Wednesday 31 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

কোটি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় খালেদা জিয়ার বিদায়

রাকিবুল ইসলাম
৩১ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৯:৪২

সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া ৩০ ডিসেম্বর সকাল ৬টায় রাজধানীর এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যু বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক গভীর শূন্যতার মুহূর্ত হিসেবে চিহ্নিত হয়ে থাকবে। দীর্ঘদিনের অসুস্থতা, বয়সজনিত দুর্বলতা এবং একাধিক জটিল রোগ লিভার ও কিডনি সমস্যা, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস— সব মিলিয়ে তার চিকিৎসা প্রক্রিয়া ছিল অত্যন্ত জটিল ও কষ্টকর।

তার মৃত্যুর পর রাষ্ট্রীয়ভাবে তিন দিনের শোক ঘোষণা করা হয়। বিএনপি দলীয়ভাবে সাত দিনের শোক পালন করে। সরকারি প্রতিষ্ঠান ও গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত রাখা হয়। তবে এই শোক শুধু রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না। কোটি মানুষের চোখে ছিল অশ্রু, হৃদয়ে ছিল গভীর শ্রদ্ধা, আর কণ্ঠে ছিল বিদায়ের বেদনাঘন ধ্বনি।

বিজ্ঞাপন

বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার জানাজায় অংশ নেন বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, হাইকমিশনার ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তাঁর রাজনৈতিক গুরুত্ব ও ব্যক্তিগত মর্যাদার প্রতিফলন হিসেবে অন্তত ৩২টি দেশের কূটনীতিক ও প্রতিনিধি জানাজায় অংশ নেন।

সংসদ ভবন সংলগ্ন এলাকায় আয়োজিত এই জানাজায় জিয়া পরিবারের সদস্যদের পাশাপাশি উপস্থিত ছিলেন প্রধান উপদেষ্টা, প্রধান বিচারপতি, উপদেষ্টা পরিষদের অন্যান্য সদস্য, তিন বাহিনীর প্রধান, বিএনপি ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ, লেখক, গবেষক, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক এবং হাজার হাজার সাধারণ মানুষ। পরিবারের পক্ষ থেকে বক্তব্য রাখেন বেগম জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।

বিদেশি অতিথিদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন পাকিস্তানের স্পিকার সরদার আইয়াজ সাদিক, ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস. জয়শঙ্কর এবং নেপাল, ভুটান ও শ্রীলঙ্কার পররাষ্ট্রমন্ত্রীরা। কূটনৈতিক প্রতিনিধিদের মধ্যে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত মেগান বোল্ডিন, ব্রিটিশ হাইকমিশনার সারাহ কুক, চীনের রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার, রাশিয়ার ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূত একাতেরিনা সেমেনোভা, জাপানের রাষ্ট্রদূত সাইদা সিনচি, কানাডার হাইকমিশনার অজিত সিং, অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনার সুসান রাইল এবং সুইজারল্যান্ডের রাষ্ট্রদূত রেতো সিগফ্রিড রেংলি।

এছাড়াও নেদারল্যান্ডস, লিবিয়া, ফিলিপাইন, সিঙ্গাপুর, ফিলিস্তিন, দক্ষিণ কোরিয়া, মিয়ানমার, ইতালি, সুইডেন, স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, নরওয়ে, ব্রাজিল, মরক্কো, ইরান, আলজেরিয়া, ব্রুনাই, থাইল্যান্ড, কাতার, ডেনমার্ক ও মালয়েশিয়ার রাষ্ট্রদূত ও হাইকমিশনাররা জানাজায় অংশ নেন।

শেষবারের মতো প্রিয় নেত্রীকে বিদায় জানাতে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউ ছাড়িয়ে জনসমাগম ছড়িয়ে পড়ে খামারবাড়ি, আসাদগেট, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, শাহবাগ, মোহাম্মদপুর পর্যন্ত। যে যেখানে পেরেছেন, সেখানেই দাঁড়িয়ে জানাজায় শরিক হন। সারাদেশের জেলা, উপজেলা ও গ্রামে অনুষ্ঠিত হয় অসংখ্য গায়েবানা জানাজা।গায়েবানা জানাজাতেও অংশ নেন হাজার হাজার মানুষ।

জানাজা শেষে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি শহীদ জিয়াউর রহমানের সমাধীর পাশে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হয় তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে।

লেখক: কলামিস্ট

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর