Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

নিজের তৈরি মাটির ঘরে আজো থাকেন হাসি বালা

সাহিদা সাম্য লীনা
২ মে ২০২৪ ১৫:১৪

মাটির ঘর এই গ্লোবাল যুগে চিন্তা করা যায়! এক সময় এই দেশের মানুষ মাটির ঘরে শুয়েছে, রাত্রি যাপন করেছে! মাটির মানুষ মাটিতে শুয়েছে। মাটির কবরে শোবার একটা স্থায়ী অভ্যাস ৭০-৮০ দশকের মানুষ অনুভব করেছে। বাংলাদেশের আনাচে কানাচে গ্রামাঞ্চলে খোঁজ করলে মাটির ঘরের সন্ধান মিলে। ফেনী সদর সুলতানপুর ৬ নং ওয়ার্ডে পাওয়া গছে দুটি মাটির ঘর। বেণুশীলের বাড়িতে মাটির ঘর এখনো বহাল আছে। অভাবের তাড়নায় মাটির ঘরে এখনো তাদের থাকতে হচ্ছে। জানালেন বৃদ্ধা হাসি বালা। নিজের তৈরি ঘরে আজো শোন তিনি। যুদ্ধের দিনক্ষণ বলতে পারেন না।কিন্তু বলেন যে, যুদ্ধের আনুমানিক ৩-৪ বছর পর অনেক কষ্টে এই ঘর গুলো করেন। জমি থেকে মাটি আনা, পুকুর থেকে পানি এনে সেই মাটিকে মথে প্রসেস করা অর্থ্যাৎ, ঘর তৈরির উপযোগি মাটি করার জন্য পরিশ্রম করতে হতো। এরপর সেই মাটিকে দাঁড় করাতে হতো ঢিবির মতো করে। ধীরে ধীরে বসাতেন মাটির দলাগুলো। কোন পিলার না, মাটিই পিলার। অসাধ্য সাধন করতেন সেই মাটির ঘর বানাতে। ঘর তৈরি হতে সময় লাগতো ৩-৪ মাস বা আরো সময়। প্রচুর মাটি লাগতো। সেই ঘরটা আজো আছে হাসি বালার তৈরি। তার বয়স হয়েছে এখন। যৌবন বয়সে এই ঘর করেছেন। নিজের তৈরি মাটির ঘরের সামনে বসে অকপটে বলে গেলেন সেই দুঃখস্মৃতি! তার স্বামীসহ এই ঘরটা করেন। আগে থাকতেন কিসে? বলেন- উপরে পাতাপুতা দিয়ে ছাপড়া দিয়ে বা মাচার মতো করে থাকতাম। স্বপ্ন দেখতো কবে ঘর হবে! কবে থাকবে ঘরে। তখন তাদের কাছে এটাকে ইটের দালানের চেয়ে অনেক মনে হতো! ইটের দালান কি তখন জানতেন না। এখন জানেন কিন্তু সামর্থ্য নেই ঘর করার । কিছু ইট দেখিয়ে বলেন এই ইটে হবে কি! অভাব এখনো তাদের তাড়া করছে। ইটের ঘর তাদের কাছে এখনো দূরে। ছেলেরা মোটামুটি আয় যা করে তা দিয়ে সংসার চলে কিন্তু ঘর হবে না। হাসি বালা বললেন ঘর কি হবে? সরকার কি আমাকে একটি ইটের ঘর দিবে? একটা দালান ঘরে থাকার ইচ্ছে জানালেন হাসি বালা। স্বামী হারিয়েছেনে। ছেলে, ছেলের বৌ, নাতিপুতি নিয়ে তার এখন ভরা সংসার । মাটির ঘরটাতে জানালা, দরজা লোহার ও কাঠের হলেও ঘরটা এখনো বদলাতে পারেননি। আক্ষেপ তার! কিন্তু যুগের চাহিদায় বৈদ্যুতিক তার ঢুকেছে, আছে সিলিং ফ্যান। মাটির ঘর একটা পিছনে ভেঙ্গে পড়েছে। ঢেকে রেখেছেন তবুও! মাটির ঘর ঠান্ডা জানালেন হাসি বালা। প্রতি সাপ্তাহে এই মাটির ঘর লেপতে হয়; এটাও ঝামেলা জানালেন হাসি বালা। না লেপলে মাটির দেয়াল নষ্ট হয়ে যায়। ভেঙ্গে পড়বে।

বিজ্ঞাপন

এলাকার বাসিন্দাদের মতে, এইসব মাটির ঘর তো এখন চলে না। এরা রাখছে তারা গরীব সেকারণে। মুসলমানের বাড়িতে এইসব মাটির ঘর পাওয়া যাবে না। হিন্দু বাড়িতেই আছে। পাল, নাগ, বাহাদুর, গোপাল মিস্ত্রী ও বেণুশীলের বাড়িতে যা দেখা যাবে এই মাটির ঘর। ফেনী জেলায় প্রত্যেক হিন্দু বাড়িতে এখনো স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে বেশ কয়েকটি মাটির দালান।

কামাল উদ্দিন নামে একজন জানান আসলে হিন্দুরা তাদের অতীতের ঘরগুলো রাখতে চাচ্ছেন অনেক কস্টে এই ঘর তারা করেছেন সে কারণে। আর স্মৃতি হিসেবেও ধরে রাখতে চাইছেন।

লেখক: সাংবাদিক

সারাবাংলা/এসবিডিই

নিজের তৈরি মাটির ঘরে আজো থাকেন হাসি বালা মুক্তমত সাহিদা সাম্য লীনা

বিজ্ঞাপন

হাল না ছাড়ার প্রত্যয় গার্দিওলার
২৯ ডিসেম্বর ২০২৪ ১২:৫৪

আরো

সম্পর্কিত খবর