Thursday 23 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

শিক্ষার্থীদের হাতেই না হোক শিক্ষকের বিচার

মনিরুল ইসলাম শ্রাবণ
৫ অক্টোবর ২০২৪ ১৭:৪৩ | আপডেট: ৯ অক্টোবর ২০২৪ ১৬:৩১

এ কথা আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি যে, শুধু জীবিকার জন্য কেউ শিক্ষকতাকে পেশা হিসেবে বেছে নেন না। মানুষের জন্য, সমাজের জন্য কিছু করার প্রয়াশ থেকেই অনেকে শিক্ষকতকে পেশা হিসেবে নেন। নিজের অর্জিত জ্ঞান পরবর্তী প্রজন্মের কাছে বিলিয়ে দেয়ার একটা তাগিদ তিনি ভিতর থেকে অনুধাবন করেন বলেই কেউ শিক্ষকতায় আসেন। শুধু টাকা-পয়সার লোভে শিক্ষকতার মতো একটি চ্যালেঞ্জিং পেশায় কেউ আসে না। কেননা টাকা উপার্জন করার জন্য পৃথিবীতে আরও অনেক পেশা রয়েছে এবং সেগুলোতে কম পরিশ্রমে আরো বেশি টাকা ইনকাম করা যায়। লোভ যদি থেকেই থাকে তবে তা সমাজের আর আর মানুষ এবং ছাত্র-ছাত্রীদের কাছ থেকে সম্মান পাওয়ার সু-লোভেই একজন শিক্ষক শিক্ষকতায় আসেন।

বিজ্ঞাপন

এ কথা আমরা সবাই জানি যে, মানুষ-মানবতা, সমাজ-সংস্কৃতি, ধর্ম-রাজনীতি, জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থনীতি বা চিকিৎসা শাস্ত্র সবকিছুই বিকাশ ও সমৃদ্ধি লাভ করেছে শিক্ষকদের শিক্ষকতার গুণে। কাজেই শিক্ষক নেই, শিক্ষকতা নেই এরকম একটি রাষ্ট্র বর্তমান বিশ্ব কল্পনা করতে পারে না। শুধু এখনতো নয়ই সুদূর প্রাচীনকালেও যখন জ্ঞান-বিজ্ঞানের এত উৎকর্ষতা ছিল না, মানব সভ্যতার এত বিকাশ ছিল না, তখনও শিক্ষকদের উপস্থিতি ছিল। একদল শিক্ষকের ঐশ্বরিক বা অর্জিত জ্ঞানের দ্বারাই মানব সভ্যতা ক্রমে বিকশিত হয়েছে। মানুষ পর্যাক্রমে গুহাবাসী, জঙ্গলবাসী থেকে সভ্য সমাজ ও বাসগৃহ নির্মাণ করতে শিখেছে।

বিজ্ঞাপন

এজন্যই দেশে-দেশে, যুগে-যুগে, ধর্মে-ধর্মে শিক্ষকদেরকে দেওয়া হয়েছে অফুরন্ত মর্যাদা ও সম্মান। কোনো কালে কোনো যুগের ব্যত্যয় ঘটেনি। বিশ্বে ছাত্র ও শিক্ষকের মধ্যে অসাধারণ শ্রদ্ধা ভক্তি, সম্মান ও ত্যাগ স্বীকারের ইতিহাসের ভান্ডার অফুরন্ত। এর বিপরীতে যে দেশ, যে সমাজ বা যে ব্যক্তি শিক্ষকের প্রতি অশ্রদ্ধ অসম্মান জানিয়েছে, অপ্রীতিকর বা অসৌজন্য মূলক ঘটনা যেখানে ঘটেছে, যারা ঘটিয়েছে তাদের ভবিষ্যৎ ভালো হয়নি। ২০২৪ সালে বাংলাদেশের পরিবর্তিত রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেশের ইতিহাসে শিক্ষকদের জীবনে যে কালো অধ্যায় রচিত হয়েছে তা যেন একটি দুঃস্বপ্নের মতোই থেকে যায়। ভবিষ্যতে আর এরকম পরিস্থিতি শিকার না হোক কোনো সম্মানিত শিক্ষক।

আমাদের মনে রাখতে হবে- সমাজের আট দশজন রক্ত মাংসের গড়া মানুষের মতোই শিক্ষকরাও মানুষ। হিংসা-বিদ্বেষ, রাগ-ক্ষোভ, লোভ-লালসা, গোষ্ঠী বা স্বজনপ্রীতি তাদেরও তাদের কেউ গ্রাস করে বা করতে পারে। আর তাই কোনো শিক্ষক যদি নিজের ভেতরকার জ্ঞানের আলোয় নিজের চরিত্রকে আলোকিত না পারেন, তার দায়ভার শুধু সংশ্লিষ্ট শিক্ষকেরই, পুরো শিক্ষক সমাজের নয়। কারো কারো ব্যক্তিগত ত্রুটি-বিচ্যুতির জন্য আমরা যেন কখনোই সকল শিক্ষকদের অসম্মানের চোখে না দেখি বা অসম্মান করার চেষ্টা না করি। শিক্ষকরা যদি কোনো অন্যায়-অপরাধ করে থাকেন তার বিচার দেশের প্রচলিত আইনে করা হোক। শিক্ষার্থীরা যেন তাদের স্বীয় শিক্ষকের বিচারের কাজ নিজ হাতে না তুলে নেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবসে- এই হোক আমাদের অঙ্গীকার।

জন্ম থেকে আজ পর্যন্ত দেখা পাওয়া আমার সকল শিক্ষকদের প্রতি রইল বিনম্র শ্রদ্ধা।

লেখক: সংগঠক

সারাবাংলা/এসবিডিই

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর