Thursday 25 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রস্তুতি আছে, স্বপ্ন আছে; প্রাথমিকের মেধা যাচাই কবে

অলোক আচার্য
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৫:৪৮

একজন শিক্ষার্থীর জীবনে প্রতিটি ক্লাস, পরীক্ষা গুরুত্বপূর্ণ। বছরের নিয়ম মেনে নতুন বছর আসবে এবং নতুন বছরে নতুন ক্লাসে ভর্তি হয়ে পড়ালেখা শুরু করবে এটাই নিয়ম। এ বছর প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরাও অপেক্ষায় ছিল এমন একটি চমৎকার বছর শেষের। এই বছর প্রাথমিকের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্রছাত্রীরা প্রাথমিক মেধা মূল্যায়ন যা বার্ষিক পরীক্ষার পর হওয়ার কথা ছিল, আদালতের আদেশে সেটি একমাস পিছিয়ে যাওয়ায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। এই অনিশ্চয়তা ছাত্রছাত্রীদের মনে গভীর ছাপ ফেলছে। একদিকে নতুন শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে উপরের ক্লাসের পড়ালেখা চালিয়ে যাওয়া এবং অন্যদিকে পঞ্চম শ্রেণির মেধা যাচাইয়ের প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়া এই দুই করতে গিয়ে এসব কোমলমতি শিক্ষার্থীদের চোখে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এটা উভয় সংকটের মতো। এত দিনের প্রস্তুতি, চোখে স্বপ্ন সবকিছু নিয়েই ওদের চোখেমুখে অনিশ্চয়তার ছাপ। সব ফর্মালিটিজও শেষ, শুধু প্রবেশপত্র হাতে পাওয়ার অপেক্ষা মাত্র। ঠিক এই সময়ে আটকে গেছে পরীক্ষা। বৃত্তি পরীক্ষার ঘোষণা না থাকলে এই সমস্যা ছিল না। কারণ বার্ষিক পরীক্ষা শেষে ওরা ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়ে যায় এবং জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু করে। কিন্তু যেহেতু মেধা যাচাই হবে এমন কথাই রয়েছে সেখানে ওদের প্রস্তুতিও রয়েছে। দীর্ঘদিন প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়েছে। তারও অনেক আগে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হতো। সমাপনী পরীক্ষার পক্ষে এবং বিপক্ষে বহু যুক্তি-তর্ক রয়েছে। ২০০৯ সাল থেকে শুরু হওয়া এই পরীক্ষা দীর্ঘদিন ধরে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার্থীদের জন্য একটি বড় মানসিক চাপ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। শিক্ষা বিশেষজ্ঞদের মতে, পিইসি বাতিলের মূল উদ্দেশ্যই ছিল শিশুদের ওপর অতিরি চাপ কমানো এবং সৃজনশীল শিক্ষা নিশ্চিত করা। কিন্তু মাত্র পঞ্চম শ্রেণিতেই একজন শিক্ষার্থীকে বছরে তিনটি পরীক্ষার পর একটি পাবলিক পরীক্ষার মুখোমুখী করার দরকার আদৌ কতটুকু যৌক্তিক সেই প্রশ্ন ছিল বিশেষজ্ঞদের। সেই চিন্তা থেকে এটি বাদ দিয়ে চলতি বছর থেকেই ফেরার কথা ছিল প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা। সেই ঘোষণা দেওয়া হলে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের মধ্যে উৎসাহ-উদ্দীপনা বিরাজ করে। তবে দ্বন্দ্ব শুরু হয় যখন এবার বৃত্তি পরীক্ষায় কিন্ডারগার্টেনের ছাত্রছাত্রীদের অংশগ্রহণের সুযোগ না দেয়া হয়।

বিজ্ঞাপন

এর পক্ষে এবং বিপক্ষেও নানা মত রয়েছে। কিন্ডারগার্টেনের নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় বৃত্তি নেওয়া হয়। এসব স্কুলগুলোর নিজস্ব বৃত্তি পরীক্ষা ইতিমধ্যেই অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখানে তো কোনো সরকারি প্রাথমিকের ছাত্রছাত্রীকে অংশগ্রহণ করতে দেখা যায়নি? সর্বশেষ প্রাথমিক বৃত্তি পরীক্ষা না নিয়ে,সেটি প্রাথমিক মেধা যাচাই মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলিতে এই নিয়ে বহু আলোচনা-সমালোচনা হয়েছে। দীর্ঘ ১৬ বছর পর প্রাথমিকে বৃত্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার ঘোষণায় সারা দেশের প্রাথমিকের শিক্ষার্থী, শিক্ষকদের ভিতর এক ধরনের উৎসাহ কাজ করে। ছাত্রছাত্রীরা পুরোদমে লেখাপড়া শুরু করে এবং বিদ্যালয়গুলোতে যেসব শিক্ষার্থী বৃত্তি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তাদের শুরু হয় বিশেষ যতœ। চলতি মাসের ২১ তারিখ থেকে ২৪ তারিখ পর্যন্ত এই পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আইনের জটিলতায় আটকে গেছে সেই পরীক্ষা। বেসরকারি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কয়েকজন অভিভাবকের করা রিটে ঝুলে গেছে মেধা যাচাই পরীক্ষা। রিটের শুনানি নিয়ে হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ মেধা যাচাই পরীক্ষা এক মাসের জন্য স্থগিত করেছেন। গত ১৭ ডিসেম্বর এ আদেশ দেওয়া হয়। আগষ্টে প্রকাশিত এক তথ্য অনুযায়ী, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশে প্রায় ৬০ হাজার কিন্ডারগার্টেন রয়েছে। এর মধ্যে নিবন্ধন নিয়েছে মাত্র ১০ থেকে ১২ হাজার কিন্ডারগার্টেন। অর্থাৎ প্রায় ৮০ শতাংশই এখনও নিবন্ধনের বাইরে। এই নিবন্ধনের হার এখন বৃদ্ধি পাচ্ছে। হয়তো সামনের বছর সব কিন্ডারগার্টেন নিবন্ধিত হলে সবাই মেধা যাচাই পরীক্ষায় অংশ নিতে পারতো। এত বছরেও তো কিন্ডারগার্টেনগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। কিন্ডারগার্টেনগুলো নিবন্ধন নিতে কেন অনাগ্রহী তার পিছনে রয়েছে ভিন্ন কারণ। শুধু সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীরা বঞ্চিত হচ্ছে এই মেধা যাচাই পরীক্ষায় এখনও বসতে না পেরে।

কিন্ডারগার্টেনগুলোর একটি বড় অংশেরই নিবন্ধন ছিল না। চলতি বছরে এই হার কিছুটা বেড়েছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর সাথে সাথে বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করছে এসব কিন্ডারগার্টেনগুলোতে। তারা ভালো ফলাফলও করছে। অবশ্যই দেশের শিক্ষায় কিন্ডারগার্টেনগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে চলেছে। এসব কিন্ডারগার্টেগুলোতে আবার বিভিন্ন ফি ভিন্ন ভিন্ন। নামী দামী (ফলাফলের ভিত্তিতে) কিন্ডারগার্টেনগুলোতে খরচ বেশি। অর্থাৎ তাদের প্রতিযোগীতাও বেশি। কিন্তু প্রতিযোগীতার সাথে টিকতে গিয়ে অতিরিক্ত বই, পরীক্ষার চাপ এবং ভারী ব্যাগ এই অবস্থায় এসে দাড়িয়েছে। শিক্ষার স্বাভাবিক পরিস্থিতি ক্রমেই নষ্ট হয়েছে। ছাত্রছাত্রীরা বুঝে গেছে, ভালো ফল করার পন্থা এটাই। নাক-মুখ গুঁজে পড়তে হবে, কোচিং করতে হবে। অভিভাবকরাও এটি মেনে নিয়েছেন। কারণ তাদের বিশ্বাস তার সন্তান যত বেশি পড়ালেখায় ব্যস্ত থাকবে, প্রাইভেট, কোচিং করবে তত বেশি সে শিক্ষিত হবে এবং তার ভবিষ্যত উজ্জ্বল! এজন্যই শিক্ষা ব্যবস্থা হয়ে গেছে ফলাফল নির্ভর। শিক্ষা প্রদান একটি সেবামূলক কাজ হলেও বিষয়টি আজ রীতিমত বাণিজ্যিক একটা ইস্যুতে পরিণত হয়েছে। শিক্ষাকে বাণিজ্যে রুপ দিয়েছে কারা সেটি ভেবে দেখা দরকার। একটি প্রতিযোগীতা চলছে এবং সেটি শুভ নয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠা খারাপ নয়, খারাপ হলো যখন তা একটি সংখ্যা হয়ে দাড়ায় এবং প্রতিযোগীতায় লিপ্ত হয়। সেটিও আবার নিবন্ধন ছাড়া! শিক্ষা এবং বাণিজ্য পাশিপাশি চলতে পারে না। দেশে কিন্ডারগার্টেনের সংখ্যা লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। একটা প্রতিষ্ঠানের গা ঘেষে আরেকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে। এসব প্রতিষ্ঠানের অনেকেই কেবল একটি বিশাল বিল্ডিং ভাড়া করে গড়ে উঠছে। এভাবে দেশের শিক্ষা চলতে পারে না। আর এই সরকারি এবং কিন্ডারগার্টেনের এই অবস্থানে প্রাথমিকের শিক্ষার্থীদের ক্ষতি কোনোভাবেই কাম্য নয়। ছোট্র শিশুগুলো জানেও না কেন তাদের পরীক্ষা বন্ধ রয়েছে! শিক্ষকরাও বলতে পারেন না সত্যি কবে মেধা যাচাই অনুষ্ঠিত হবে! সত্যি এ এক অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতি!

লেখক: প্রাবন্ধিক ও কলামিস্ট

সারাবাংলা/এএসজি
বিজ্ঞাপন

রিজার্ভ বেড়ে ৩২.৮০ বিলিয়ন ডলার
২৫ ডিসেম্বর ২০২৫ ১৬:২৮

আরো

সম্পর্কিত খবর