Wednesday 17 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘যেখানেই নামেন ৫০!’


৬ জুন ২০১৯ ১৮:৫৮
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পল্লবী বাসস্ট্যান্ড। সময় সকাল ৮টা। ঈদের ছুটি উপলক্ষে রাজধানী বেশ ফাঁকা। অন্যান্য দিনের মতো রাস্তায় খেটে খাওয়া মানুষের আনাগোনা নেই বললেই চলে। এমনকি যানজটের শহরে যানবাহনের দেখা পাওয়াই মুশকিল। অফিসের উদ্দেশে বের হয়ে প্রায় ঘণ্টাখানেক অপেক্ষার পরও কাঙ্ক্ষিত বাহনের দেখা মিলছিল না। হঠাৎ করেই রবরব পরিবহনের একটি বাস এসে দাঁড়ালো বাসস্ট্যান্ডে। সেটি আমার গন্তব্যের বাস না হলেও একটু এগিয়ে যাওয়ার জন্য সেটাতেই উঠতে হলো। আপাতত আমার যাত্রা মহাখালীতে।

বাসে উঠতেই সুপারভাইজার আপ্যায়নের ভঙ্গিতে স্বাগত জানিয়ে বসতে দিলেন সিটে। এই আপ্যায়নের ভঙ্গি অন্যান্য সময় তাদের মধ্যে দেখাই যায় না। কিছুটা খটকা লাগা নিয়ে সিটে বসলাম। কিছুদূর যাওয়ার পরই ভাড়ার জন্য সুপারভাইজারের আগমন। কাছে আসতেই একটি একশ টাকার নোট বের করে দিলাম। গন্তব্যের ভাড়া জানাই ছিল, তবু জিজ্ঞাসা করলাম— মহাখালী পর্যন্ত ভাড়া কত? জবাব শুনে তো চক্ষু চড়কগাছ!

বিজ্ঞাপন

বলিষ্ঠ কণ্ঠে সুপারভাইজারের জবাব, ‘স্যার, ৫০ট্যাকা!’ ঝিমলাগা শরীর থেকে আলস্যভাব উধাও তখন। বললাম, ‘কবে থেকে ভাড়া ৫০ হলো?’ তার উত্তর, ‘স্যার জানেন না, কাইল থিক্যাই আমরা ৫০ ট্যাকা ভাড়া নিতাছি!’ বললাম, ‘কেন?’ উত্তর, ‘ঈদ বোনাস।’ ‘কিসের বোনাস?’— প্রতিবাদ করতে গিয়েও বয়স্ক এক ভদ্রলোকের অনুরোধে চেপে গিয়ে ৫০টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে এলাম।

শুধু আমি নই, বাসের প্রায় সব যাত্রীই তাই করলেন। তাদের দেখে মনে হলো— বিষয়টাকে তারা হালকাভাবেই নিয়েছেন। তবে সবার প্রতিক্রিয়া তো এক নয়। খেটে খাওয়া দিনমজুররা রীতিমতো ক্ষুব্ধ, তাদের চোখেমুখে অসহায়ত্ব, সিস্টেমের কাছে বন্দি। নিরুপায় হয়ে ৫০ টাকা ভাড়া দিতে হচ্ছে তাদেরও।

এবার আমার গন্তব্য পল্টনের দিকে। মহাখালীতে নেমে পল্টনমুখী বাসের জন্যও দাঁড়িয়ে থাকতে হলো প্রায় ৩০ মিনিট। পরে দেখি বলাকা পরিবহনের একটি বাস, তার দরজা আবার বন্ধ। বাস দাঁড়াতেই সুপারভাইজারের চিৎকার— ‘যেখানেই নামেন ৫০!’; ‘যেখানেই নামেন ৫০!’। সিস্টেমের কাছে যে মানুষ কতটা অসহায়, বোঝা গেল বাসের দরজা খোলার পর। ২০ টাকার জায়গায় ৫০ টাকা ভাড়া দিতে হবে জেনেও শতাধিক মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়লেন বলাকা পরিবহনের ওই বাসে উঠতে। তাদের বেশিরভাগই আমার মতোই অপেক্ষা করছেন আধা ঘণ্টা ধরে, কেউ কেউ তারও বেশি সময়!

