এলডিসি চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় নীতিমালার সংস্কার অপরিহার্য: বাণিজ্য উপদেষ্টা
২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:৪১ | আপডেট: ২০ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:৪০
ঢাকা: বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দীন বলেছেন, এলডিসি উত্তরণের ফলে দেশের বেসরকারিখাত বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হবে। বিষয়টি দেশের সামগ্রিক অর্থনীতির জন্য অতীব গুরুত্বপূর্ণ এবং এ লক্ষ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট নীতিমালার সংষ্কার ও সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ একান্ত অপরিহার্য।
চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বাস্তবভিত্তিক উত্তরণ কৌশল (স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি-এসটিএস) এর পুনঃপর্যালোচনার উপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
রোববার (১৯ জানুয়ারি) সচিবালয়ে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) এর নেতাদের সঙ্গে এক সৌজন্য সাক্ষাতে এসব অভিমত ব্যক্ত করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা। ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ, ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী ও সহ-সভাপতি মো. সালিম সোলায়মান এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সোমবার (২০ জানুয়ারি) ডিসিসিআই এর পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব তথ্য জানানো হয়েছে।
সাক্ষাতে শেখ বশিরউদ্দীন বলেন, নীতি সহায়তা ও ধারাবাহিকতা অব্যাহত না থাকলে স্থানীয় ও বিদেশি বিনিয়োগের সম্ভাবনা হ্রাস পাবে। তবে ভবিষ্যতে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বেসরকারিখাতের সক্ষমতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই।
প্রসঙ্গক্রমে তিনি বলেন, গণঅভ্যুথান পরবর্তী সময়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অস্থিরতা এবং দেশের বিভিন্ন স্থানে অপ্রত্যাশিত বন্যার কারণে স্থানীয়ভাবে ব্যবসায়িক কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছে, তবে ইতোমধ্যে সামগ্রিক পরিস্থিতির বেশ উন্নতি হয়েছে এবং এ অবস্থা থেকে উত্তরণের লক্ষ্যে অর্ন্তবর্তীকালীন সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ ও সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে বিদ্যমান কর আহরণের হার ও করজাল সম্প্রসারণের কোন বিকল্প নেই।
অপর এক প্রসঙ্গে বাণিজ্য উপদেষ্টা বলেন, সম্প্রতি চালের মূল্যের ঊর্ধ্বগতির বিষয়টি সরকারের নজরে এসেছে, যা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে সরকারের প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে। আসন্ন রমজানে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য স্থিতিশীল থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।
বাণিজ্য উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বাংলাদেশের এলডিসি উত্তরণ পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় বিশেষ করে আমদানি-রফতানি নীতিমালা, রাজস্ব কাঠামো, আর্থিক ব্যবস্থাপনা, লজিস্টিক নীতিমালা এবং জাতীয় বাজেট ও মুদ্রানীতিসহ ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট বিদ্যমান কাঠামোর সংস্কার ও যুগোপযোগীকরণের কোনো বিকল্প নেই বলে অভিমত ব্যক্ত করেন।
তিনি বলেন, কোভিড মহামারি, রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধ, মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতা, ২০২৪ সালে দেশের রাজনৈতিক পট-পরিবর্তন পরবর্তী অনাকাঙ্খিত পরিস্থিতির কারণে বাংলাদেশ এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার প্রস্তুতি ভালোভাবে গ্রহণ করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিদ্যমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আমাদের এলডিসি উত্তরণের সময়সীমা পিছিয়ে নেওয়ার বিষয়টি সরকার বিবেচনা করতে পারে।
ডিসিসিআই সভাপতি বলেন, এ লক্ষ্যে সরকার ও বেসরকারি খাতের যৌথ আলোচনার মাধ্যমে করণীয় নির্ধারণ ও যথাযথ বাস্তবায়নের জন্য ‘বাস্তবভিত্তিক উত্তরণ কৌশল (স্মুথ ট্রানজিশন স্ট্র্যাটেজি-এসটিএস)’ প্রণয়ন করা আবশ্যক। পাশাপাশি এলডিসি পরবর্তী চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে ব্যবসা ও বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সরকারের পক্ষ হতে বেসরকারিখাতকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের উপর তিনি জোরারোপ করেন।
তিনি বলেন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) কর্তৃক সম্প্রতি শতাধিক পণ্যের উপর ভ্যাট, সম্পূরক শুল্ক, আবগারি শুল্ক ও কর বৃদ্ধির উদ্যোগের কারণে ইতোমধ্যে দেশের সাধারণ মানুষ সহ ব্যবসায়ীদের মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। দেশের অর্থনৈতিক বিদ্যমান পরিস্থিতিতে এ উদ্যোগ বাস্তবায়িত হলে মূল্যস্ফীতি বাড়িয়ে জনগনের জীবনযাত্রার উপর আরো অধিক হারে চাপ ফেলবে, সেই সাথে ব্যবসায়িক ও বিনিয়োগ কার্যক্রম বাধাগ্রস্থ হবে। যদিও সরকার বেশকিছু খাতের উপর প্রস্তাবিত শুল্ক বৃদ্ধির উদ্যোগ পুণঃবিবেচনা করবে বলে জানিয়েছে, তবে আসন্ন রামজানকে সামনে রেখে এ পরিস্থিতিতে ভ্যাট, ট্যাক্স বাড়ানোর উদ্যোগ কোনভাবেই কাম্য নয় বলে মত প্রকাশ করেন ডিসিসিআই সভাপতি।
অন্যান্যের মধ্যে বাজারে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে পণ্যের সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান অনিয়ম দূর করতে বাজার মনিটরিং কার্যক্রম বাড়ানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিশেষ করে রমজান মাসে বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের প্রাপ্তি ও সহনীয় মূল্য নিশ্চিতকল্পে এ ধরনের পণ্যের সরবরাহ বাড়ানো, বাজার নজরদারিতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কঠোর উদ্যোগ গ্রহণ ও বাস্তবায়ন জরুরি।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এনজে