ঢাকা: রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে একটি লেপতোষকের দোকানের আগুনে একই পরিবারের নারী-শিশু ১২জনসহ মোট ১৮ জনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দুইজন আইসিইউতে আছে। তাদের অবস্থা শঙ্কামুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন কর্তব্যরত চিকিৎসক।
সোমবার (৭ এপ্রিল) ভোরে এদের সবাইকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
জানা যায়, সোমবার ভোর সোয়া ৪টার দিকে নাজিমউদ্দিন রোডে মাক্কুশাহ মাজার সংলগ্ন একটি পাঁচতলা ভবনের নিচতলায় এই আগুনের ঘটনা ঘটে। এতে নিচতলায় রিয়াদ উড ফার্নিচারের দোকানের ম্যানেজার আমিন উদ্দিন (৭৪) মারা যান।
ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ (পরিদর্শক) মো. ফারুক আমিন উদ্দিনের মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, নিহত আমিন উদ্দিনের মরদেহ মর্গে রাখা হয়েছে। এই ঘটনায় ১৩জন ঢাকা মেডিকেলের পুরাতন বার্ন ইউনিটের ভর্তি আছে।
ফায়ার সার্ভিস সদর দপ্তরের কন্ট্রোল রুমের ডিউটি অফিসার মো. শাহজাহান জানান, ভোর ৪:১০ মিনিটে পাঁচ তলা ভবনটির নিচতলায় লেপতোশকের দোকানে আগুন লাগে। খবর পেয়ে ৭টি ইউনিট ঘটনাস্থলে গিয়ে ৫:১২ মিনিটে আগুন নির্বাপণ করে। এর মধ্যে ওই ভবনের বিভিন্ন ফ্লোর থেকে ১৮ জনকে দগ্ধ ও অসুস্থ অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া দ্বিতীয় তলা থেকে এক বৃদ্ধের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।

– ছবি : সংগৃহীত
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারী ইউনিটের আবাসিক সার্জন ডা. হারুনুর রশীদ বলেন, ভোরে ১৩ জনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়েছে। এদের মধ্যে ইকবাল হোসেন (৪৭) নামে একজন ২ শতাংশ দগ্ধ হয়েছেন। বাকিদের বাহ্যিক কোন দগ্ধ নেই। তবে সবারই শ্বাসনালী ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এদের মধ্যে মুশফিকা(২৫) ও রাহেলা বেগম (৬০) আইসিইউতে আছেন। বাকিরা সাধারণ ওয়ার্ডে আছেন।
অসুস্থরা হলেন- ইকবাল হোসেন (৪৭), স্ত্রী ইশরাত জাহান (৩৬), দুই মেয়ে ইশতিমাম (১২) ও ইশায়েত (১০), ইশরাতের ভাগিনা মুশফিকা আক্তার (২৫), ইকবালের মা মমতাজ বেগম (৬৫),
ইউনুস মিয়া (৭৪), স্ত্রী লাহেলা বেগম (৬০), দুই ছেলে আমিন (২৭) ও বুলবুল (৩৭), মেয়ে শিল্পী আক্তার (৪০), শিল্পীর মেয়ে তালহা (৩) ও রিয়াদ উড ফার্নিচার দোকানের কর্মচারী সাকিব (২২)।
অসুস্থ ইউনুস মিয়ার মেয়ের জামাই শফিকুল ইসলাম জানান, তার শ্বশুর পরিবার নিয়ে ওই ভবনের পাঁচতলায় থাকেন। ভোরে নিচতলায় আগুন লাগে এতে পুরা ভবনে ধোঁয়ার সৃষ্টি হয়। ধোঁয়ার কারণে কেউ বাইরে বের হতে পারেনি। পরে তাদের চিৎকারে ফায়ার সার্ভিস সদস্যরা তাদেরকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে আসে।
লেপতোষকের দোকানটির পাশের “রিয়াদ উড” নামে ফার্নিচার দোকানের মালিক আতিকুর রহমান জানান, তার দোকানটিতে দুইজন ম্যানেজার ও একজন কর্মচারী রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন। তাদের মধ্যে ম্যানেজার আমিন উদ্দিন (৭৪) আগুনের ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন। অপর কর্মচারী সাকিব ধোঁয়ায় অসুস্থ হয়েছে। সে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
তিনি আরও জানান, আমিন উদ্দিনের বাড়ি যশোর জেলার শার্শা উপজেলার উলসি গ্রামে। বর্তমানে ওই ফার্নিচার দোকানে থাকতেন তিনি। আনুমানিক তিন বছর যাবৎ ম্যানেজারের দায়িত্বে ছিলেন তিনি।