‘মুক্তিযোদ্ধাদের পরাস্ত করার শক্তি হানাদার বাহিনীর ছিল না’
৮ ডিসেম্বর ২০১৭ ২১:২৬ | আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ১৫:৩২
আসাদ জামান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের যুদ্ধ ছিল ‘অসম’ যুদ্ধ। আধুনিক সমরাস্ত্রে সজ্জিত পাকিস্তানি ইউনিফর্মড সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা মুক্তিযোদ্ধারা লড়াই করেছেন বীরদর্পে। চীন ও আমেরিকার কাছ থেকে পাওয়া আধুনিক সমরাস্ত্র নিয়ে বেসামরিক মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েও খুব একটা সুবিধা করতে পারেনি প্রশিক্ষিত ও দক্ষ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী।
নিরস্ত্র বাঙালি নিধনে ভীরু কাপুরুষ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যতটা সাফল্য দেখিয়েছে— হাল্কা অস্ত্রে সজ্জিত ছেড়া লুঙ্গি-গেঞ্জি পরা মুক্তিযোদ্ধাদের সামনে ততটা সাফল্য দেখাতে পারেনি। প্রতিটা সম্মুখ যুদ্ধে হাজার হাজার সৈন্য নিয়েও কয়েক শ’ মুক্তিযোদ্ধাকে মোকাবিলা করতে পারেনি তারা। কিন্তু কেন?
বিজয়ের ৪৬তম বর্ষে এসে সেই কাহিনীই শুনিয়েছেন রণাঙ্গনের বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম। বনানীর বাসায় সারাবাংলাকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি এ বিষয়ে বলেন, ‘মুক্তিযোদ্ধরা রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন দেশকে মুক্ত করার জন্য; স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য। প্রয়োজনে জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলেন প্রতিটা মুক্তিযোদ্ধা। আর পাকিস্তান হানাদার বাহিনী যুদ্ধ করেছে বেতনের জন্য। তারা নৈতিকভাবে ছিল দুর্বল। ফলে মুক্তিযোদ্ধাদের পরাস্ত করার শক্তি হানাদার বাহিনীর ছিল না।’
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ ছিলেন পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট র্যাংকের একজন তরুণ সেনা কর্মকর্তা। যশোর ক্যান্টনমেন্ট থেকে বিদ্রোহ করে বেরিয়ে এসে যোগ দেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। দেশের জন্য যুদ্ধ করেন টানা ৯ মাস। ছিনিয়ে আনেন বিজয় পতাকা।
বর্ণাঢ্য কর্মজীবন শেষে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী থেকে অবসর নিয়ে রীতিমত রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ। সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন বেশ কয়েকবার। গণপ্রজান্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের মন্ত্রীও ছিলেন একাধিকবার। বর্তমানে তিনি বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান। এক সময় পাকিস্তান জাতীয় ফুটবল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যও ছিলেন তিনি।
যুদ্ধদিনের স্মৃতি থেকে তিনি বলেন, ‘ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটেলিয়ানকে নিয়ে ৩০ মার্চ যশোর ক্যান্টনমেন্টে বিদ্রোহ ঘোষণা করি। প্রতিটা ব্যাটেলিয়ানে সাত শ’ সৈন্য থাকে। কিন্তু আমি যখন বিদ্রোহ করি, তখন প্রথম ব্যাটেলিয়ানের সাড়ে তিন শ’ সৈন্য ছুটিতে ছিল। সে কারণে আমার সৈন্য সংখ্যা দাঁড়ায় সাড়ে তিন শ’-তে। এর মধ্যে অনেকে আশ-পাশে, অন্যান্য ইউনিটে, কোর্সে, ট্রেনিংয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল। ফলে বিদ্রোহ করার পর চৌগাছায় গিয়ে যখন একত্র হলাম, তখন আমার সৈন্য সংখ্যা ছিল দুই শ’র মতো। আর অফিসার ছিলাম আমি একা। অপর অফিসার লেফটেন্যান্ট আনোয়ার হোসেন যশোর ক্যান্টনমেন্টে ৮ ঘণ্টার যুদ্ধে শহীদ হন।’
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম বলেন, ‘যশোর ক্যান্টনমেন্টে একটা ব্রিগেড ছিল। একটা ব্রিগেডে কম বেশি ৪ হাজার সৈন্য থাকে। বিদ্রোহ করে বেরিয়ে আসার সময় প্রথম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের সাড়ে তিন শ’ সৈন্য ছাড়া ক্যান্টনমেন্টের সবাই ছিল পাকিস্তানি সৈন্য। অর্থাৎ সাড়ে ৩ হাজার সৈন্যের বিরুদ্ধে মাত্র সাড়ে তিন শ’ সৈন্য নিয়ে আমরা যুদ্ধ করেছি। অধিকন্তু তাদের কাছে কামান ছিল, মর্টার ছিল— যা আমাদের ছিল না। পদাতিক বাহিনীর যুদ্ধ করার জন্য প্রয়োজন গোলন্দাজ বাহিনীর সহায়তা। সেটিও আমাদের ছিল না। ’
‘‘১৯৭৩ সালে আমি ট্রেনিংয়ের জন্য ইংল্যান্ডে যাই। ব্রিটিশ আর্মির স্টাফ কলেজে একটি কোর্চে অংশগ্রহণ করি। আমার যুদ্ধের এক্সপেরিয়েন্স ছিল। তাই অনেকেই যুদ্ধের কথা শুনতে চাইত। আমি কামালপুর যুদ্ধের কথা তাদেরকে বলেছি, ‘শত্রু বাহিনী ছিল প্রোফেশনাল আর্মি। তারা মাটিতে বাঙ্কার করে উপরে সিমেন্টের কংক্রিট লাগিয়ে, সামনে মাইন পুঁতে, কাটা তারের বেড়া ইত্যাদি রক্ষণ ব্যূহ সাজিয়ে অপেক্ষা করে আছে আমাদের প্রতিহত করার জন্য। সেই ধরনের একটি রক্ষণ ব্যূহে আমরা হামলা করি ২ শ’ মুক্তিযোদ্ধা নিয়ে, যাদের অধিকাংশই কোনো দিন রাইফেল ছুঁয়ে দেখেনি। মাত্র এক মাসের ট্রেনিংয়ে তারা মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তিসেনায় পরিণত হয়।
‘‘সেই যুদ্ধে আমাদের কোনো গোলন্দাজ বাহিনীর সাপোর্ট ছিল না। যখন আমি তাদেরকে (ব্রিটিশ আর্মি) বললাম, ‘গোলন্দাজ বাহিনীর সাপোর্ট ছাড়া মাইন ফিল্ড পেড়িয়ে কংক্রিট বাঙ্কারের কিছু অংশ আমরা দখল করেছি’— শুনে তারা বিষ্ময়ে অভিভূত হয়েছে। তারা বলেছে, এই ধরনের অপারেশন কোনো প্রফেশনাল আর্মির পক্ষে সম্ভব না। একমাত্র মুক্তিযোদ্ধারা— যারা দেশের জন্য জীবন দিতে সদাপ্রস্তুত, তারাই পারেন এ ধরনের আক্রমণ পরিচালনা করতে। আমরা দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার প্রস্তুত ছিলাম। আমাদের যুদ্ধ জাতির জন্য যুদ্ধ, অপর পক্ষের সৈনিকরা বেতনের জন্য যুদ্ধ করছে। মৃত্যুঞ্জয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের পরাজিত করার মতো শক্তি পৃথিবীতে তৈরি হয়নি। এখানেই আমরা সফল হয়েছি।”
অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধার মতো মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রমও যুদ্ধের নয় মাস পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিছিন্ন ছিলেন। পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সাবেক সদস্য পিতা আজহার উদ্দিন আহম্মদও হানাদার বাহিনীর হাত থেকে বাঁচার জন্য পালিয়ে বেড়াচ্ছিলেন। ফলে কেউ কারো খোঁজ-খবর নিতে পারেননি।
মুক্তিযুদ্ধের সেই দুঃসহ স্মৃতি তুলে ধরে মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বলেন, ‘আমি পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন ছিলাম। আমার বাবা পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য ছিলেন। তিনি নিজেও পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। তিনি সীমান্ত অতিক্রম করেননি। কিন্তু ভোলার বিভিন্ন গ্রামে পালিয়ে বেড়ান। সুতরাং তার পক্ষে আমার খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি। আমার পক্ষেও তাদের খোঁজ নেওয়া সম্ভব হয়নি। সেই সময় ম্যানচেস্টারে অবস্থানরত আমার ভাই গোলাম মোস্তফার একটা চিঠি পেয়েছিলাম আমি। চিঠিটি লিখেছিলেন, পশ্চিম বঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ঠিকানায়। আমার নাম লিখে কেয়ার অফ চিফ মিনিস্টার, ইস্ট বেঙ্গল বরাবর পাঠিয়েছিলেন। সেই চিঠি আমার কাছে পৌঁছেছিল। তাকে আমি চিঠি লিখে জানিয়েছিলাম আমার অবস্থানের কথা। সেই প্রথম আমার পরিবার জানতে পারল আমি জীবিত আছি। ’
‘আরেকটা মজার ঘটনা আছে। আমার এক ব্যাচমেট ছিল ২৫ বেলুচ রেজিমেন্টের। তার নাম আফতাব। সে ছিল সিন্দি। সিন্দিরা বাংলাদেশকে ওন করত। বাংলাদেশের প্রতি সহানুভূতিশীল ছিল। সে যেহেতু আমার বন্ধু ছিল, সেহেতু যুদ্ধের মধ্যেই আমার পিতার সাথে দেখা করার জন্য আমার গ্রামের বাড়ি ভোলায় গিয়েছিল। গ্রামের লোক আর্মি দেখে সবাই পালিয়ে গেছে। আমার বৃদ্ধ চাচা বাড়িতে ছিলেন। ক্যাপ্টেন আফতাব গিয়ে চাচার সঙ্গে দেখা করে বলেছে, হাফিজ বেনাপোলে আছে, যুদ্ধ করছে। শেষ দিন পর্যন্ত সে আমার শুভানুধ্যায়ী ছিলেন। ক্যান্টনমেন্টেও আমার অনেক বন্ধু ছিল। কিন্তু তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হয়েছে। আমি পাকিস্তান জাতীয় দলের খেলোয়াড় হওয়ায় ক্যান্টনমেন্টের সবাই আমাকে চিনত।’
সেনা কর্মকর্তা ও তারকা ফুটবলার থেকে রাজনীতিবিদ হয়ে ওঠা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম রণাঙ্গনে বেশ কয়েকজন সহযোদ্ধাকে পেয়েছিলেন, যারা পরবর্তীকালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে আলোচিত ব্যক্তিতে পরিণত হয়েছিলেন।
তাদের কথা স্মরণ করে জাতির এই শ্রেষ্ঠ সন্তান বলেন, ‘১৯৭১ সালের ২৩ নভেম্বর ‘চারগ্রাম’ আক্রমণ করে শত্রুমুক্ত করি। যুদ্ধের এই অবস্থান থেকে জেড ফোর্সের কমান্ডার লেফটেনেন্ট কর্নেল জিয়াউর রহমানের (পরবর্তীকালে মেজর জিয়া, বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি) নেতৃত্বে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত যুদ্ধ করি। তার সঙ্গে আমার প্রথম যুদ্ধ ২৮ নভেম্বর সিলেটের গৌরিপুরে ইস্ট পাঞ্জাব রেজিমেন্টের বিরুদ্ধে। ওই যুদ্ধে পাকিস্তান বাহিনী ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। তাদের কমান্ডার মেজর সারোয়ার নিহত হন এবং তাদের ৩৬ জনকে আমরা জীবিত বন্দী করি। সেখানে কিছু সময় আমি এবং জিয়াউর রহমান একই বাঙ্কারে ছিলাম।’
“গৌরিপুরে যুদ্ধের পরে সিলেট এমসি কলেজের যুদ্ধেও তিনি আমাদের সাথে ছিলেন। ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানিরা যে সারেন্ডার করবে— এ খবরও জিয়াউর রহমানের কাছ থেকে পাই। ১৫ ডিসেম্বর বিকেলে সিলেট এমসি কলেজের প্রিন্সিপালের বাড়ি শত্রুমুক্ত করে ব্যাটেলিয়ান হেডকোয়াটারে গেলাম । সেখানে লেফটেন্যান্ট কর্নেল জিয়াউর রহমান, মেজর জিয়াউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন অলি আহমেদসহ আরও বেশ কয়েকজন বাঙালি সেনাকর্মকর্তা ছিলেন। জিয়াউর রহমান বললেন, ‘যুদ্ধ শেষ। কাল ওরা সারেন্ডার করবে।’ এটা ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে আনন্দের একটি মুহূর্ত। এ রকম আন্দন্দের সংবাদ জীবনে আর পাইনি। আমি ভেবেছিলাম, যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হবে এবং আমিও মৃত্যুবরণ করব। স্বাধীনতা দেখে যেতে পারব না। তো ১৫ ডিসেম্বর যখন শুনলাম, পাকিস্তান আর্মিরা সারেন্ডার করবে, তখন আমার মনে হয়েছে এর চেয়ে আনন্দের সংবাদ আর কিছু হতে পারে না— প্রথমত দেশ স্বাধীন হচ্ছে, দ্বিতীয়ত আমি বেঁচে থেকে সেটা দেখে যেতে পারছি।’
কাকতালীয়ভাবে হলেও মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক মহম্মদ আতাউল গণি ওসমানীসহ বেশ কয়েকজন সেক্টর কমান্ডার ১৬ ডিসেম্বর সিলেটে অবস্থান করছিলেন। ফলে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর আত্মসমার্পণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হতে পারেননি তাঁরা। কিন্তু কেন? এ বিষয়েও পরিষ্কার একটি ধারণা দেন মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম। তিনি বলেন, “১৬ ডিসেম্বর জেনারেল ওসমানীর সাথে দেখা হলো সিলেট সার্কিট হাউজে। বিকেল ৪টায় উনি সার্কিট হাউজে আসলেন। আমি উনাকে জিজ্ঞেস করলাম, ‘স্যার ঢাকায় সারেন্ডার হচ্ছে, আপনি এখানে?’ উনি বিষণ্নভাবে বললেন, ‘এখানে আসতে পেরেছি, এটাই তো ভাগ্য। আসার পথে আমার হেলিকপ্টারে পাকিস্তানিরা গুলি করেছে। আমার সঙ্গী কর্নেল রব আহত হয়েছেন। আমি প্রাণে বেঁচে গিয়েছি, এটাই সৌভাগ্য’ বলে আমাদের সাথে চা খেয়ে উনি চলে গেলেন।”
‘আগের দিন পাকিস্তান সেনাবাহিনী সিদ্ধান্ত নিয়েছে সারেন্ডার করবে। কিন্তু সৈন্যরা তো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে ছিল। সবার কাছে হয়তো এই মেসেজ পৌঁছানো সম্ভব হয়নি। দেশের বিভিন্ন জায়গায় শত্রুর অনেক পকেট রয়ে গেছে। এমনি এক পকেট থেকেই হয়তো জেনারেল ওসমানীর হেলিকপ্টারে গুলি করা হয়েছে। যারা গুলি করেছে, তাদের কাছে হয়তো সারেন্ডারের খবর ততক্ষণে পৌঁছেনি।
মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম বলেন, ‘পাকিস্তানিরা পর্যদুস্ত হয়ে গেছে ডিসেম্বরের আগেই । নিজের এলাকা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে একটা শত্রু কবলিত এলাকায় তারা যুদ্ধ করছে, সাধারণ মানুষ তাদের শত্রু; সুতরাং মানসিকভাবেই তারা পর্যদুস্ত। এই যুদ্ধে তাদের পরাজয় অবসম্ভবী ছিল। সারা পৃথিবীতে স্বাধীনতা যুদ্ধে দখলদার বাহিনী পরাজিত হয়েছে। তারাও পরাজিত হবে— এটা তারা জানত।’
মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশের পরমবন্ধু ভারত কেন আরও আগে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শুরু করল না? এ নিয়ে ইতিহাসে অনেক রকম ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ রয়েছে। তবে উপমহাদেশে অসংখ্য যুদ্ধের সাক্ষী খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধা মেজর (অব.) হাফিজ উদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রমের বিশ্লেষণটা একটু আলাদা— “ভারতীয় বাহিনী মুভ করেছে ২২ নভেম্বর থেকে। সব সেক্টরে মিত্রবাহিনী যৌথ আক্রমণ শুরু করে এদিন থেকেই। আর যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয় ৩রা ডিসেম্বর। আমাদের একটা কথা মনে রাখতে হবে, ভারত যুদ্ধ করে চীনকে সামনে রেখে। পাকিস্তানকে তারা গোনায় ধরে না। এপ্রিল মাসেই ভারতের প্রধানমন্ত্রী আক্রমণের কথা বলেছিলেন। কিন্তু ভারতের সেনাপ্রধান ফিল্ড মার্শাল শ্যাম মানেকশ বললেন, ‘এখন যুদ্ধ করলে আমরা হেরে যাব। হিমালয়ের গিরিপথ থেকে তখন বরফ সরে গেছে। এ সময় আক্রমণ করলে চীনের পদাতিক বাহিনী সহজেই বাংলাদেশে ঢুকে পড়বে। তখন যুদ্ধে জেতা মিত্রবাহিনীর জন্য কঠিন হয়ে যাবে।’ ভারত অপেক্ষা করছিল গিরিপথ যেন বরফে ঢেকে যায়। সেই জন্যই তারা ডিসেম্বর মাস বেছে নিয়েছিল।”
সারাবাংলা/এজেড/আইজেকে