রংপুর: প্রায় দুই বছর আগে মারা গেছেন তিনি অথচ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের তথ্যে তিনি রংপুরের কারমাইকেল কলেজের অধ্যাপক। অন্যদিকে রাজশাহীর বানেশ্বর সরকারি কলেজের ওয়েবসাইটের তথ্যমতে, তিনি ওই কলেজের অধ্যক্ষ। এরই মধ্যে ওই শিক্ষককে পীরগাছা সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে পদায়ন করা হয়েছে।
অথচ ওই শিক্ষকের পরিবার থেকে পেনশন ও ভাতার জন্য মৃত্যুসনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অধিদফতরে জমা দিলেও মন্ত্রণালয় অবগতই না যে তিনি মারা গেছেন। এমন ঘটনায় পরিবার যেমন ক্ষুব্ধ অন্যদিকে বিস্মিত ও মর্মাহত। আর মৃত শিক্ষকদের অধ্যক্ষ পদে পদায়নের বিষয়টি ‘বিব্রতকর’ বলছেন মন্ত্রণালয়ের সদ্য সাবেক কর্মকর্তারা।
যাকে নিয়ে এই পরিস্থিতি সেই শিক্ষকের নাম অধ্যাপক মোহাম্মদ আবদুল মুত্তালিব। তিনি রাজশাহীর কোর্ট স্টেশন এলাকার বাসিন্দা ছিলেন। ২০২৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর রাজশাহীর বানেশ্বর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে কর্মরত অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। স্ত্রীসহ তার এক ছেলে আছে।
আবদুল মুত্তালিবের সহকর্মী কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক হাবিবুর রহমান জানান, ২০১৫ থেকে ২০২৩ সালের অক্টোবর পর্যন্ত কারমাইকেল কলেজের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন আবদুল মুত্তালিব।
আর ২০২৩ সালের ৩০ অক্টোবর আবদুল মুত্তালিব কারমাইকেল কলেজ থেকে রাজশাহীর বানেশ্বর সরকারি কলেজে অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন বলে জানান বানেশ্বর সরকারি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের দায়িত্ব পালন করা কলেজের সহকারী অধ্যাপক (রসায়ন) রেজাউল করিম। তিনি জানান, ১৬ ডিসেম্বর কলেজে বিজয় দিবসের কর্মসূচি ছিল। কর্মসূচিতে অধ্যক্ষ স্যার (মুত্তালিব) যোগদানও করেন। এরপর তিনি তার রুমে বসলে অসুস্থ হয়ে পড়েন। তখন তাকে হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।
বানেশ্বর সরকারি কলেজের ওয়েবসাইট ঘুরে দেখা যায়, সেখানে অধ্যক্ষ হিসেবে এখনো কর্মরত আছেন আবদুল মুত্তালিব। ওয়েবসাইটের প্রচ্ছদে অধ্যক্ষের বাণী ও ছবির জায়গায় তার নাম ও ছবি দেওয়া রয়েছে।
তিনি বলেন, আবদুল মুত্তালিব স্যার মারা গেলেও কলেজের ওয়েবসাইটের তথ্য আপডেট না হওয়ায় বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) দেশের ১৩৫টি কলেজে নতুন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। তাদের অধ্যক্ষ পদে সংযুক্তির প্রজ্ঞাপনে সই করেন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের কলেজ শাখার উপসচিব মো. মাহবুব আলম।
মারা যাওয়া শিক্ষককে অধ্যক্ষ পদে নিয়োগের আদেশ জারির প্রসঙ্গে অধ্যক্ষ পদে সংযুক্তির প্রজ্ঞাপনে সই করা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের উপসচিব মো. মাহবুব আলমকে একাধিকবার ফোন করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
তবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ থেকে সদ্য পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বদলি হওয়া যুগ্ম সচিব মো. নুরুজ্জামান বলেন, দেড়শর বেশি সরকারি করা কলেজের অধ্যক্ষ পদে পদায়নের বিষয়ে আমরা কাজ করেছিলাম। ঈদের আগেই তাদের পদায়নের কথা ছিল। অধ্যক্ষ না থাকায় ওই কলেজগুলোর শিক্ষকদের বেতন-ভাতা পরিশোধ নিয়ে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। তাই অনেকটা তাড়াহুড়া করেই শিক্ষা ক্যাডারের ১৪ ব্যাচের অধ্যাপকদের পদায়ন করা হয়েছে। তবে তথ্য হালনাগাদ না থাকায় হয়তো এ ভুল হয়েছে।
তিনি বলেন, মৃত শিক্ষকদের অধ্যক্ষ পদে পদায়নের বিষয়টি ‘বিব্রতকর’।
এদিকে এমন ঘটনায় পরিবার যেমন ক্ষুব্ধ অন্যদিকে বিস্মিত ও মর্মাহত। প্রয়াত আবদুল মুত্তালিবের ভায়রা সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে বিভ্রান্তির বিষয় উল্লেখ করে বলেন, আবদুল মুত্তালিবের মৃত্যুর পর পরিবার থেকে পেনশন ও ভাতার জন্য মৃত্যুসনদসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে দুই বছর আগে। কিন্তু মন্ত্রণালয় কিভাবে তাকে নতুন করে পদায়নের মাধ্যমে এই ভুল করে বলে প্রশ্ন রাখেন।