সম্পত্তির জন্য বাবাকে বেঁধে গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ
১১ এপ্রিল ২০২৫ ২২:৩৭
কুমিল্লা: কুমিল্লার লাকসাম উপজেলায় সম্পত্তির জন্য আবদুল জলিল (৬০) নামের এক ব্যক্তিকে বেঁধে গরম পানি ঢেলে নির্যাতনের অভিযোগ উঠেছে তার স্ত্রী ও সন্তানদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগীর দাবি, বড় ছেলেকে বাদ দিয়ে বাকি সন্তানদের নামে সম্পত্তি লিখে না দেওয়ায় তাকে মারধর করা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) দুপুরে লাকসাম পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গোপালপুর এলাকায় নির্যাতনের এ ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের ঘটনায় এদিন থানায় লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন ওই বাবা।
নির্যাতনের শিকার আবদুল জলিন গোপালপুর মৃত হাজি ওয়ালীউল্লার ছেলে। আর অভিযুক্তরা হলেন, আব্দুল জলিলের ছেলে নোমান (২০), রকি (১৬), মেয়ে নাজমিন (২৬), নূপুর (১৩) ও স্ত্রী রিনা আক্তার (৪৫)।
অন্যদিকে আবদুল জলিলকে নির্যাতনের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। এক মিনিট ৪৫ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা গেছে বাড়ির উঠান থেকে বৃদ্ধ বাবাকে টানাহেঁচড়া করছে এক ছেলে। পিঠ ও ঘাড় ধরে একের পর এক ধাক্কা দিচ্ছেন তিনি। গায়ের গেঞ্জি টানতে টানতে ছিঁড়ে ফেলেন। এ সময় আরেক ছেলে রশি খোঁজায় ব্যস্ত। পরে রশি দিয়ে দুই ছেলে বাবার হাত-পা বাঁধছে। এরপর এতে যোগ দেয় মেয়েও। সবশেষে বাবার মুখে গরম পানি ঢালছেন তারা।
এ সময় ওই বৃদ্ধের চিৎকারে স্থানীয়রা এসে তাকে উদ্ধার করেন।
স্থানীয়রা জানায়, আবদুল জলিলের নামে বসতবাড়ি ও মাঠে ১২০ শতাংশ সম্পত্তি রয়েছে। তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে রয়েছে। বড় ছেলে প্রবাসে থাকেন। সম্পত্তি নিজেদের নামে লিখে দিতে প্রায়ই বাবাকে মারধর করে সন্তানেরা। এমনকি বাবাকে ভরণপোষণও দিচ্ছে না তারা। এ নিয়েই স্ত্রী-সন্তানদের সঙ্গে জলিলের দ্বন্দ্ব শুরু হয়।
এ ঘটনা নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিশি বৈঠকও হয়েছে। জলিলের প্রতিবেশীরা জানান, ওইদিন স্ত্রী ও সন্তানদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা হয় তার। এর জেরে ঘরের দরজা ও জানালা ভাঙচুরের চেষ্টা চালান জলিল। পরে ছেলে-মেয়েরা বাবার ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে তার ওপর নির্যাতন চালায়।
নির্যাতনের শিকার আবদুল জলিল জানান, অনেক দিন ধরে সন্তানরা সম্পত্তি লিখে নেওয়ার জন্য তাকে বিভিন্ন সময়ে হুমকি দিয়ে আসছে। তার স্ত্রী রিনাও এর প্রতিবাদ করে না। তারা তাকে ভরণপোষণও দেয় না। ছোটখাটো ঘটনা নিয়ে ঝামেলা করে।
বৃহস্পতিবারের ঘটনা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সেদিন আমার সন্তানরা বাড়ির উঠানের মধ্যে আমাকে মারতে থাকে। মারতে মারতে হাত-পা বাঁধে। হাত-পা ও শরীরে এখনো মারধরের দাগ আছে। স্থানীয়রা এসে আমাকে উদ্ধার করে। ভয়ে এখন পর্যন্ত আমি বাড়িতে যাইনি। সারারাত রাস্তায় ছিলাম।
এদিকে লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, নির্যাতনের ভিডিওটি আমাদের নজরে এসেছে। এ ঘটনায় নির্যাতিত আবদুল জলিল থানায় সন্তান ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন। পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়েছে। তদন্তের মাধ্যমে নির্যাতনকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।
সারাবাংলা/এইচআই