Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কম্পিউটার সাক্ষরতা ও প্রযুক্তিনির্ভর বাংলাদেশ

অলোক আচার্য
৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১৫:১৭

রাজধানীর একটি পলিটেকনিক্যাল কলেজে কম্পিউটার শিক্ষা ক্লাস। ছবি: সংগৃহীত

শিক্ষিত জাতি গঠনের প্রথম পদক্ষেপ হলো সাক্ষরতা। আর শিক্ষিত ও দক্ষ জাতি গঠনের প্রথম ধাপ হলো কম্পিউটার সাক্ষরতা। সাক্ষরতা শব্দটি দ্বারা প্রকৃতপক্ষে অক্ষর জ্ঞানসম্পন্নতাকেই বোঝানো হয়। আর কম্পিউটার বিষয়ে পরিচিতি ঘটানো, কম্পিউটারের ওপর জ্ঞান-দক্ষতা অর্জনক করাকে কম্পিউটার সাক্ষরতা বলে। মোট কথা সাক্ষরতা শব্দটির সাথে আমরা সবাই খুব পরিচিত। তবে কম্পিউটার সাক্ষরতা শব্দটির সাথে ততোটা পরিচিত নয়। তবে কম্পিউটার যন্ত্রটাকে আজ মোটামুটিভাবে সবাই চেনে। শহর থেকে প্রত্যন্ত পল্লী অঞ্চল সবখানেই কম্পিউটার পৌছে গেছে। সাক্ষরতার সাথে কম্পিউটার সাক্ষরতার ধরনে পার্থক্য থাকলেও উদ্দেশ্য একই।

বিজ্ঞাপন

বর্তমান যুগ সম্পূর্ণ ডিজিটাল যুগ। আর ডিজিটাল যুগের প্রধান মাধ্যম হলো কম্পিউটার। কম্পিউটার যন্ত্রটির সাথে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। বহুমুখী উদ্দেশ্য সাধনের জন্য কম্পিউটার ব্যবহার করা হয়। কম্পিউটার শিক্ষাকে উন্নত দেশগুলোতে গুরুত্বপূর্ণ দক্ষতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কম্পিউটার নির্ভর হওয়ায় কোম্পানিগুলো তাদের কর্মীদের কাছ থেকে কম্পিউটারের সাধারণ জ্ঞান আশা করে। এখনও শিক্ষিত, অশিক্ষিত বহু মানুষ কম্পিউটার জানে না।

বিজ্ঞাপন

উন্নত বিশ্ব আজ আমাদের থেকে অনেকটাই এগিয়ে গেছে। আমরাও গত কয়েক বছরে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিতে অনেকদূর অগ্রসর হয়েছি। সেক্ষেত্রে এই ডিজিটাল যুগে কম্পিউটার সাক্ষরতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সাক্ষরতাকে যতটা গুরুত্বপূর্ণ মনে করা হয়, কম্পিউটার সাক্ষরতা ততটাই গুরুত্বপূর্ণ। কম্পিউটার জ্ঞান আপনাকে অন্যের চেয়ে এগিয়ে রাখবে। প্রতিটি নাগরিকের কম্পিউটার সম্পর্কে নূন্যতম জ্ঞান থাকা আবশ্যক। প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আজ কম্পিউটার রয়েছে। মাল্টিমিডিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল পদ্ধতিতে শিক্ষা দেওয়া হয়। দেশ দ্রুত ডিজিটালাইজেশনের দিকে অগ্রসর হচ্ছে। চলতি বছরের মে মাসে প্রকাশিত এক তথ্যে দেখা যায়, দেশে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ১১ কোটি ৬১ লাখ হয়েছে। যেখানে ফেব্রুয়ারি মাসে এই সংখ্যা ছিল ১১ কোটি ২৭ লাখ ১৫ হাজার।

মোট কথা ডিজিটালাইজেশনের এই যুগে কম্পিউটার ছাড়া চিন্তাও করা যায় না। এই শতাব্দির মূল চালিকাশক্তি হলো প্রযুক্তি। অর্থনীতি, চিকিৎসা, খেলাধূলা, শিক্ষা, কেনাকাটার হিসাব নিকাশ, মহাশূণ্য গবেষণা থেকে শুরু করে ঘরে বসেই কম্পিটারের মাধ্যমে করা সম্ভব হচ্ছে। প্রতিটি ক্ষেত্র আজ বদলে গেছে কম্পিউটারের মাধ্যমে। প্রাথমিক শ্রেণি থেকেই আজ পরিচয় ঘটছে কম্পিউটারের সাথে। যদিও এটি গ্রামের তুলনায় শহরে বেশি ঘটছে। গ্রামে এ হার একেবারেই কম। তবে মাধ্যমিক পর্যায়ে কম্পিউটার চালানো শিখছে বহু কিশোর-কিশোরী। কিন্তু শুধু কম্পিউটার চালালেই হবে না, এটিকে ব্যবহার করতে হবে জীবনের প্রয়োজনে। ব্যবহার করতে হবে ব্যক্তিজীবনে। মনে রাখতে হবে আমাদের শ্রম বাজার যা আজ শারীরিক শ্রম নির্ভর সেই শ্রম যদি আমরা আইটি নির্ভর করতে পারি তাহলেই বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে সক্ষম হব।

আমাদের পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে কিন্তু তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে গেছে অনেক বেশি। আমাদের বুঝতে হবে যে আমরা চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের যুগে প্রবেশ করেছি। এখানে টিকতে হলে অবশ্যই কম্পিউটার জানতে হবে, সফটওয়্যার সম্পর্কে বিস্তর ধারণা থাকতে হবে। কম্পিউটার বেকারত্ব দূরীকরণে উৎকৃষ্ট মাধ্যম হতে পারে। বলা যায়, হবেই। কারণ আজকাল অনেক বেকার যুবক নিজস্ব কম্পিউটার দোকান দিয়ে জীবিকা নির্বাহ করে ভালো আছে। একদিকে যেমন তাকে বেকারত্বের অভিশাপ টানতে হচ্ছে না, অন্যদিকে সমাজে সম্মানজনক জায়গায় পৌছে যাচ্ছে। কম্পিউটার প্রযুক্তিই হলো আজকের বিশ্ব বদলে দেওয়ার হাতিয়ার। প্রথম দিকের কম্পিউটার বহনযোগ্য ছিল না। বিশাল সাইজের কারণেই স্থানান্তরযোগ্য ছিল না। এখন কম্পিউটার কেবল বহনযোগ্যই নয় বরং পকেটে করেও নেওয়া যায়। ডেক্সটপ, ল্যাপটপ, পামটপ বহু ধরনের কম্পিউটার আবিষ্কার হয়েছে। মহাশূণ্য গবেষণার জন্য রয়েছে সুপার কম্পিউটার। আধুনিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রিত হয় কম্পিউটারের মাধ্যমে। হাসপাতালের রোবট কর্মী পরিচালনা বা যুদ্ধক্ষেত্র সবস্থানেই কম্পিউটারের জয়জয়কার। আজকের হাতের মোবাইল ফোনই এক একটি কম্পিউটার। মানুষকে একঘেয়েমি থেকে মুক্তি দিতেও প্রযুক্তির বিকল্প নেই। ২০০১ সাল থেকে প্রতিবছর ২ ডিসেম্বর বিশ্বজুড়ে পালিত হয় কম্পিউটার সাক্ষরতা দিবস।
সাক্ষরতার অর্জনের লক্ষ্যই হওয়া উচিত কম্পিউটার সাক্ষরতা। কারণ শুধু লিখতে-পড়তে জানা একজন বর্তমান যুগে প্রায় গুরুত্বহীন। ১৯৬৪ সালে ঢাকায় পরমাণু শক্তি কমিশনের পরমাণু কেন্দ্রে প্রথম কম্পিউটার স্থাপন করা হয়। এটি ছিল আইবিএম-১৬২০ সিরিজের একটি কম্পিউটার। এটি দিয়ে জটিলতম গবেষণার হিসাব করা হতো।

সেখান থেকে আজ পর্যন্ত কম্পিউটারের আকারে, গতিতে এসেছে পরিবর্তন। একের পর এক প্রজন্ম এসেছে। কম্পিউটারের আধুনিকায়ন হয়েছে। সেই সাথে সুক্ষ্ণ ও জটিল বিষয়ের সমাধান করতে কম্পিউটারের ব্যবহার করা হচ্ছে। কম্পিউটার আমাদের কাজের গতি বৃদ্ধির সাথে সাথে জীবন আরামদায়ক করে তুলেছে। তবে উন্নত দেশগুলোর তুলনায় আমরা এখনও কম্পিউটার ব্যবহারে পিছিয়ে আছি। গ্রাম পর্যায়ে ইন্টারনেট দুর্বলতা, কম্পিউটার সম্পর্কে সঠিক জ্ঞানের অভাব, কম্পিউটারের অপব্যবহার এবং দারিদ্রতা প্রভৃতি কারণে কম্পিউটার জ্ঞান আহরণে বাধা। অনেক বেকার যুবক আজ মফস্বল অঞ্চলে কম্পিউটার প্রশিক্ষণের সেন্টার খুলে বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি কম্পিউটার জ্ঞান বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। কারিগরি জ্ঞানের অন্যতম হাতিয়ার কম্পিউটার। এক সময় যেমন কাগজ ছাড়া জীবন কল্পনা করা যেতো না এখন সেভাবেই কম্পিউটার ছাড়া জীবন কল্পনা করা চলে না। বর্তমানে কারিগরি শিক্ষার ওপর যথেষ্ট গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির জন্য আমরা যেমন একসময় পরিশ্রম করেছি, সেভাবেই কম্পিউটার সাক্ষরতার হার বৃদ্ধির জন্যও পরিশ্রম করতে হবে। ডিজিটালাইজেশন প্রক্রিয়া তরাণি¦ত করতে কম্পিউটার সাক্ষরতা বৃদ্ধির বিকল্প নেই।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এসবিডিই

কম্পিউটার সাক্ষরতা

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর