গণধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল, গ্রেফতার ৩
১৮ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৫৯ | আপডেট: ১৯ জানুয়ারি ২০২৫ ০০:৩৬
ঢাকা: গণধর্ষণের পর ভিডিও ধারণ করে পরবর্তী সময়ে তা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করা কুখ্যাত এক চক্রের তিনজনকে গ্রেফতার করেছে যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশ।
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) যাত্রাবাড়ীর ফলবাজার এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (১৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যায় ডিএমপির মিডিয়া শাখার উপকমিশনার (ডিসি মিডিয়া) তালেবুর রহমান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতাররা হলেন— মো. মাসুম (২৫), মো. শরীফ (২৩) ও মো. ইস্রাফিল (২২)।
যাত্রাবাড়ী থানা সূত্রে জানা যায়, পনের দিন আগে টেলিগ্রাম অ্যাপসের মাধ্যমে গণধর্ষণের শিকার এক ভিকটিমের সঙ্গে পরিচয় হয় চক্রটির মূল হোতা গ্রেফতার মাসুমের। পরবর্তী সময়ে তা প্রেমের সম্পর্কে গড়ায়। প্রেমের সূত্র ধরে গত শনিবার ভিকটিমকে কাজলারপাড় এলাকায় এক বাসায় ডেকে আনে মাসুম। সেই বাসায় জোরপূর্বক আটকে রেখে মাসুম প্রথমে তাকে ধর্ষণ করে। পরে তার দুই বন্ধু ইস্রাফিল ও শরীফ ভিকটিমকে ধর্ষণ করে এবং ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে।
সূত্র থেকে আরও জানা যায়, তারা ভিকটিমকে ধর্ষণের আপত্তিকর ভিডিও দেখিয়ে তার কাছে ৩০ হাজার টাকা দাবি করে। তখন ভিকটিম তার নিকট থাকা ৯ হাজার ৫০০ টাকা তাদেরকে দেয়। পরে তারা ভিকটিমকে একটি ভাড়া করা মোটরসাইকেলে তুলে দিয়ে তাদের চাহিদা মোতাবেক টাকা নিয়ে আসার কথা বলে। অন্যথায় ধারণ করা ভিডিও পরিবারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি প্রদান করে।
গত ১৫ জানুয়ারি ইস্রাফিল ভিকটিমকে ফোন করে বলে শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) মাসুম তার বন্ধুদের নিয়ে সাকরাইন অনুষ্ঠান করবে এবং তারা সেখানে তাকে যেতে বলে। না গেলে ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেয়। ভিকটিম কৌশলে তাদের কথায় রাজী হয় এবং বিষয়টি যাত্রাবাড়ী থানা পুলিশকে অবগত করেন।
থানা সূত্রে আরও জানা যায়, ঘটনাটি অবহিত হওয়ার পরে বিকেলে ভিকটিমের সঙ্গে কৌশলে যোগাযোগ রক্ষার মাধ্যমে এবং তথ্য-প্রযুক্তির সহায়তায় যাত্রাবাড়ীর ফলবাজার এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত তিনজনকে গ্রেফতার করে যাত্রাবাড়ী থানার একটি টিম। এ সময় তাদের হেফাজত হতে তিনটি মোবাইলফোন ও ভিকটিমের কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইলের মাধ্যমে নেওয়া ৮ হাজার ৬৫০ টাকা জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় ভিকটিমের অভিযোগের প্রেক্ষিতে যাত্রবাড়ী থানায় ধর্ষণসহ পর্ণোগ্রাফি নিয়ন্ত্রণ আইনে নিয়মিত মামলা রুজু করা হয়েছে।
গ্রেফতারকৃতদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে প্রাপ্ত চাঞ্চল্যকর তথ্য সম্পর্কে থানা সূত্রে জানা যায়, গ্রেফতারকৃতরা সংঘবদ্ধ একটি চক্রের সদস্য। তারা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বা অ্যাপসের মাধ্যমে নারীদেরকে ফাঁদে ফেলে ধর্ষণ করে এবং ভিডিও ধারণ করে। ধারণকৃত ভিডিও পরিবারসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে পরে তাদের চাহিদা মোতাবেক বিভিন্ন সময়ে ফের ধর্ষণ করে এবং বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নেয়। মাসুম এ পর্যন্ত এরূপ ১৬টি ঘটনার কথা স্বীকার করেছে। কোনো ভুক্তভোগী এ সকল ঘটনায় অভিযোগ না করায় গ্রেফতাররা এতোদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ধরা-ছোঁয়ার বাইরে ছিল।
গ্রেফতারদের বিজ্ঞ আদালতে পাঠানো হয়েছে। মামলার নিবিড় তদন্ত ও ঘটনায় জড়িত অন্যান্যদের গ্রেফতারে অভিযান অব্যাহত রয়েছে বলে জানান পুলিশ।
সারাবাংলা/ইউজে/এইচআই