বাস্তবায়নে অগ্রগতি অর্জন করেছে।’
দূষণ নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশের অগ্রগামী ভূমিকার কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘পাতলা পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধকারী বিশ্বের প্রথম দেশ হিসেবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে কঠিন বর্জ্য, ই-বর্জ্য, চিকিৎসা বর্জ্য, ঝুঁকিপূর্ণ বর্জ্য ও জাহাজভাঙা বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য পৃথক বিধিমালা প্রণয়ন করেছে। প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় বর্ধিত উৎপাদক দায়বদ্ধতা নির্দেশিকা চূড়ান্ত এবং একবার ব্যবহারযোগ্য কয়েকটি প্লাস্টিক পণ্যের উৎপাদন ও ব্যবহার নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। রাসায়নিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনা বিধিমালা খসড়াও প্রস্তুত রয়েছে।’
বাংলাদেশ ইউএনইএ-৭ –কে রাসায়নিক ও প্লাস্টিক ব্যবস্থাপনায় প্রতিরোধমূলক, নিরাপদ বিকল্পনির্ভর এবং বৃত্তাকার অর্থনীতি ভিত্তিক জীবনচক্রভিত্তিক সমন্বিত পদ্ধতি গ্রহণের আহ্বান জানায়। পাশাপাশি অনানুষ্ঠানিক বর্জ্য খাতের শ্রমিকদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার ওপরও বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে।
ড. ফারহিনা আহমেদ বলেন, ‘দৃঢ় নীতি ও জনসমর্থন থাকলে উচ্চাকাঙ্ক্ষা সফল হয়—এই বিশ্বাস নিয়েই বাংলাদেশ পরিবেশগত সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক সহযোগিতা বাড়ানোর প্রত্যাশা করছে।’