‘ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী’ ছাত্র-জনতার ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাবিতে বিক্ষোভ
১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১১ | আপডেট: ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩০
ঢাকা: বিভাগের তিন শিক্ষার্থীসহ ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী (আদিবাসী ব্যানারে) ছাত্র-জনতা ও সাংবাদিকদের ওপর হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। বিক্ষোভ থেকে তারা হামলাকারীদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৬ জানুয়ারি) দুপুর ২টার দিকে রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে তারা বিক্ষোভ সমাবেশ এ দাবি জানায়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘আমার বোন রাস্তায় মরে, পুলিশ-প্রশাসন কী করে?’, ‘আদিবাসীদের সাংবিধানিক স্বীকৃতি দাও’, ‘মিছিলে হামলা করে ইন্টেরিম কী করে’, ‘১৫ জুলাই থেকে ১৫ জানুয়ারি তফাৎ কোথায়?’, ‘সভারেন্টি-সন্ত্রাসী’সহ নানা ধরনের লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে প্রতিবাদ জানান।
বিক্ষোভ সমাবেশে ঢাবির সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক রোবায়েত ফেরদৌস বলেন, ‘আপনারা জানেন গতকাল আদিবাসী শিক্ষার্থীরা তাদের দাবি নিয়ে যখন বিক্ষোভ করছিল তখন গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের তিন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছেন। তারা বর্তমানে চিকিৎসাধীন আছেন। যারা আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে তাদের নিন্দা ও ধিক্কার জানানোর ভাষা আমার নাই। তাদের অবিলম্বে গ্রেফতার করা হোক।’
তিনি বলেন, ‘একটা দেশ তখনই উন্নত হবে যখন সেই দেশের ভিন্ন ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীকে তারা স্বীকৃতি দেবে। যদি স্বীকৃতি দিতে না পারে, অন্তত তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রাখবে। কারও অনুভূতিতে অন্তত আঘাত করা হবে না।’
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. খোর্শেদ আলম বলেন, ‘সংবিধান সংস্কার কমিশন গতকাল বহুত্ববাদী রাষ্ট্র গঠনের প্রস্তাব দিয়েছিল, তখনই আমাদের শিক্ষার্থীদের ওপর বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। এখনো জুলাই অভ্যুত্থানের ছয় মাস হয়নি। তার মধ্যেই এরকম বর্বর হামলা অনাকাঙ্ক্ষিত ও আমাদের জন্য অপ্রত্যাশিত। এ সব বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারকে সজাগ থাকতে হবে।’
সহযোগী অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাক খান বলেন, ‘আমরা ভেবেছিলাম জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে আমরা একটা অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্র পাব। কিন্তু, আমরা দেখলাম, আমাদের সমাজের সব নীতি-নৈতিকতা ভেঙে ফেলা হচ্ছে। গতকাল যা হয়েছে তা কোনো সভ্য দেশে হতে পারে না।’
বিক্ষোভ সমাবেশে সংহতি জানিয়ে সাবেক শিক্ষার্থী রবিন বলেন, ‘গতকাল আদিবাসীরাসহ অনেকে আহত হয়েছেন। আমাদের বিভাগের এক শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠা তঞ্চঙ্ঘাকে মাথায় ১২টা সেলাই করতে হয়েছে। এখনো তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ হামলার সঙ্গে যারা সম্পৃক্ত তাদের যেন দ্রুত গ্রেফতার করা হয়।’
ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মীর আরশাদুল ইসলাম বলেন, ‘আপনারা জানেন, গতকাল আদিবাসীদের আন্দোলনে একদল দুর্বৃত্ত আমাদের বিভাগের তিন শিক্ষার্থীসহ আদিবাসী ছাত্র-জনতার ওপর হামলা করেছে। যেখানে আমাদের বিভাগের শিক্ষার্থী রুপাইয়া শ্রেষ্ঠার মাথায় ১২টা সেলাই করা হয়েছে। যেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক। জুলাই অভ্যুত্থানের সময় আমরা দেখেছি রুপাইয়া প্রতিদিন তার এলাকা থেকে নারীদের ঐক্যবদ্ধ করে জুলাই আন্দোলনে ভূমিকা রেখেছে। যার জন্য তার ভাইকে পর্যন্ত তার এলাকার কাউন্সিলর তুলে নিয়ে নির্যাতন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘আজকের এই দিনেও এসে যদি রুপাইয়ারা হামলার শিকার হয় তাহলে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা কী করে? আমরা স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টাকে বলতে চাই, যাদের ইন্ধনে এ হামলা হয়েছে তাদের খুঁজে বের করে শাস্তির আওতায় আনা হোক।’
উল্লেখ্য, বিক্ষোভে ঢাবির গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সাবরিনা সুলতানা চৌধুরী, ড. সাইফুল আলম চৌধুরী, কাজলী শেহরিন ইসলাম ও সহকারী অধ্যাপক মার্জিয়া রহমানসহ বিভাগের বর্তমান ও সাবেক শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/এআইএন/পিটিএম