Sunday 07 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু, স্বজনদের মারধর, আহত ৫

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট:
৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৬:৪২ | আপডেট: ৮ নভেম্বর ২০২৫ ১৮:৩০

রংপুরের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হার্টে রিং পড়াতে গিয়ে রোগীর মৃত্যুতে স্বজনদের বিক্ষোভ – ছবি : সারাবাংলা

রংপুর: জেলার নগরীর ধাপ মেডিকেল পূর্বগেইটের কমিউনিটি মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে হার্টে রিং পড়াতে গিয়ে ভুল চিকিৎসায় রোগী মোকছেদুল ইসলাম (৫০)-এর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর প্রতিবাদ করতে গিয়ে হাসপাতালের ভাড়াটে সন্ত্রাসীদের হামলায় রোগীর অন্তত ৫ জন স্বজন আহত হয়েছেন। এ ঘটনায় স্বজনরা নিরপেক্ষ তদন্ত ও দোষীদের শাস্তি দাবি করেছেন।

বৃহস্পতিবার (০৬ নভেম্বর) রাতের ঘটনা ধামাচাপা দিতে শুক্রবার (০৭ নভেম্বর) মধ্যরাত পর্যন্ত নাটক সাজানো হয়েছে বলে দাবি পরিবারের। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করলেও এখন পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।

হাসপাতাল ও ভূক্তভোগী পরিবার সূত্রে জানা গেছে, নীলফামারীর ডোমারের সাবেক ইউপি সদস্য মোকছেদুল বুধবার (০৫ নভেম্বর) রাতে বুকে ব্যথা নিয়ে ভর্তি হন। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে চিকিৎসক মো. আবু জাহিদ বসুনিয়া এনজিওগ্রাম করে রিং পরানোর পরামর্শ দেন।

বিজ্ঞাপন

স্বজনদের দাবি, পরিবারকে না জানিয়ে অপ্রাপ্তবয়স্ক ছেলেকে ভুল বুঝিয়ে সই নিয়ে তড়িঘড়ি অপারেশন করা হয়। অপারেশন চলাকালীন রোগী মারা যান। মৃতদেহ আইসিইউ-তে জীবিত দেখানোর চেষ্টা করলে স্বজনরা জোর করে প্রবেশ করে ফেসবুকে লাইভ করেন। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে হাসপাতালের লোকজন মোবাইল ছিনিয়ে স্বজনদের মারধর করে।

নিহতের ছেলে শাফিউল ইসলাম বলেন, “অপারেশন রুমে বাবার ‘আ আ’ গোঙ্গানির শব্দ শুনেছি। আইসিইউ-তে নড়াচড়া করেননি। ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করেছে।”

শ্যালক হুমায়ুন কবির বলেন, “লাইভ করতে গেলে পেটোয়া বাহিনী মারধর করে পাঞ্জাবি ছিঁড়ে ফেলে। পরিচালকের কাছে বন্ডের কথা জিজ্ঞাসা করলে উত্তর দিতে পারেন নি।”

হাসপাতাল পরিচালক মেরাজ মহসিন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, “রোগী নিজে ভর্তি হয়েছেন। আমরা শুধু ওটি-যন্ত্রপাতি দিয়েছি। স্বজনরা জোর করে লাইভ করে উত্তেজনা ছড়িয়েছেন।”

এদিকে এসব ঘটনা জানাজানি হলে সেদিন (বৃহস্পতিবার) রাতেই এলাকাবাসী হাসপাতাল ঘেরাও করে। ভুক্তভোগী পরিবারের অভিযোগ, তাদের থেকে একটি দালাল চক্র দেড় লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এদিকে রাত ৩টায় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সংবাদ সম্মেলন করে, যা মানুষের মধ্যে আরও ক্ষোভ বাড়ায়।

হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা: আসমাউল রিজাল সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি করেন, ‘৬ নভেম্বর বিকেল থেকে রোগীর পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু হয়, যেহেতু রেডিওগ্রাম পরীক্ষা-নিরীক্ষা ব্যায়বহুল ও জটিল। পরীক্ষা চলমান অবস্থায় তার কার্ডিয়াক অ্যাটাক হয়। এ অবস্থায় তাকে ওইদিন ৪টা ৪৫ মিনিটে আইসিইউতে নেয়া হয় এবং নিয়মানুয়ায়ী তার ছেলের কাছে সম্মতি স্বাক্ষর নেয়া হয়। এই ক্যাথল্যাবে অনেক সফলতা আছে কিন্তু এই রোগীর ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম হয়েছে। এটা মেডিক্যাল হ্যাজার্ড। চিকিৎসায় কোনো অবহেলা করা হয়নি।’

তিনি আরো জানান, ‘রোগীর মৃত্যুর পর আইসিইউতে রোগীদের জানানো হলে তাদের আচরণ পরিবর্তন হয়। তাৎক্ষণিকভাবে কেউ একজন সেখান থেকে লাইভে চলে যান এবং অভিযোগ আনেন এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষ কোনো তথ্য দিচ্ছেন না। এ নিয়ে সেখানে একটা অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির তৈরি হয়। আমরা বারবার স্বজনদের বোঝানোর চেষ্টা করি। আইসিইউতে যেহেতু অনেক ক্রিটিক্যাল প্যাসেন্ট থাকে সেকারণে আমরা তাদেরকে বারবার বলি করিডোরে গিয়ে আমরা সব প্রশ্নের উত্তর দিতে চাই। কিন্তু আমরা তাদের সহযোগিতা দিতে চাইলেও তারা কোনো সহযোগিতা করেননি।’

এ বিষয়ে হাসপাতালের অতিরিক্ত পরিচালক মিরাজুল মহসিন বলেন, ‘মব তৈরি করে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করা হয়েছে। সমস্ত ডকুমেন্ট আছে হাসপাতালে। এ বিষয়ে অভ্যন্তরীণ কমিটি গঠন করা হয়েছে।’

রংপুরের সিভিল সার্জন ডা: শাহীন সুলতানা বলেন, ‘বিষয়টি আমাদের নজরে এসেছে। এ বিষয়ে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর