১৯৭১ সালের ১২ ডিসেম্বর। এদিন সেনানিবাসে প্রাদেশিক সরকারের সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলীর সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। ওই বৈঠক আলবদর ও আলশামস বাহিনীর কেন্দ্রীয় অধিনায়করা অংশ নেন। সেখানে বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশা প্রণয়ন করা হয়।
বৈঠক শেষে ওই সময়ে বাংলাদেশের শীর্ষ বুদ্ধিজীবীদের তালিকা হন্তারক বাহিনীর হাতে তুলে দেন রাও ফরমান আলী। পরিকল্পনামাফিক সে রাতেই আলবদর বাহিনী সাংবাদিক নিজামউদ্দিন আহমদ, আ ন ম গোলাম মোস্তফাকে তাদের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। তারা আর জীবিত ফিরে আসেননি।
এদিন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জার বাংলাদেশের বন্ধুরাষ্ট্র হিসেবে পরিচিত রাশিয়ার প্রতিনিধি ভোরেন্টসভকে বলেন, ‘১২ ডিসেম্বর মধ্যাহ্নের আগেই ঢাকায় ভারতীয় বাহিনীকে যুদ্ধ বিরতি মেনে নিতে বাধ্য করতে হবে। তা না হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রয়োজনীয় সামরিক ব্যবস্থা নেবে।’ এ ছাড়া, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে হস্তক্ষেপের সিদ্ধান্ত পাকিস্তানকে জানিয়ে দেয় মার্কিন প্রশসন।
১২ ডিসেম্বর চার নম্বর সেক্টরের মুক্তিযোদ্ধারা হরিপুর আক্রমণ করে। একদিন সম্মুখযুদ্ধের পর হরিপুর শত্রুমুক্ত হয়। একইসঙ্গে হানাদারমুক্ত হয় নীলফামারী, গাইবান্ধা, নরসিংদী, সরিষাবাড়ী, ভেড়ামারা ও শ্রীপুর।
এদিন ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টির (ন্যাপ) সভাপতি মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ব্যাপক সমর্থন দেওয়ায় ভারত সরকার ও দেশটির জনগণকে ধন্যবাদ জানান। এক বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘আমার জীবনের শেষ সংগ্রাম বাংলাদেশকে স্বাধীন করা, সমাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা এবং ভারতের সঙ্গে কনফেডারেশন গড়ে তোলা।’
একই দিন যৌথবাহিনী টাঙ্গাইল অভিমুখে আক্রমণ শুরু করে। সূর্যাস্তের আগে জামালপুর ও ময়মনসিংহের দিক থেকে মিত্রবাহিনীর জেনারেল নাগরার বাহিনী টাঙ্গাইলে প্যারাস্যুট ব্যাটালিয়নের সঙ্গে যোগ দিয়ে শক্তিশালী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। মিত্রবাহিনী টাঙ্গাইলের মির্জাপুর, কালিয়াকৈর ও পার্শ্ববর্তী অঞ্চলে ছত্রীসেনা নামিয়ে রাতে পাকিস্তানি বাহিনীর ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। তাদের সাহায্যে এগিয়ে আসে কাদেরিয়া বাহিনী। সারারাত তুমুল যুদ্ধ শেষে ভোরে হানাদার বাহিনী অস্ত্র সমর্পণ করে। বিজয়ীর বেশে মুক্তিবাহিনী ঢাকার দিকে অগ্রসর হতে থাকে।
ঢাকায় পাকিস্তানি সামরিক অবস্থানের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত থাকে। যেকোনো সময় মুক্তি ও মিত্রবাহিনীর মিলিত কমান্ড পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়বে— এমন খবরে অনেকেই ঢাকা ছেড়ে মুক্তাঞ্চলে চলে যায়। এদিন ঢাকা থেকে কোনো সংবাদপত্র প্রকাশ হয় না।