Saturday 20 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

সিলেট ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা নিয়ে রেড ক্রিসেন্টের নির্বাচন প্রস্তুতি

ডিস্ট্রিক্ট করসপন্ডেন্ট
২৫ নভেম্বর ২০২৫ ২১:৪৩ | আপডেট: ২৫ নভেম্বর ২০২৫ ২৩:১৬

ছবি: সংগৃহীত

সিলেট: রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটে আগামী ২৯ নভেম্বর নির্বাচনকে ঘিরে নানা জল্পনা—কল্পনার মধ্য দিয়ে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৪৬৫৮ ভোটারের মধ্যে প্রায় ৩ হাজার ভোটার নির্বাচনের খবরই জানেন না। অর্থাৎ অধিকাংশ আজীবন সদস্য বা ভোটার এ ব্যাপারে কোনো চিঠি পাননি।

এছাড়াও যে ভোটার তালিকা রয়েছে সেখানে দেখা যায় অধিকাংশ ভোটারের এনআইডি কার্ড নাম্বার নেই, মোবাইল নাম্বার নেই, ঠিকানা নেই এবং পিতার নাম নেই। মৃত ব্যক্তির নামও ভোটার তালিকায় রয়েছে বলেও জানা গেছে।

এদিকে রেডক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের নির্বাচন পরিচালনা কমিটিতে একজন আজীবন সদস্য থাকার কথা থাকলেও তা রহস্যজনক কারণে কমিটিতে সেটা রাখা হয়নি। সাঈদা পারভিন, অমিত দত্ত ও বর্তমান উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জীবনকে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির সদস্য সচিব করে কমিটি গঠন করা হয় এবং যাকে সদস্য সচিব করা হয়েছে তিনি রেডক্রিসেন্ট বাংলাদেশ কেন্দ্রীয় কমিটির বঙ্গবন্ধু পরিষদের সহ-দফতর সম্পাদক।

বিজ্ঞাপন

এদিকে আওয়ামী সমর্থিত তিনবারের ট্রেজারী পদে থাকা মো. আমিনুল ইসলাম, প্রোগ্রাম অর্গানাইজার কমল পদপাল ও সৈয়দ ইমরুল হোসেনের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিয়োগ বাণিজ্য করেন বলে জানা গেছে এবং সৈয়দ ইমরুল হোসেনের স্ত্রী দিলরুবা জাহান ও উক্ত প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছেন বলে জানা গেছে। সৈয়দ ইমরুল হোসেন ও কমল পদপাল দীর্ঘ প্রায় ২০ বছর যাবৎ একই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত রয়েছে বলে অনেকের অভিযোগ।

এদিকে ভুক্তভোগীরা জানান, রেডক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের সিন্ডিকেট না ভাঙ্গলে রেডক্রিসেন্ট হাসপাতালের জন্য দূর্নাম বয়ে আসনে।

এছাড়াও সিলেট ইউনিটের এডহক কমিটির সেক্রেটারি থাকা অবস্থায় রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের সেক্রেটারি পদে নির্বাচন করার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। সেক্রেটারি পদপ্রার্থী মো. আমিনুল ইসলাম আওয়ামী দোসর বলে অনেকে জানান। তিনি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল ও সিলেট জেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খানের অত্যন্ত আস্থাভাজন হওয়ায় বিভিন্ন দূর্ণীতি ও বদলি বাণিজ্য চালিয়ে যান বলে জানা গেছে। এছাড়া তিনি টেজারার থাকা অবস্থায় ১২ জনকে অবৈধ নিয়োগ বাণিজ্য করে নিয়োগ দিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তবে নিয়োগ বাণিজ্য সম্পর্কে রেড ক্রিসেন্ট হাসপাতালের পরিচালক জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না এবং সবকিছুর দায়িত্ব রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের উপ-পরিচালকের কাছে। এদিকে সিলেট ইউনিটের উপ-পরিচালক মিজানুর রহমান জীবন জানান, ‘নিয়োগের বিষয়টি আমার দায়িত্বে নেই, এটা হাসপাতাল পরিচালকের দায়িত্ব। তবে পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে জানান। তবে তিনি পত্রিকার নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখাতে পারেননি।

এছাড়াও ভোটার তালিকা ত্রুটি সম্পর্কে সিলেট ইউনিটের পরিচালক জানান, কিছু ত্রুটি রয়েছে, অনেক পুরাতন সদস্যের তথ্য আমরা সঠিক পাইনি। এমতাবস্থার প্রেক্ষিতে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব এম এ মালেক খানের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি প্রতিবেদককে জানান, ১৯৮৮ সাল থেকে তিনি রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের আজীবন সদস্য। তিনি দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, ‘নির্বাচনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে কিন্তু আমি এ ব্যাপারে কিছুই জানি না। অথচ তিনি একজন প্রবীণ আজীবন সদস্য।’

তবে এ ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করেন। রেড ক্রিসেন্ট ইউনিটের উপ-পরিচালক জানান, যারা আজীবন সদস্য রয়েছে তাদের সচেতন হওয়া উচিত। এদিকে সুষ্ঠু নির্বাচন পরিচালনা নিয়ে অনেকেই দ্বিমত পোষন করেছেন।

তবে এ ব্যাপারে রেডক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের আজীবন সদস্য জালাল উদ্দীন শামীম, কামরুজ্জামান দিপু, আলাউদ্দিন, মজনুজ্জামান জানান, বর্তমানে ত্রুটিপূর্ণ ভোটার তালিকা দিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয় এবং আওয়ামী লীগ শাষিত দূর্ণীতিবাজদের সঙ্গে নিয়ে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। তারা আরও জানান আজীবন সদস্যকে সঙ্গে নিয়ে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট নির্বাচন পরিচালনা কমিটি গঠন ও সুষ্ঠু ভোটার তালিকা তৈরি করে নির্বাচন দেওয়া, অপর এক সদস্য আনিছুজ্জামান জানান, ভোটার লিস্টে একই মোবাইল নাম্বার দিয়ে ১১ জনের নাম রয়েছে, পিতার নাম ছাড়া অনেকের নাম রয়েছে তালিকায়। এরকম ত্রুটিপূর্ণ ভোটার লিস্ট দিয়ে নির্বাচন হতে পারেনা।

গত অক্টোবরের সভায় ৪৬৫৮ জন ভোটারের মধ্যে মাত্র ৩০ জন ভোটার উপস্থিত ছিলেন এবং এডহক কমিটির চেয়ারম্যান অনুপস্থিত ছিলেন। কিন্তু উপস্থিত ৩০ জনের মধ্যে অনেকেই ছিলেন নির্বাচনের বিরুদ্ধে। তারা অনেকেই চাননি যে, জাতীয় নির্বাচনের আগে রেড ক্রিসেন্ট সিলেট ইউনিটের নির্বাচন হোক।

তবে এ ব্যাপারে সিলেটের সচেতনমহল মনে করেন, ভোটারদের অধিকার ফিরিয়ে দিয়ে নির্বাচন করা উচিত। কারণ ভোটার লিস্টের ত্রুটির কারণে অনেক ভোটার ভোট দেওয়া থেকে বঞ্চিত হবে।