ঢাকা: রাজধানীর অদূরে টাঙ্গাইল জেলার প্রাচীন কারখানায় আজও শোনা যায় তাঁতের ছন্দ। শত শত তাঁতি পরিবার দীর্ঘদিন ধরে এই শিল্পকে জীবনধারার অংশ হিসেবে ধরে রেখেছে। রঙিন সিল্ক ও কটন থ্রেড দিয়ে বোনা টাঙ্গাইল শাড়ি শুধু বাংলাদেশেরই নয়, সমগ্র ভারত উপমহাদেশে উৎসব–বিয়েবাড়ির পোশাক হিসেবে পরিচিত।
সম্প্রতি ইউনেসকোর ইনট্যানজিবল কালচারাল হেরিটেজ অব হিউম্যানিটি তালিকায় অন্তর্ভুক্তির জন্য এ বছর মনোনয়ন পেয়েছে ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল শাড়ি। এটি দেশের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
রোববার (৭ ডিসেম্বর) মার্কিন সংবাদ সংস্থা এপি’র এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
টাঙ্গাইলের বিভিন্ন তাঁতপাড়ায় প্রতিদিনই তাঁতের শব্দে এলাকা মুখরিত থাকে। কারিগররা সিল্ক ও কটনের রঙিন সুতা দিয়ে হাতে বুনে তৈরি করেন ‘টাঙ্গাইল শাড়ি’—যা জেলার নামেই পরিচিতি পেয়েছে। উৎসবসহ বিবাহ অনুষ্ঠানে দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে এই শাড়ির বিশেষ চাহিদা রয়েছে।
প্রতিটি শাড়িতে স্থানীয় সংস্কৃতির নান্দনিকতার ছাপ ফুটে ওঠে নকশা ও জটিল মোটিফের মাধ্যমে। পুরুষ কারিগররা সাধারণত সুতা রঙ করা, কাপড় বোনা এবং নকশার কাজ করেন, আর নারীরা তাঁতের চাকা ঘুরিয়ে সুতা তৈরি করতে সহায়তা করেন।
এ শাড়ি শুধু সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য নয়, টাঙ্গাইলের শত শত তাঁতি পরিবারের জীবিকার প্রধান উৎস। তবে কাঁচামালের দাম বৃদ্ধি ও সস্তা মেশিন বোনা শাড়ির প্রতিযোগিতায় নতুন প্রজন্মের অনেকেই আর এই পারিবারিক পেশায় আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।
তাঁতিদের আশা, ইউনেসকোর মনোনয়ন তাদের কারুশিল্পকে নতুন করে আন্তর্জাতিক মর্যাদা এনে দেবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য এই ঐতিহ্য রক্ষায় সহায়ক হবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই মনোনয়ন শুধুমাত্র শাড়ি বা তাঁতশিল্পের স্বীকৃতি নয়, বরং শত শত তাঁতি পরিবারের জীবিকা ও সামাজিক মর্যাদা সংরক্ষণের জন্যও গুরুত্বপূর্ণ।