পাবনা: এক সময় গ্রামের মেয়েদের হাতে থাকত সুঁই-সুতা বা হাঁস-মুরগির যত্ন। কিন্তু এখন সেই একই হাতে বুনন হয়—চুলের। পাবনার চাটমোহর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের দুই নারী—তাজনাহা হাসি ও খুশি—নিজেদের ভাগ্য বদলে দিয়েছেন ‘পরচুলা’ তৈরি করে। তাদের উদ্যোগ আজ হয়ে উঠেছে শত শত নারীর স্বাবলম্বী হওয়ার গল্প।
২০১০ সালে ছোট্ট একটি ঘরে হাতে গোনা কয়েকজন নারী নিয়ে শুরু করেছিলেন হাসি। স্থানীয়ভাবে সংগৃহীত চুল ও বিদেশ থেকে আমদানি করা কাঁচামাল দিয়ে গড়ে ওঠে তাদের পরচুলা তৈরির ছোট কারখানা। আজ সেই কারখানায় কর্মরত নারীর সংখ্যা প্রায় ৩০০।

‘পরচুলা’ বুনছেন নারীরা। ছবি: সারাবাংলা
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতিদিন সকালে গ্রামের বিভিন্ন দিক থেকে নারীরা আসে হাসির কারখানায়। কেউ চুলের গোছা আলাদা করছে, কেউ গরম আয়রনে সোজা করছে, কেউ আবার নিপুণ হাতে গেঁথে দিচ্ছে নতুন চুলের স্তর। একটি পরচুলা তৈরিতে লাগে কয়েক ঘণ্টা, কিন্তু প্রতিটি কাজেই লুকিয়ে থাকে নিখুঁত কারিগরির ছোঁয়া।
সফলতার গল্প শুনাতে গিয়ে হাসি বলেন, তার কারখানায় কাজ করে অনেক নারী প্রতিমাসে ৫ থেকে ৭ হাজার টাকা আয় করেন। অনেকে এই আয়ে সন্তানের লেখাপড়া, সংসারের খরচ বা স্বপ্নের ঘর বানানোর কাজে ব্যয় করছেন।
নারী কর্মী ছামিনা খাতুন জানান, ‘আগে কেউ ভাবত না, চুল দিয়ে সংসার চলতে পারে। এখন নিজের হাতে রোজগার করি, সন্তানকে স্কুলে পাঠাই—এটাই সবচেয়ে বড় সুখ।’

‘পরচুলা’ বুননে ব্যস্ত কারিগররা। ছবি: সারাবাংলা
তাছাড়া এই কারখানায় কাজ করছেন গৃহিণী, শিক্ষার্থী ও বিধবারা—যাদের অধিকাংশের আগে কোনো আয়ের উৎস ছিল না। এখন তারা নিজের পায়ে দাঁড়িয়েছেন, সমাজে মর্যাদা পেয়েছেন।
হেয়ার ফ্যাশানের পরিচালক রুহুল আমিন বলেন, ‘পরচুলার কাঁচামাল আমদানি হয় চীন ও কোরিয়া থেকে। বাংলাদেশি নারীদের হাতে তৈরি এসব পরচুলা দেশের চাহিদা মিটিয়ে এখন মধ্যপ্রাচ্যসহ বিদেশে রফতানি হচ্ছে। এতে শুধু নারীর কর্মসংস্থানই নয়, দেশের বৈদেশিক মুদ্রা আয়ের ক্ষেত্রেও যোগ হচ্ছে নতুন সম্ভাবনা।’
পাবনা বিসিক উপমহাব্যবস্থাপক শামীম হোসেন বলেন, ‘ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের স্বাবলম্বী করতে আমরা ঋণ ও কারিগরি সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। দেশের ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প মাধ্যমে প্রান্তিক জনপদের ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা গড়ে উঠছে। তাদের উৎপাদিত পন্য বিশ্ব বাজারে বিক্রয় করে বৈদেশিক মুদ্রা সচল হচ্ছে।’