কুমিল্লা: শীতের হিমেল হাওয়া বইতে না-বইতেই কুমিল্লার গ্রামাঞ্চলে নেমে এসেছে সবুজের উৎসব। জেলার বরুড়া, বুড়িচং, ব্রাহ্মণপাড়া ও আদর্শ সদর উপজেলার মাঠঘাট এখন সবজির সবুজ পাতায় ঢেকে গেছে। কোথাও ফুলকপি-বাঁধাকপির সুশোভিত সারি, কোথাও আবার টমেটো, শিম, বেগুন, লালশাক, মুলা আর ধনেপাতার ঘন চাষে চোখ জুড়িয়ে যায়। দূর থেকে তাকালে মনে হয়—মাটির বুক জুড়ে যেন এক রঙিন চাদর বিছানো।
স্থানীয় কৃষকরা জানাচ্ছেন, এ বছর আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এবং বাজারে সবজির ভালো দাম থাকায় তারা আগের বছরের তুলনায় বেশি জমিতে শাকসবজি চাষ করেছেন। সেচ, সার ও কীটনাশকের সহজলভ্যতা এবং সরকারি কৃষি অফিসের নিয়মিত পরামর্শে ফলন নিয়েও আশাবাদী তারা।

শীতকালীন সবজি চাষে ব্যস্ত কুমিল্লার কৃষক। ছবি: সারাবাংলা
বুড়িচং উপজেলার মোকাম ইউনিয়নের শিকারপুর গ্রামের কৃষক জসিম উদ্দিন বলেন, “গত বছর এক বিঘা জমিতে টমেটো চাষ করে ভালো লাভ পেয়েছিলাম। এবার তিন বিঘা জমিতে টমেটো ও ফুলকপি লাগিয়েছি। আবহাওয়া ভালো থাকলে আগের চেয়েও বেশি লাভ হবে ইনশাআল্লাহ।”
আদর্শ সদর উপজেলার শীমড়া গ্রামের কৃষক আলী আকবর বলেন, “গতবছর শুধু মুলা চাষ করেছিলাম, লাভও ভালো পেয়েছি। এবার মুলার পাশাপাশি লালশাক ও ধনেপাতার চাষ করেছি। আশা করছি এবার গতবছরের চেয়েও ভালো দাম পাব”।
কুমিল্লা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. মিজানুর রহমানের বরাত দিয়ে অতিরিক্ত উপপরিচালক শেখ আজিজুর রহমান জানান, “এ বছর জেলায় প্রায় ১২ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে বিভিন্ন শীতকালীন সবজি চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এর মধ্যে এখন পর্যন্ত চাষ হয়েছে ২ হাজার ৭৩৭ হেক্টর জমিতে। ফুলকপি, বাঁধাকপি, টমেটো, শিম, বেগুন ও ধনেপাতা সবচেয়ে বেশি এলাকা জুড়ে চাষ হচ্ছে।”
তিনি আরও বলেন, “মোট উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৩ লাখ ৭ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। প্রাকৃতিক দুর্যোগ না ঘটলে এ লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করা সম্ভব হবে বলে আমরা আশা করছি।’’
সবজি চাষ শুধু অর্থনৈতিক দিকেই নয়, সামাজিক দিক থেকেও বদলে দিচ্ছে কুমিল্লার গ্রামীণ চিত্র। অনেক বেকার যুবক এখন সবজি চাষে যুক্ত হয়ে স্বাবলম্বী হচ্ছেন। নারীরাও ঘরে বসে বীজ সংরক্ষণ, চারা তৈরি ও বাজারজাতকরণে সক্রিয় ভূমিকা রাখছেন। ফসল কাটার মৌসুমে স্থানীয় শ্রমিকদেরও কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হচ্ছে।
কৃষি কর্মকর্তারা বলছেন, কুমিল্লার সবজি ইতোমধ্যে ঢাকার বাজারে ব্যাপক চাহিদা পেয়েছে। ভবিষ্যতে সঠিক অবকাঠামো ও কোল্ড স্টোরেজ সুবিধা গড়ে তুলতে পারলে বিদেশে রফতানির সুযোগ তৈরি হবে।