হাওরে হাঁস পালনে কর্মসংস্থান, আসছে সচ্ছলতা
১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩০ | আপডেট: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩২
নেত্রকোনা: নেত্রকোনা জেলা ময়মনসিংহ বিভাগের এক হাওর জনপদ। মোহনগঞ্জ, মদন, খালিয়াজুরী ও আটপাড়া উপজেলার বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে রয়েছে হাওর অঞ্চল। চারদিকে হাওরের খেতে খেতে পাকা ধানের হাতছানি। আর এর ফাঁকে ফাঁকে দেশীয় জাতের হাঁসের খামার। স্থানীয় বেকার যুবকরা ভাগ্য বদলাতে এসব খামার গড়েছেন। সফলও হচ্ছেন। এতে একদিকে কর্মসংস্থান তৈরি হচ্ছে, আসছে পারিবারিক সচ্ছলতা। অপরদিকে স্থানীয়ভাবে ডিম ও মাংসের চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
হাওরের ধান, শামুক, মাছ, পোকা-মাকড় খেয়ে বেড়ে ওঠে হাঁসের বাচ্চা। এসব প্রাকৃতিক খাদ্যে হাঁস দ্রুত বড় হয়ে ওঠে। এখানে হাঁস পালনে বাজারের প্রচলিত রাসায়নিক খাবার খুব একটা প্রয়োজন পড়ে না। এতে হাঁসের মাংস-ডিম পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হয়। হাওরে হাঁস পালনে খরচ কম এবং লাভ বেশি হওয়ায় বেকার যুবকদের হাঁস পালনে আগ্ৰহ বেড়েছে।
এখানকার হাওরে ছোট-বড় বিভিন্ন খামার গড়ে উঠছে। দিনদিন বাড়ছে খামার। কৃষকেরাও হাঁস পালনকে অতিরিক্ত আয়ের মাধ্যম হিসেবে বেছে নিচ্ছেন। বর্ষাকালে হাওরের বিস্তীর্ণ জলরাশি হাঁসের জন্য আশীর্বাদ হয়ে আসে। বৈশাখ মাসে ফসল কাটার পর মাঠে পড়ে থাকা ধান ও নানা প্রাকৃতিক খাদ্যে হাঁস বেড়ে ওঠে, ফলে অতিরিক্ত খাদ্য ব্যয়ও কমে আসে।
জেলার হাওর ,বিল, খালের নিচু এলাকাগুলোর প্রায় প্রতিটি বাড়িতেই হাঁস পালন করা হচ্ছে। কেউ ঘরোয়া পরিবেশে কয়েকটি হাঁস পালন করছেন, আবার কেউ বাণিজ্যিক খামার গড়ে তুলছেন। কম পরিশ্রম, স্বল্প খরচ এবং অধিক লাভজনক হওয়ায় অনেকেই হাঁস পালনের দিকে ঝুঁকছেন। ফলে হাঁস পালনের এক নতুন সম্ভাবনা রয়েছে এই অঞ্চলে।
নেত্রকোনা জেলা প্রাণিসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে নেত্রকোনায় ডিম ও মাংস উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়েছে। ডিমের চাহিদা রয়েছে ৫৩ কোটি, উৎপাদন হয়েছে ৫৩.৮০ কোটি। মাংসের চাহিদা ১.৭৩ লাখ মেট্রিক টন, উৎপাদন হয়েছে ১.৮০ লাখ মেট্রিক টন। চাহিদার অতিরিক্ত ডিম-মাংস জেলার বাইরে বিভিন্ন এলাকায় সরবরাহ হচ্ছে।
জানতে চাইলে নুরপুর বোয়ালির মো. সজল মিয়া জানান, তার খামারে তিন হাজার হাঁস রয়েছে। প্রতিদিন প্রায় ২ হাজার ডিম আসে। শুষ্ক মৌসুমে ধান ওঠার আগে কিছু বাড়তি খাবার দিতে হয়। তবে তাও তুলনামূলকভাবে কম। প্রতি মাসে ১৩ থেকে ১৪ হাজার টাকা খরচ হলেও ডিম বিক্রি করে আয় হয় ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। এতে তার পরিবারে সচ্ছলতা এসেছে।
খামারি সুজন মিয়া বলেন, মাছ-মাংস কেনার সামর্থ্য নেই। তাই নিজেদের খাদ্য চাহিদা পূরণে হাস পালন করছি। হাঁস পালনে ডিম ও মাংসের পারিবারিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে।
জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, জেলার হাওর অঞ্চলের মানুষ এখন কৃষি কাজের পাশাপাশি হাঁসের খামারের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। অনেক শিক্ষিত বেকার যুবকরাও হাঁস পালন করছেন। জেলায় প্রায় ৬ হাজারের বেশি বাণিজ্যিক হাঁস খামার গড়ে ওঠেছে। খামারিদের প্রশিক্ষণ ও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এসআর