Saturday 28 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

লালমনিরহাট বিমানবন্দর: প্রত্যাশা ও সম্ভাবনার এক নতুন অধ্যায়

প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৭:১০

দেশের দরিদ্রতম ১০ জেলার ৫টি রংপুর বিভাগে অবস্থিত। বাকি তিনটি জেলাও দারিদ্র সূচকের তলানিতে। নারায়ণগঞ্জের সাথে কুড়িগ্রামের দারিদ্রতার হারের পার্থক্য প্রায় ২৮ গুণ। শিক্ষা, স্বাস্থ্য, শিল্প, অবকাঠামো উন্নয়ন, বিদেশে কর্মী প্রেরণ, নদী ভাঙনরোধ, বহুমুখী দারিদ্র নিরসন এবং অন্যান্য খাতে পিছিয়ে আছে রংপুর বিভাগ। রংপুর একমাত্র বিভাগ, যেখানে কোনো অনুমোদিত অর্থনৈতিক অঞ্চলও চালু হয়নি। বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষ (সংক্ষেপে বেজা)-এর হিসাব মতে এপ্রিল ২০২২ পর্যন্ত সরকারি ৫৪টি, বেসরকারি ২৩টি এবং চীন, জাপান ও ভারতের জন্য চারটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের অনুমোদন রয়েছে। কিন্তু দু:খের বিষয় রংপুর অঞ্চলে জানামতে সরকারি বা বেসরকারি কোন অর্থনৈতিক অঞ্চল নেই। ফলে এ অঞ্চলে বেকারত্বের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। দেশের প্রতিটি জেলা থেকে গড়ে ১ লাখ ৩৬ হাজার কর্মী বিদেশে গমন করছে অথচ রংপুরের ৮টি জেলার প্রতিটি জেলা থেকে গমনকৃত প্রবাসী/অভিবাসীর সংখ্যা গড়ে মাত্র ১৯ হাজার ১৯৭ জন। মূলত দীর্ঘদিনের যোগাযোগ ও উন্নয়ন বঞ্চিত রংপুরবাসী দেশের অন্যান্য এলাকার সাথে সমানতালে এগোতে পারছে না।

বিজ্ঞাপন

কোনো দেশের বা অঞ্চলের অর্থনৈতিক উন্নয়নে যোগাযোগ ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যোগাযোগ রক্ষায় সড়ক, রেল ও নৌ পথ যেমন গুরুত্বপূর্ণ তেমনি আকাশ পথও কম গুরুত্বপূর্ণ ভাবার কোনো সুযোগ নেই। কোনো একটি অঞ্চলের উন্নয়ন ও সম্ভাবনা যোগাযোগ ব্যবস্থার সাথে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। বিভিন্ন মালামাল পরিবহণ বা প্রেরণে সড়ক, রেল ও নৌ-পথের অগ্রাধিকার সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু সভ্যতার চাবিকাঠি ও চালিকা শক্তি মানুষকে জরুরী ও গুরুত্বপূর্ণ কাজে বিমানকেই কার্যকরী স্বীকৃত বাহন হিসেবে ব্যবহার করতে হয়। বিশেষ করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিবর্গ, বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, গবেষক এমনকি সাধারণ মানুষকেও এক দেশ থেকে অন্য দেশে এমনকি দেশের অভ্যন্তরেও সময় ও সম্পদ বাঁচাতে বিমান ছাড়া যোগাযোগের বিকল্প কিছু থাকে না।

বিজ্ঞাপন

সে লক্ষ্যে আকাশ পথে বিমানের মাধ্যমে বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে যোগাযোগ রক্ষায় ১৯৭২ সালের ৪ জানুয়ারি বিমান বাংলাদেশ এয়ার লাইন্স প্রতিষ্ঠিত হয়। বিশ্বের প্রায় ৭০টি দেশের সাথে বিমানের বিমান সেবা চুক্তি রয়েছে এবং বর্তমানে ১৬টি দেশে এর কার্যক্রম চালু রয়েছে। বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বিমান বন্দর ৩টি এবং অভ্যন্তরীণ বিমান বন্দর রয়েছে ৬টি। রংপুর বিভাগের আটটি জেলার জন্য রয়েছে একটি মাত্র বিমান বন্দর সৈয়দপুর বিমান বন্দর। শুরুতে সৈয়দপুর বিমান বন্দরে সপ্তাহে এক দিনে মাত্র ১টি ফ্লাইট চালু ছিল। যাত্রী সংকটের কারণে ২০১৩-১৪ সালে সৈয়দপুরে সপ্তাহে তিনটি ফ্লাইট পরিচালনা করাও কঠিন ছিল। কিন্তু এ রুটে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইট এখন প্রতিদিন ১৫ থেকে ২১টি (রাউন্ড ট্রিপ বা ফিরতি যাত্রা ধরলে ৩০টি) ফ্লাইট চালাচ্ছে। তারপরও টিকিট পাওয়া যায় না। বর্তমানে এ বিমানবন্দর থেকে সকাল, দুপুর ও বিকেল মিলিয়ে প্রতিদিন সহস্রাধিক যাত্রী ঢাকা-সৈয়দপুর-ঢাকা রুটে যাতায়াত করছে যা যাত্রী সংখ্যার চাহিদার তুলনায় নিতান্তই অপ্রতুল। অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহণে হিমশিম খাচ্ছে এ বিমানবন্দর। ফলে অতীব জরুরী প্রয়োজন দেখা দিয়েছে লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালুর বাস্তবতা। এই বিমানবন্দর চালু হলে রংপুর বিভাগের রংপুরসহ আরো তিনটি জেলা লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা’র উন্নয়নে নতুন মাইলফলক রচিত হবে। ব্যাপক গতি আসবে পর্যটনশিল্পসহ অন্যান্য ব্যবসা-বাণিজ্যে। গড়ে উঠবে কল-কারখানাসহ ছোটবড় শিল্প প্রতিষ্ঠান ও অর্থনৈতিক জোন।

রংপুর বিভাগের পাঁচটি জেলা যেমন-রংপুর এবং গাইবান্ধা জেলার অধিকাংশ, নীলফামারি জেলার কিয়দংশ এবং কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার সমগ্র অঞ্চলের বাসিন্দারা এবং এ জেলাগুলোতে কর্মরত সরকারি/বেসরকারি কর্মচারি-কর্মকর্তাগণ পুরোপুরিভাবে সৈয়দপুর বিমান বন্দরকে সন্তোষজনক ভাবে ব্যবহার করতে পারছেনা। সৈয়দপুর বিমান বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে অর্থ ও সময় দুটোরই অধিক অপচয় হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ কুড়িগ্রাম থেকে একজন যাত্রী যদি সৈয়দপুর বিমান বন্দর থেকে ঢাকা যেতে চায় তাহলে তাকে সড়কপথে ০৩ ঘন্টা ব্যয় করে সৈয়দপুরে পৌছাতে হবে। সেক্ষেত্রে তাকে কার বা মাইক্রোভাড়া কমপক্ষে পাঁচ হাজার টাকা হিসেবে ব্যয় করতে হবে। অথচ প্লেন ভাড়া তিনহাজার ছয়শত টাকা থেকে আরো কম বা কিছূটা বেশি। আবার সৈয়দপুর থেকে ঢাকা যেতে সময় লাগে মাত্র ৪৫ মিনিট। অর্থাৎ একজন যাত্রীকে মূল গন্তব্যস্থল ঢাকার চেয়ে সড়ক পথেই বেশি সময় ও অতিরিক্ত টাকা গুনতে হচ্ছে। পক্ষান্তরে লালমনিরহাট বিমানবন্দর চালু হলে কুড়িগ্রাম থেকে সময় লাগবে মাত্র ৩০ মিনিট এবং খরচ পড়বে সর্বোচ্চ ২০০ টাকা মাত্র। অন্য জেলাগুলো থেকেও আসতে আরো কম সময় এবং স্বল্প ব্যয়ে আসা যাবে। এ সকল কারণে উল্লেখিত জেলাগুলোতে জরুরী প্রয়োজনে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ আসতে পারেন না এবং দেশী/বিদেশী উদ্যোক্তরা এ সব অঞলে ব্যবসায় বিনিয়োগ কিংবা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়তে আগ্রহী হচ্ছেন না। ফলে অবহেলিত থাকছে কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার বাসিন্দারা। অথচ লালমনিরহাট বিমান বন্দরের রয়েছে ঐতিহাসিক স্বর্ণোজ্জ্বল ভূমিকা এবং বর্তমানে এর গুরুত্ব শতভাগে সহস্রভাগ প্রত্যাশিত। সংশ্লিষ্ট সকলে মনে করেন এ বিমান বন্দরটি চালু করা হলে একদিকে যেমন যাত্রী সেবা বাড়বে অন্যদিকে এ বিমান বন্দরের মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগের ক্ষেত্রে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হবে।

তৎকালীন ব্রিটিশ সরকার ১৯৩১ সালে লালমনিরহাট বিমান বন্দর নির্মাণ করে । লালমনিরহাট সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ও হারাটি এলাকায় ১ হাজার ১৬৬ একর জমির ওপর নির্মিত একটি বিমান বন্দর। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে এ বিমান ঘাঁটিই ছিল মিত্র বাহিনীর একমাত্র ভরসাস্থল। ১৯৪৫ সালে যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর এটি অব্যবহৃত ছিল দীর্ঘ দিন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর পরিত্যক্ত হয়ে পড়ে এটি। এরপর ১৯৫৮ সালে স্বল্প পরিসরে বিমান সার্ভিস চালু হলেও তা বেশি দিন স্থায়ী হয়নি। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে এটিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর হেডকোয়ার্টার করার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর বাস্তবায়িত হয়নি। এ কারণে ৪ কিলোমিটার রানওয়ে, বিশাল টারমাক, হ্যাংগার, ট্যাক্সিওয়ে এগুলো সবই এখন পত্যিক্ত। দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৮৩ সাল থেকে এখানে কৃষি প্রকল্প গড়ে তুলে বিমানবাহিনী কর্তৃপক্ষ। আশির দশকে ফের চালু করা হলেও বন্ধ হয়ে যায় বিমানবন্দরটি। ২০১৯ সালের ১৩ মার্চ বিমান বাহিনীর প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত লালমনিরহাট বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসেন। এরপর বিমান বাহিনীর প্রকৌশলীদের সঙ্গে নিয়ে পুরো বিমানবন্দর ঘুরে দেখেন এবং এর সম্ভব্যতা যাচাই করেন। এরপর সেনাবাহিনী, বিমান বাহিনী ও সিভিল প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নিয়ে বিমানবন্দরে সভা করেন তিনি।

বর্তমানে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের পাশেই অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়টির শিক্ষা কার্যক্রম চালু রয়েছে। বিমান চালনা, নির্মাণ ও মেরামত এবং মহাকাশ প্রযুক্তিতে বিশ্বমানের শিক্ষা প্রদানের লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠিত বিশেষায়িত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ‘অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়’।

এখন বাংলাদেশেই তৈরী হবে দক্ষ বৈমানিক, এয়ারক্রাফট ইঞ্জিনিয়ার, এয়ার ট্রাফিক এন্ড গ্রাউন্ড মেইনটেন্যান্স অফিসার, শুধু তাই নয় বিশ্বমানের বিমান তৈরী আর মহাকাশ গবেষণার মাধ্যমে বাংলাদেশের পতাকা পৌঁছে যাবে গ্রহ-উপগ্রহে। বিমানবন্দরটি চালু হলে উত্তরাঞ্চলের মানুষ শিক্ষা, ব্যবসা ও চিকিৎসার জন্য যেমন দ্রুত ভারত, নেপাল ও ভুটান যেতে পারবে তেমনিভাবে ওই তিন দেশের হাজারো শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ী বাংলাদেশে এসে তাদের কাজ সম্পাদন করতে পারবে। বিদেশী পর্যটকগণের নতুন পর্যটন স্থল হয়ে গড়ে উঠবে নদ-নদী বিধৌত দেশের অবহেলিত উত্তরাঞ্চল।

কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথমবারের মতো ভর্তি কার্যক্রম শেষ হয়েছে। আগামী বছরের পহেলা জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হবে বলে আশা করা হচ্ছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মতো অধিকাংশ শিক্ষার্থী রংপুর বিভাগের বাইরে থেকে এসেছে। কুড়িগ্রাম জেলার কাছাকাছি এরকম বিমান বন্দর সুবিধা পেলে শিক্ষার্থীদের দ্রুতসময়ে যাতায়াতের সুবিধা হবে। এ অঞ্চলের অর্থনীতির প্রাণশক্তি কৃষি আর এ কৃষিকে বিভিন্ন মুখী গবেষণার মাধ্যমে আরো উন্নত ও আধুনিক পর্যায়ে নিয়ে যেতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। দেশি-বিদেশী অনেক গবেষকের আগমন ঘটবে কুড়িগ্রাম কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেক্ষেত্রে লালমানিরহাট বিমান বন্দরের নানামুখী সুযোগ-সুবিধা বিদেশী গবেষকদের আসতে অনুপ্রাণিত করবে। কারণ বিদেশীদের পক্ষে সড়ক পথে দীর্ঘসময়ে এখানে আসা সম্ভব নয়। তারা তাদের যাত্রার জন্য আকাশ পথকেই অধিক সাশ্রয়ী ও নিরাপদ মনে করে। এ অঞ্চলের কৃষিতে বিপ্লব ঘটলে তখন এখান থেকেই একসময় কৃষি পণ্য সরাসরি লালমনিরহাট বিমান বন্দরের মাধ্যমে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়া সম্ভব হবে। বদলে যাবে এ অঞ্চলের কৃষি, সমৃদ্ধ হবে কৃষক ও খামারিরা আর সে সাথে মঙ্গা এলাকাও হয়ে উঠবে চাঙ্গা।

আন্তর্জাতিক বিমান চলাচল সংস্থার (আইকাও) নিয়ম অনুযায়ী কোনো বিমানবন্দরকে আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে রূপায়ণের জন্য রানওয়ে, ড্রামপেট, অ্যাপ্রোচ লাইট, ট্যাক্সিওয়ে, প্যাসেঞ্জার টার্মিনাল বিল্ডিং, কার্গো টার্মিনাল বিল্ডিং, কন্ট্রোল টাওয়ার, পাওয়ার হাউজ, পাম্প হাউজ, ফায়ার স্টেশন, রাডার স্টেশনসহ তেত্রিশ ধরনের স্থাপনা দরকার। লালমনিরহাট বিমান বন্দরটি চালু করা গেলে এটিকে ভবিষ্যতে আন্তর্জাতিক মানের বিমান বন্দরে রুপান্তর করা সহজ হবে। কারণ বর্তমানে পরিত্যক্ত অবস্থায় যে রানওয়ে ও অন্যান্য সুযোগ সুবিধা রয়েছে তা শুধু সংস্কার করা গেলে এটিকে আন্তর্জাতিক মানের বিমানবন্দরে রুপান্তর করা সম্ভব হবে।

ভারতের বাগডোগরা বিমানবন্দরে সব ধরণের প্লেন ওঠানামা করতে পারে না। আবার রাতে বাগডোগরা বিমানবন্দর ব্যবহারে সমস্যা। ভবিষ্যতে লালমনিরহাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর হলে সে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। বাগডোগরায় যে বিমান নামতে পারবে না সেগুলো লালমনিরহাট বিমানবন্দর ব্যবহার করতে পারবে। এছাড়াও আবহাওয়া খারাপ থাকলে বা কারিগরি সমস্যা হলে ভুটানের থিম্পু বিমানবন্দরে বিমান নামতে না পারলে সেই বিমান পাঠিয়ে দেয়া হয় হাজার মাইল দূরের দিল্লি বিমানবন্দরে। সেক্ষেত্রে ভুটান এই সুবিধা ব্যবহার করতে পারবে। নেপালের বিরাগনগর থেকে লালমনিরহাট বিমানবন্দরের ফ্লাইং টাইম মাত্র ২৫ মিনিট। এ বিমানবন্দর তারা ব্যবহার করতে পারলে যোগাযোগ সহজ হবে।

ভারতের সেভেন সিস্টার হিসেবে পরিচিত সাত রাজ্যসহ আশপাশের আরও কয়েকটি রাজ্য, নেপাল এবং ভুটানের সঙ্গে বাংলাদেশের উপ-আঞ্চলিক যোগাযোগ তৈরির একটা অন্যতম মাধ্যম হতে পারে লালমনিরহাট বিমানবন্দর। লালমনিরহাট হয়ে ওঠবে ‘গেটওয়ে টু নর্থ-ইস্ট’ এবং ‘মাউথ অব আসাম’। রেলপথে ‘লালমনিরহাট জংশন’ এবং বিমান পথে ‘লালমনিরহাট জাহাজ ঘাঁটি’। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে বাংলাদেশের উত্তরের এই জনপদ। সার্বিক বিবেচনায় বিমানবন্দরটি চালু হলে রংপুর অঞ্চলে অর্থনৈতিক বিপ্লব ঘটবে। সুযোগ তৈরি হবে নতুন নতুন ব্যবসা-বাণিজ্যের। যোগাযোগের ক্ষেত্রেও এক নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এছাড়াও লালমনিরহাটের বুড়িমারি স্থলবন্দর, কুড়িগ্রামের সোনাহাট স্থলবন্দর, চিলমারি নদী বন্দর আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। সেই সাথে সরকারি কোষাগারে জমা হবে বিপুল পরিমাণ রাজস্ব, তেমনি এলাকার জনগণও লাভবান হবে। সাধারণ মানুষও পাবে দ্রুততম সময়ে ঢাকা যাতায়াতের সুবিধা। সেই সাথে ঐতিহাসিক এই বিমানবন্দরটি একদিকে যেমন তার হারানো ঐতিহ্য ফিরে পাবে, ফলে গর্বিত হবে লালমনিরহাটবাসীও।

ক্রমবর্ধমান বিশ্বায়নের প্রভাবে এবং আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্য বৃদ্ধির ফলে বাংলাদেশের এভিয়েশন শিল্প আরো বিকশিত হচ্ছে। বেবিচকের তথ্য অনুযায়ী, দেশে করোনা মহামারি শুরুর আগে অর্থাৎ ২০১৯ সালে আকাশপথে অভ্যন্তরীণ রুটের যাত্রী সংখ্যা ছিল প্রায় ৪৫ লাখ। মহামারি শুরুর পর ২০২০ সালে যাত্রী সংখ্যা দাড়ায় ২০ লাখেরও কম। করোনার প্রভাব কমার পর ২০২১ সালে অভ্যন্তরীণ রুটে যাতায়াতকারী যাত্রী ছিল প্রায় ৫০ লাখ যা বর্তমানে কোটিতে অতিক্রম করার পথে। বাংলাদেশ বিমানের বহরে বর্তমানে ২১টি উড়োজাহাজ রয়েছে যা আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ রুটে যাত্রী পরিবহণ করে থাকে। বাংলাদেশ বিমানের যাত্রী সংখ্যাও আগের তুলনায় অনেকগুণ বেড়েছে। ১৯৯৭ সালে অ্যারো বেঙ্গলের মাধ্যমে দেশে প্রথম বেসরকারি এয়ারলাইন্সের যাত্রা শুরু হলেও ২০১৩ সাল পর্যন্ত ১২টি বেসরকারি এয়ারলাইন্স যাত্রা শুরু করলেও টিকে আছে মাত্র দুটি এয়ারলাইন্স যথা- ইউএস বাংলা ও নভোএয়ার। ২০১৩ সালে যাত্রা করা ইউএস বাংলার বহরে বর্তমানে ২০টি উড়োজাহাজ রয়েছে। আরেকটি বেসরকারী এয়ারলাইন্স, নভোএয়ারও ২০১৩ সালে যাত্রা করে যাদের এখন ২১টি বিমানের সবচেয়ে আধুনিক বহর রয়েছে। দেশের বেসরকারি নতুন এয়ারলাইন্স এয়ার অ্যাস্ট্রা ২০২২ সালের ২৪ নভেম্বর বাণিজ্যিক ফ্লাইটের যাত্রা শুরু করে। এয়ারলাইন্সটিতে বিনিয়োগ করেছেন জাপান প্রবাসী বাংলাদেশি ব্যবসায়ী হারুন অর রশিদ। এই এয়ার লাইন্সটির বহরে বর্তমানে ১০টি উড়োজাহাজ রয়েছে। অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান সংখ্যা ও যাত্রী সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় দেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের লালমনিরহাট জেলার এ পুরনো বিমানবন্দরকে সংস্কার করে চালু করা গেলে একদিকে যেমন যাত্রীদের সুবিধা বাড়বে অন্যদিকে অভ্যন্তরীণ রুটে সরকারি ও বেসরকারি এয়ারলাইন্সের আয়ও বাড়বে।

লেখক: অধ্যক্ষ, কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ, কুড়িগ্রাম

সারাবাংলা/এএসজি

প্রফেসর মীর্জা মো. নাসির উদ্দিন মুক্তমত লালমনিরহাট বিমানবন্দর

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর