Wednesday 10 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন দেখার অপেক্ষায় ড. দেবপ্রিয়

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৩১ | আপডেট: ১০ ডিসেম্বর ২০২৫ ২০:৫৬

প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগ ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’য় সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রাম ব্যুরো: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সুষ্ঠু নির্বাচন করার সক্ষমতা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মাননীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেছেন, অধ্যাপক ড. ইউনুস বলেছেন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন উনি করে দেখাবেন, আমরা তার অপেক্ষায় আছি।

বুধবার (১০ ডিসেম্বর) দুপুরে নগরীর জিইসি মোড়ে এক হোটেলে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের প্রাক-নির্বাচনী উদ্যোগ ‘আঞ্চলিক পরামর্শ সভা’ শেষে তিনি সাংবাদিকদের একথা বলেন।

ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন প্রসঙ্গে এসডিজি বাস্তবায়নে নাগরিক প্ল্যাটফর্ম, বাংলাদেশের আহ্বায়ক অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, ‘আমার কাছে এমন কোনো সার্ভে নাই, যেটাতে আমি বলতে পারব মানুষ মনে করে যে নির্বাচন হবে, কি না? আমি এর আগেও বলেছি নির্বাচনটি একটা অবধারিত বিষয়ে পরিণত হচ্ছে ক্রমান্বয়ে। নির্বাচনের পক্ষের শক্তি অনেক বেশি। কারণ নাগরিকরা, প্রধান প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো, ব্যবসায়ী গোষ্ঠী, নাগরিক সম্প্রদায়, সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ অন্তর্বর্তী সরকারও নির্বাচন চায়।’

বিজ্ঞাপন

কিন্তু সুষ্ঠু নির্বাচনের শঙ্কা দূর হচ্ছে না জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সুষ্ঠ একটি নির্বাচন করার জন্য সক্ষমতার ব্যাপারে যে শঙ্কা, সেই শঙ্কা কিন্তু দূর হচ্ছে না। সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে এই শঙ্কা দূর করে মানুষের অংশগ্রহণের ভিত্তিতে একটি ভালো ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অবশ্যই আয়োজন করতে হবে। অধ্যাপক ড. ইউনুস বলেছেন ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ নির্বাচন উনি করে দেখাবেন। আমরা তার অপেক্ষায় আছি।’

বাংলাদেশ একটা দোলাচলের মধ্যে আছে মন্তব্য করে দেবপ্রিয় বলেন, ‘একদিকে অসম্ভব একটা পরিবর্তন সম্ভাবনার চিন্তা, অন্যদিকে একটা আস্থার সংকটও একইসঙ্গে আছে। এই দুটোর মধ্যেই আমরা বসবাস করছি। জনগণের ভূমিকা নিয়ে এই ফাঁকটাকে আমাদের মিলাতে হবে। রাজনীতিবিদের আয়-ব্যয়ের হিসাবগুলোকে আরও স্বচ্ছতার সঙ্গে কীভাবে সামনে আনা যায়, পাশাপাশি উনাদের পরিবারের, আত্মীয়স্বজনদেরও সহায় সম্পত্তির বিষয়টিও সামনে আসছে।’

‘আগামী নির্বাচন নিয়ে কি প্রত্যাশা সেটা জানতে আমরা সপ্তমবারের মতো স্থানীয় পর্যায়ে নাগরিকদের কাছ থেকে চট্টগ্রামে এসেছি। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রদের সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে। যে বিষয়টি লক্ষণীয় সেটা হলো, এখন আমরা বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে আলোচনা করে কতগুলো সাধারণ একই রকম অভিন্ন সুর খুঁজে পাচ্ছি। সকলেই সুশাসনের জন্য, জবাবদিহিতার জন্য, আইনের শাসনের জন্য, নিরাপত্তার জন্য, অধিকারের জন্য, ইত্যাদি বিষয়গুলোকে সাধারণভাবে সবাই সামনে নিয়ে আসছে। সকলেরই প্রত্যাশা একটি দক্ষ প্রশাসন, একটি স্বাধীন বিচার ব্যবস্থা, একটি নিরপেক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ইত্যাদির বিষয়ে সাধারণ ধারণা সকলের মধ্যে আছে। এই বিষয়গুলো রাজনৈতিবিদরা তাদের নির্বাচনি ইশতেহারের ভেতরে কীভাবে স্থান করে দিবেন এটি জানার অপেক্ষায় আছে সবাই।’

তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের মতো বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও ঘোষণা দিয়েছিল তারা তাদের মন্ত্রিপরিষদের বা সরকার প্রধানের সম্পত্তির হিসাব দিবেন। কিন্তু সেক্ষেত্রে মানুষের অনেক বড় হতাশা রয়েছে যে, আগের মতোই এবারও সরকার সেটা পালন করল না। ফলে আগামী সরকারও একই কাজ না করার ক্ষেত্রে একটা উৎসাহ দিয়ে গেল কিনা তা নিয়ে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।’

‘আজকে একটা বড় আলোচনার জায়গা ছিল। সেটা হলো- এত সংস্কারের আলোচনা আমরা করলাম বাংলাদেশে গত দেড়বছর যাবৎ; কিন্তু, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ সংস্কারের ব্যাপারে নির্বাচনকে সামনে রেখে সেরকম কোনো বড় আলোচনা হলো না। রাজনীতিবিদরাও দাবি করলেন না, সরকারও দাবি করল না, নির্বাচন কমিশনও দাবি করল না এবং দুর্নীতি দমন কমিশন সেটা নিয়ে আগালো না। সেহেতু রাজনীতিবিদদের রাজনৈতিক দলের গণতন্ত্রায়ন দুর্নীতিমুক্ত থাকা তার সঠিক মনোন্নয়ন দেওয়া তাদের জবাবদিহী করার দাবিটা খুব বড়ভাবে আজকের আলোচনায় এসেছে।’

দেবপ্রিয় আরও বলেন, ‘আমাদের পক্ষ থেকে নাগরিক প্ল্যাটফর্মের পক্ষ থেকে এ লক্ষ্যে আমরা দুটো কাজ করছি। এক যে সমস্ত প্রতিশ্রুতি এবং সংস্কারের কথা হচ্ছে, তাকে একটা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে নিয়ে গিয়ে আমরা রিফর্ম ওয়াচ তৈরি করেছি। সেটা ১৪ ডিসেম্বর আমরা উদ্বোধন করব। একইরকমভাবে বাংলাদেশব্যাপী যে আলোচনাগুলো হলো এইটার নাগরিক প্রত্যাশাগুলোকে একত্রিত করে একটি নির্বাচনি নাগরিক ইশতেহার তৈরি করে আগামী ২০ ডিসেম্বর বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের হাতে আমরা তুলে দেব। এটাকে ধারাবাহিকভাবে পরবর্তী অবস্থায় আমরা যাতে মনোযোগে রাখি সেটার চেষ্টাও আমরা করব।’

এর আগে, পরামর্শ সভায় শিক্ষাবিদ অধ্যাপক মু. সিকান্দার খান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ চট্টগ্রাম কেন্দ্রের সাবেক সভাপতি প্রকৌশলী দেলোয়ার মজুমদার, ইস্ট ডেলটা ইউনিভার্সিটির উপাচার্য মোহাম্মদ নাজিমুদ্দিন বক্তব্য দেন।