মুহূর্তের মধ্যেই বলাকা পরিবহনের বাসটি ভরে গেল যাত্রীতে। ৪০ সিটের বাসে তখন প্রায় দ্বিগুণ যাত্রী। আমিও মানুষের স্রোতে চেপে কখন যে বাসে উঠে পড়েছি, বুঝতেই পারিনি। বৃষ্টির আমেজেও মানুষের শরীরের তাপেই বাসের ভেতর গরম বেড়েই চলেছে। ৫০ টাকা ভাড়া নিয়েও সুপারভাইজারের সঙ্গে থেকে থেকেই কথা কাটাকাটি। তবু শেষ পর্যন্ত পরিবহন তো মিলেছে যাওয়ার জন্য— এমন ভাবনা থেকেই সেই কথা কাটাকাটি মাত্রা ছাড়াচ্ছে না। গন্তব্যে পৌঁছানোর তাড়াতেও বোধহয় তেমন উচ্চবাচ্য না করে ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে নেমে যেতে থাকলেন একে একে। আমিও তাদের দলেই, চূড়ান্ত গন্তব্য পল্টনে পৌঁছাতে আরও একবার পরিবহন ‘ভাঙতে’ হলো, মালিবাগ মোড়ে নেমে গেলাম ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে।

মালিবাগ মোড় থেকে পল্টনের বাহন রিকশা। ততক্ষণে আকাশে কালো মেঘের ঘনঘটা। ফাঁকা রাজধানীতে যেন কোলাহল ছড়িয়ে দেবে মেঘেদের গর্জন।

এখান থেকে রিকশায় যেতে হবে পল্টন। নেমেই দেখি কালো মেঘ যেন শূন্যতা তাড়িয়ে রাজধানীতে কোলাহল নামাতে আসছে। দেরি করার সুযোগ নেই তাই। বেশ কয়েকজন রিকশাওয়ালার সঙ্গে জোরাজুরি করেও রাজি করাতে পারলাম না। শেষশেষ আরও এক ‘৫০-এর চক্করে’ ঠিক হলো রিকশা, মানে ভাড়া গুণতে হবে ৫০ টাকা। রিকশাওয়ালা বেশ বয়স্ক। জানতে চাইলাম ‘পর্দা আছে তো?’। মাথা নাড়ালেন, তাতে বুঝতে পারলাম না পর্দা আছে কি নেই। উঠে পড়লাম হুড তুলে।

ততক্ষণে বৃষ্টি হয়ে নামতে শুরু করেছে মেঘ। কিছুদূর এগোতেই বৃষ্টির দাপটে রিকশা ঠেকাতে বাধ্য হলাম। বললাম, ‘পর্দা বের করেন।’ আমাকে নামিয়ে সিট খুললেন, তারপর তাকালেন এমনভাবে, বুঝলাম পর্দা নেই। ততক্ষণে আমার কাকভেজা অবস্থা। রিকশাওয়ালা বয়স্ক লোকটি অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। ভাবছেন, এই বুঝি রেগে উঠব। কিছু বলতে পারলাম না, কীই বা বলব! মাঝপথেই ৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে আরেকটি রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। কিছুক্ষণের মধ্যে আরেকটি রিকশা পেলামও। মাঝপথ হলেও এবারও ৫০-এর গেঁরোতেই বাঁধা পড়তে হলো। এক এক করে চারটি ‘৫০’ পেরিয়ে শেষশেষ ঢুকতে হলো অফিসে।

এ তো গেল ৫০-এর কথা। ঈদের ছুটির মধ্যে আরও এমন কত ৫০-এর ছকে আটকে পড়তে হবে, ভাবছি সেটাই। তবে এই কয়দিন যে পরিবহন শ্রমিকদের দৌরাত্ম্য রাজধানীবাসীকে মুখ বুঁজে সহ্য করতে হবে, তা নিশ্চয় বলাই বাহুল্য!

সারাবাংলা/টিআর

বিজ্ঞাপন

সপ্তাহের শেষ দিকে বাড়তে পারে শীত
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:৩৬

দূষিত শহরের তালিকার পঞ্চম ঢাকা
১৭ ডিসেম্বর ২০২৫ ১০:১৯

আরো