Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

তোমার পদচিহ্ন করেছে ধন্য, বাঙালির হৃদয়ে রয়েছ অম্লান

অলোক আচার্য
১০ জানুয়ারি ২০২৩ ১৬:৩৪

১০ জানুয়ারী বাংলাদেশের জন্য এক অতি আনন্দময় ক্ষণ। ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হওয়ার পর থেকে বহু ঘটনাক্রম পার দিয়ে, বহু চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে আজ বাংলাদেশ বিশ্বের উন্নয়নের রোল মডেলে পরিণত হয়েছে। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, জীবনমান উন্নয়ন, শিক্ষার প্রসার, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নসহ দেশ আজ উন্নয়নের অগ্রযাত্রায় শামিল হয়েছে। যারা একদিন এদেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলে উপহাস করেছিল তারাও দেশের অগ্রগতিকে স্বীকার করে নিয়েছে। যারা ভেবেছিল এদেশের প্রাণপুরুষকে কাপুরুষের মত হত্যা করে এ অগ্রযাত্রাকে রোধ করা যাবে তারাও আজ ভুল প্রমাণিত হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জনগণ উন্নয়নের গতি ধরে রাখতে মহাজোট সরকারের ওপরই আস্থা রেখেছে।

বিজ্ঞাপন

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার পরিবারের সদস্যদের নির্মমভাবে হত্যা করে পরিকল্পিতভাবে গনতন্ত্রকে হত্যা করে দেশের অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিতে চেয়েছিল। নৃশংস এই হত্যাকান্ড পরবর্তী সময়ে স্বাধীনতা বিরোধীরা দেশে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে। কিন্তু তারা বুঝতেই পারেনি স্বপ্নকে অস্ত্র দিয়ে মেরে ফেলা সম্ভব নয়। বঙ্গবন্ধুর দেখা স্বপ্ন তিনি এদেশের মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিয়ে গেছেন। তার স্বপ্ন এখন দেশের কোটি কোটি মানুষের চোখে। সেই স্বপ্ন সোনার বাংলার স্বপ্ন। গণমানুষের স্বপ্নকে কি স্তব্ধ করা যায়? সেই থামিয়ে দেয়া অগ্রযাত্রা বহু উত্থান পতনের ভেতর দিয়ে বঙ্গবন্ধুর সুযোগ্য কন্যা আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে আজ গণতান্ত্রিক এবং উন্নয়নের ধারা বহমান।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের যত পরাধীন জাতি স্বাধীনতার স্বাদ পেয়েছে তাদের সেই স্বাধীনতার সপক্ষে কোন একজনের বিশেষ অবদান থাকে। যার নেতৃত্বে সে দেশের মানুষ মুক্তিকামী হয়ে শত্রুর মোকাবেলা করে। এদেশের জন্ম, জন্ম পূর্ববতী ইতিহাস এবং সেই ইতিহাসের সাথে অঙ্গাঅঙ্গীভাবে মিশে আছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম। যে মানুষটি না থাকলে এদেশ পাকিস্তান বাহিনীর সাথে মোকাবেলা করার মত সাহস পেত না, স্বপ্ন দেখতো না একটি নতুন পতাকার। এদেশের মুক্তিকামী মানুষকে তিনি দেখিয়েছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্ন। বিশ্বের বড় বড় নেতারা বঙ্গবন্ধুর সাহসিকতা, দৃঢ় নেতৃত্ব এবং দেশপ্রেমের প্রশংসা করেছেন। একটি নতুন পতাকা আর সার্বভৌমত্বের স্বপ্ন। মুক্তি দিতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানিদের নির্মম অত্যাচার আর শোষণের হাত থেকে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের জন্য এদেশের মানুষের জন্য পাকিস্তানের কারাগারে নির্মম নির্যাতন সহ্য করেছেন। পাকিস্তানের কারাগারে প্রতিটি মুহূর্তে তাকে মৃত্যুর প্রহর গুণতে হয়েছে। তার আহবানে সাড়া দিয়ে যখন লাখ লাখ বাঙালি রণাঙ্গণে যুদ্ধরত, ঘর ছেড়ে দামাল ছেলের দল যুদ্ধের ময়দানে মৃত্যুর মুখোমুখি দাড়িয়ে তখন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের কারাগারের অন্ধকারে বন্দী হয়ে নির্যাতন সহ্য করছেন। তার চোখে তখন স্বাধীন বাংলাদশের স্বপ্ন। তার বুকে তখন এদেশের মানুষরে প্রতি অগাধ ভালোবাসা ও বিশ্বাস। তিনি বিশ্বাস করতেন এদেশ স্বাধীন হবেই। তিনি বাংলাদেশের অবিসংবাদিত নেতা, বাঙালি জাতির প্রাণপুরুষ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যার অবদানের কারণে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর স্বাধীন হয় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি। বর্বরতার জঘণ্যতম চিহ্ন রেখে আত্মসমর্পণ করে পাক হানাদার বাহিনী। কিন্তু দেশ স্বাধীন হলেও সেই স্বাধীন দেশে তখনো অনুপস্থিত ছিলেন স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্ট্রা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। ২৫ মার্চ রাতেই তাকে গ্রেফতার করে পশ্চিম পাকিস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। সদ্য জন্ম নেয়া দেশে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতি যেন স্বাধীনতারই অসম্পূর্ণতা ছিল। বাংলার প্রতিটি মানুষ অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিল তাদের প্রিয় মানুষ কবে দেশে ফিরবে। অবশেষে ১০ জানুয়ারী ১৯৭২ বাংলার মানুষের স্বাধীনতার উদযাপনের পরিপূর্ণ একটি দিন। এদিন বেলা ১ টা ৪১ মিনিটে সদ্য স্বাধীন দেশের মাটিতে পা রাখেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান।

