Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বাণিজ্য যুদ্ধে জয়ী কে?


২৩ আগস্ট ২০১৯ ১৮:০৮

খুব সাধারণভাবে বাণিজ্যযুদ্ধ বলতে বোঝায়, একটি দেশ যখন অন্য দেশের পণ্যের ওপর শুল্ক বা কোটাসীমা আরোপের মাধ্যমে ব্যবসায়িক ক্ষতির চেষ্টা করে। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, বাণিজ্য যুদ্ধে মূলত জয় হয় কার? এক কথায় বলতে গেলে, এই যুদ্ধে কেউ জেতে না। কিন্তু ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ ক্রেতা। পূর্বে ঘটে যাওয়া বাণিজ্যিক যুদ্ধগুলোর মাধ্যমে সেটাই প্রমাণিত হয়েছে। তবে যারা বাণিজ্য যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে না, তারা এর মাধ্যমে লাভবান হয়। ধরুন, দুইটি দেশ ‘ক’ এবং ‘খ’ এর মধ্যে বাণিজ্যযুদ্ধ সংঘটিত হল। ‘ক’ দেশ ‘খ’ এর পণ্যের ওপর এবং ‘খ’ দেশ ‘ক’ এর পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করল। এর ফলে ‘খ’ এবং ‘ক’ দেশের রফতানি আয় কমে গেল। ’খ’ তার পণ্য নতুন বাজার ‘গ’ দেশে কিছুটা কম দামে রফতানি শুরু করল। এক্ষেত্রে নতুন বাজারে প্রবেশের জন্য পণ্যের দাম কম রাখাটাই বাঞ্চনীয়। অর্থাৎ বাণিজ্য যুদ্ধে না থেকেই বরং দেশ ‘গ’ লাভবান হল। অস্ত্রের মাধ্যমে যুদ্ধ করে যেমন নিজের শক্তির জানান দেওয়া হয়, তেমনি একটি দেশকে আর্থিক সংকটে ফেলার জন্য বাণিজ্যযুদ্ধ হয়ে থাকে। তবে এই যুদ্ধ যে সবসময় একচেটিয়া হবে, বিষয়টি কিন্তু তা নয়। বৃহৎ বাজারের দুই বা ততধিক শক্তিশালী দেশের মধ্যেও বাণিজ্যযুদ্ধ হয়ে থাকে।

বিজ্ঞাপন

অনেকেই যুক্তি দেখিয়ে থাকেন, দেশীয় কোনো কোনো শিল্পে সহায়তার জন্য আমদানিকৃত পণ্যের ওপর ট্যারিফ আরোপ করা হয়ে থাকে। এই ট্যারিফ আরোপ যদি দেশের স্বার্থে করা হয়ে থাকে, তবে সেটাকে সাধুবাদ জানানো যায়। তবে কাউকে শায়েস্তা করার চিন্তা থেকে যদি কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তখন বিষয়টা দেশীয় শিল্পের সহায়তার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না। আরও একটি বিষয় হচ্ছে,  আমদানিকৃত পণ্যের ওপর উচ্চ ট্যারিফ বসালেই যে দেশীয় শিল্প বেঁচে যাবে, বিষয়টি কিন্তু এত সহজ না। পণ্যের মান, প্রযুক্তির উৎকর্ষতা, দাম, ভোক্তার চাহিদা পূরণে সক্ষমতা ইত্যাদি অনেক কিছুই জড়িত থাকে।

বিজ্ঞাপন

বর্তমানে শুল্ক নিয়ে চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে রেষারেষি দুই দেশের অর্থনীতির জন্যই ক্ষতিকর। কারণ অনেক পণ্যের ডিজাইন হয় যুক্তরাষ্ট্রে। আবার সেগুলো অ্যাসেম্বল হয় চীনে। যেমন: অ্যাপলের মত বৃহৎ কোম্পানি দুই দেশেই বিনিয়োগ করে থাকে। এটি যে শুধু মার্কিন ব্যবসাকে ক্ষতিগ্রস্ত করবে তা নয়, চীনের ভোক্তাদেরও ভোগাবে এ বাণিজ্যযুদ্ধ। এছাড়া যেসব দেশে অ্যাপলের পণ্য রফতানি হয়, সেসব দেশের ভোক্তাদেরও বেশি দাম দিয়ে পণ্য কিনতে হবে। ওয়ালমার্টের মত অনেক কোম্পানি চীন থেকে তাদের পণ্য আমদানি করে থাকে। ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারেও ওয়ালমার্টের পণ্যের দাম বেড়ে যাবে।

বৈশ্বিকভাবে প্রায় সবাই একমত যে, বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ ‘জেতে’ না। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে পণ্যের দাম বেড়ে যায় এবং মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি পায়। বাণিজ্য যুদ্ধে কেউ জয়ী না হলেও সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয় সাধারণ ক্রেতা, যারা সংখ্যায় অনেকগুণ এবং বাণিজ্য যুদ্ধের বিষয়ে সামান্যতম আগ্রহ যাদের নেই। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের এই বাণিজ্য যুদ্ধের পরিণতি কোন দিকে মোড় নেয়, সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা। তবে খুব তাড়াতাড়ি এই সমস্যার সমাধান হোক, এটাই সাধারণ মানুষের প্রত্যাশা। কারণ মূল ভুক্তভোগী তো তারাই।

লেখক: উপ-পরিচালক, বাংলাদেশ ব্যাংক

জয়ী বাণিজ্যযুদ্ধ

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর