সাংসদ সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে খোলা চিঠি
২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৭:৫৩ | আপডেট: ২৮ এপ্রিল ২০২৪ ১৮:০০
আন্তরিক শুভেচ্ছা জানবেন। আপনার তারুণ্য পূর্ণ সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মশৈলির প্রতি প্রাণিত হয়ে এ লেখা। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, তারুণ্যের দু’টি ধারা; প্রথমতঃ নিখাদ চেতনে সজীব হয়ে ঘুনেধরা জরাজীর্ণতা ভেঙে নবসৃষ্টির উল্লাসে ব্রত থাকা। দ্বিতীয়তঃ উপযুক্ত পোষক অথবা প্রকৃষ্ট প্রভাবকের অভাবে ধ্বংসের নিমিত্তে বিব্রত থাকা। আপনি প্রথম’র পথে পথিক হয়েছেন। বাঙালির চিরায়ত যে সৃজনশীল তারুণ্য কে বৃটিশের আঁধার পেরিয়ে ‘৭১ এর সুমহান মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে স্বাধীনতায় সৃষ্টিশীল হতে দেখেছি, তাকে আবার ‘৭৫ পরবর্তীতে সৃষ্টি বিমুখ তথা ধ্বংসশীল হতে দেখেছি। ধ্বংসের নেপথ্যে প্রভাবক ছিলো বাঙালি জাতীয়তাবাদ বিরোধী তথা স্বাধীনতা বিরোধী অশনি গোষ্ঠী যারা জাতির পরিত্রাতা ও মহান পিতা-বঙ্গবন্ধু এবং মহান চার জাতীয় নেতা কে হত্যা করে এদেশের আবহমান রাজনীতির ধ্রুপদী (classic) ধারা কে বাঙালির চেতনা বিরোধী ধারায় প্রবাহিত করেছিল। সেই ধারাবাহিকতায় এদেশের জীবন্ত ইতিহাস ও প্রাণবন্ত সংবিধানকে ক্ষত-বিক্ষত করে জিয়া তার রাজনীতি বিধ্বংসী কুখ্যাত মতবাদ ‘I’ll make politics difficult for the politicians’ – এদেশে কার্যত প্রতিষ্ঠা করে গেছেন যার দীর্ঘ প্রায় অর্ধশত বছরের নষ্ট-ভ্রষ্ট প্রভাবে রীতিমতো একটি প্রজন্ম বেড়ে উঠেছে। ফলে, প্রকৃত রাজনীতির বিপরীতে বিকৃত রাজনীতি বর্তমানে সমান্তরালে চর্চিত হয়ে আসছে। অর্থাৎ, বাঙালির অসাম্প্রদায়িক জাতিসত্তা, মাতৃসংস্কৃতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য বিরোধী একাধিক গোষ্ঠী এদেশে এখন রাজনৈতিক ভাবে বেশ প্রতিষ্ঠিত এবং এদের শিকড় গভীরে গ্রথিত।
জাতিসত্তা বিরোধী এমন সক্রিয় চক্রগোষ্ঠী পৃথিবীতে দ্বিতীয়টি খুঁজে পাওয়া যাবেনা। দীর্ঘদিনে দেশেপ্রেমহীন এমন বিজাতীয় প্রভাবে এদেশের প্রতিটি সেক্টর এখন অনৈতিকতায় আক্রান্ত!অর্থাৎ দুর্নীতির বৈচিত্র্যময় লীলা এখন এক ঘৃণ্য-লোভনীয় সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। বহুমাত্রিক দুর্নীতি রাজনীতির পৃষ্ঠপোষকতায় পরিপুষ্ট হয়ে রাজনীতির সৃজনশীলতাকেও অনেকটা গ্রাস করে ফেলেছে! মনে হচ্ছে, রাজনীতি এখন একশ্রেণির কথিত রাজনীতিক ও আমলা নামক করপোরেট দুর্নীতিবাজদের কব্জায় বন্দী। রাজনীতি এখন রাজনীতিকদের সাশ্রয়ে নেই। জাতির পিতা তার প্রখর দুরদর্শী চেতনায় বুঝতে পেরেছিলেন বিধায় তিনি দুর্নীতিকে আঁতুড় ঘরেই শেষ করতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করেছিলেন। তিনি অকপটে বলেছিলেন, ‘আমার কৃষক দুর্নীতি করেনা, আমার মজদুর দুর্নীতি করেনা, দুর্নীতি করে আমাদের শিক্ষিত সমাজ।’ কিন্তু দেশবিরোধী চক্রগোষ্ঠী তাকে বেশিদূর এগোতে দেয়নি। জাতির পিতার অনুপস্থিতিতে দেশ, জাতি ও সমাজ হাল বিহীন নৌকার মতো দীর্ঘকাল অলক্ষ্যে ভেসেছিল। ফলে, এর দীর্ঘমেয়াদী খেসারত জাতিকে দিতে হচ্ছে।
দুর্নীতি এখন রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় হৃষ্টপুষ্ট হয়ে তা জাতীয় সংকটে রুপ নিতে যাচ্ছে। শিক্ষিত সমাজের অধিকাংশই এখন দুর্নীতিতে আকন্ঠ নিমজ্জিত। অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে, এমন অরাজক পরিস্থিতি জিয়ার সেই ‘difficult’ দুরভিসন্ধিরই সার্থক পরিণতি। তাই জাতি হিসাবে আমরা যেমন নন্দিত তেমনি নিন্দিতও বটে। প্রসঙ্গত: আমাদের মনে রাখা উচিৎ- দল,মত নির্বিশেষে একমাত্র বঙ্গবন্ধুই বাঙালিজাতির আদর্শিক আইকন বা আইডল। তাকে অস্বীকার করাও একটি চরম অনৈতিক ও অরাজনৈতিক দুর্নীতি। তাকে অস্বীকার করে এদেশের কোনো চেতনাই নৈতিক ও রাজনৈতিক সূত্রে বৈধ হতে পারেনা। বঙ্গবন্ধু কন্যা বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শ বাস্তবায়নে আপ্রাণ সচেষ্ট হয়ে যখন বন্ধুর পথ পাড়ি দিয়ে চলছেন তখন তার স্বতন্ত্র সহযোদ্ধা হিসাবে মহান সংসদে আপনার আগমন আমাদেরকে আশান্বিত করেছে। কেননা, আমরা দেখেছি- বঙ্গবন্ধুর মহান আদর্শকে আপনি আপনার চিন্তা ও কর্মে প্রতিফলনের চেষ্টা করে যাচ্ছেন। সাংসদ হওয়ার আগেই আপনি আপনার এলাকার সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখের সাথি হয়ে থেকেছেন। এমনকি আপনার কষ্টার্জিত উপার্জন কে আত্নবিলাসে নয় বরং মানুষের সেবায় যথাসম্ভব ব্যয় করেছেন। দেশের ফুটবলের হৃত গৌরবকে ফিরিয়ে আনার মাধ্যমে তরুণ সমাজকে মাদকের ছোবল থেকে বাঁচিয়ে তারুণ্যের সুকুমারবৃত্তিক বিপ্লব ঘটাতে নিজেকে অকাতরে নিয়োজিত রেখেছেন। সর্বোপরি- দেশে ‘দুর্নীতি’ নামক ক্রনিক ক্যান্সারের বিরুদ্ধে আপনি অকুতোভয় চিত্তে জিহাদী ভূমিকা রেখে চলেছেন। এ লক্ষ্যে, দেশে এবং দেশের বাইরে অর্থপাচারকারী লোমহর্ষক দুর্নীতিবাজদের প্রহসনী মুখোশ স্ব-গর্জনে উন্মোচন করে দুর্নীতির বিরুদ্ধে গণসচেতনতা সৃষ্টিতে সচেষ্ট আছেন যা সত্যিই প্রশংসার দাবী রাখে। দেশের তরুণ সমাজ বহুকাল এমন প্রেরণাদায়ী সামাজিক, সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক তারুণ্যের দেখা পায়নি। যেন হতাশার আঁধারে আশার প্রদীপ্ত প্রদীপ রুপে আপনার আবির্ভাব। ‘৭৫ পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধুর হিরণ্ময় দ্যুতির আবেশ থেকে এদেশের তরুণ সমাজকে ষড়যন্ত্রকারীরা দূরে সরিয়ে রেখেছিল। কিন্তু ওরা জানতনা যে, মহিমান্বিত স্ফুলিঙ্গ কে কখনো নেভানো যায়না। বঙ্গবন্ধু কণ্যার সুযোগ্য নেতৃত্বে ও আপ্রাণ চেষ্টায় আজকের দিশেহারা তরুণ প্রজন্ম বিকৃত ইতিহাসের গহীন আঁধার পেরিয়ে জাতির চিরন্তন বাতিঘর – ‘বঙ্গবন্ধু’কে চিনতে ও জানতে পারছে। পাশাপাশি আপাদমস্তক ও মনন্তকরনে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ পুষ্ট আপনার এই ‘ডাইনামিক মরালিটি’ আজকের এই তরুণ সমাজকে বঙ্গবন্ধুর প্রদর্শিত পথেই অনুপ্রাণিত করবে বলে আমাদের বিশ্বাস। সংসদীয় গণতন্ত্রে সরকারবিরোধীদল খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উইং যারা ছায়া সরকারের ভূমিকায় থাকে। ত্রিশ লাখ শহীদের রক্তের প্রস্রবণে সৃষ্ট জাতীয় সংসদ আওয়ামীসরকার বিরুদ্ধ বঙ্গবন্ধুর আদর্শপুষ্ট কার্যকর কোনো বিরোধীদল বা সাংসদ পায়নি। মহান সংসদ আও:সরকারবিরোধী দলের নামে অনেক ক্ষেত্রে কার্যত দেশবিরোধী দল পেয়েছে-যেটা আমাদের জন্য একটি জাতীয় দুঃখ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শপুষ্ট একজন স্বতন্ত্র সাংসদ হিসাবে সরকারবিরোধী গঠনতান্ত্রিক অবস্থানে থেকে স্বচ্ছ ও জ্বালাময়ী ভূমিকা রেখে সেই শুন্যতা কিছুটা হলেও পূরণ করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবেন বলে আমরা আশা করছি। এভাবে মহান সংসদকে প্রাণবন্ত করে রাজনৈতিক অঙ্গনে ও তারুণ্যের মননে আপনি অনুকরণীয় ও অনুভবনীয় হয়ে থাকবেন- এই শুভ প্রত্যাশায় আমরা।
লেখক: কলামিস্ট
সারাবাংলা/এসবিডিই
কাজী মাসুদুর রহমান মুক্তমত সাংসদ সৈয়দ সায়েদুল হক সুমনকে খোলা চিঠি