পাকিস্তানের কারাগার থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মুক্ত স্বদেশ ভূমিতে ফিরে আসার ঘটনা ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসের আরেক আশির্বাদ এবং বিজয়ের পূর্ণতা। ডিসেম্বরের ১৬ তারিখ স্বাধীন হলেও স্বাধীনতার প্রাণপুরুষ অনুপস্থিত থাকায় সে বিজয় অসম্পূর্ণই বলা যায়। স্বাধীন দেশের মানুষ তখন অপেক্ষায় তাদের প্রিয় মানুষটির প্রতীক্ষায়। যাদের তিনি মনে করতেন নিজের ভাই, আত্মীয়। এদেশের মানুষের সাথে ছিল তার আত্মার সম্পর্ক। ২৯০ দিন পাকিস্তানের কারাগারে নির্যাতন ও নৃশংসতা সহ্য করার পর যখন তিনি দেশের মাটিতে পা রাখেন তখন এ এক অন্য বাংলাদেশে। পাকিস্তানি কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে লন্ডন ও ভারত হয়ে তিনি দেশের মাটিতে ফেরেন। তার ফেরার দিন সকাল থেকেই তার আগমনের রাস্তা তেজগাঁও বিমানবন্দরের দুপাশে সারিবদ্ধ মানুষ দাড়িয়ে। তাদের প্রাণের মানুষ দেশের মাটিতে পা রাখবে। লাখো মানুষের ভিড় তাদের প্রিয় নেতাকে বরণ করে নিতে। তাদের কণ্ঠে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু। তেজগাঁও বিমানবন্দর থেকে অপেক্ষামাণ জনসমুদ্র পেরিয়ে রেসকোর্স ময়দানে পৌঁছাতে আড়াই ঘন্টা সময় লাগে। সেই রেসকোর্সে তখন লোকে লোকারণ্য। সেখানে অপেক্ষামাণ সকলেই তাদের ভালোবাসার মানুষটিকে দেখতে, তার মুখ থেকে দুটি কথা শোনার জন্য ছিল উদগ্রীব। বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা রেসকোর্স ময়দানে পৌছে প্রায় ১৭ মিনিট গুরুত্বপূর্ণ ভাষণ দেন জাতির উদ্দেশ্যে। তিনি বিভিন্ন বিষয়ে দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। তার ভাষণে উঠে আসে বাংলাদেশের আদর্শগত ভিত্তি কী হবে, রাষ্ট্র কাঠামো কী ধরনের হবে, যারা দেশের সাথে বেঈমানী করে পাকিস্তানকে সহযোগীতা করেছে তাদের কী হবে এসব বিষয়সহ বহুবিধ দিকনির্দেশনা ছিল তার সেই ভাষণে।

১৯৭১ সালের ৭ মার্চ তিনি ডাক দিয়েছিলেন দেশকে মুক্ত করার আর ১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারী তিনি তার সেই মুক্ত দেশকে গড়ে তোলার দিক নির্দেশনা প্রদান করেন। সেই ভাষণের একটি অংশে তিনি বলেন, ’ আজ থেকে আমার অনুরোধ, আজ থেকে আমার আদেশ, আজ থেকে আমার হুকুম ভাই হিসেবে, নেতা হিসেবে নয়, প্রেসিডেন্ট হিসেবে নয়, প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নয়, আমি তোমাদের ভাই, তোমরা আমার ভাই, এই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়ে যাবে যদি আমার বাংলার মানুষ পেট ভরে ভাত না পায়। এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি আমার বাংলার মা বোনেরা কাপড় না পায়, এই স্বাধীনতা পূর্ণ হবে না যদি এ দেশের মা-বোনেরা ইজ্জত ও কাপড় না পায়। এই স্বাধীনতা আমার পূর্ণতা হবে না যদি এ দেশের মানুষ যারা আমার যুবক শ্রেণী আছে তারা চাকরি না পায় বা কাজ না পায়।’ বাঙালি জাতির প্রতি তার ছিল অগাধ বিশ্বাস এবং আস্থা। বাঙালি জাতির প্রতি ছিল তার অগাধ ভালোবাসা। তিনি বাংলার মানুষকে এত বিশ্বাস করতেন, এতটা ভালোবাসতেন যে পাকিস্থানের কারাগারে মৃত্যুর মুখেও তিনি বাংলাকে এক মুহূর্তের জন্যও ভোলেননি। তাই বঙ্গবন্ধুর প্রত্যাবর্তন ছিল এদেশের স্বাধীনতার পরিপূর্ণতা।

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এজেডএস

অলোক আচার্য বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর