ছবির কারণে ১৬ বছর ধরে নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত পর্দানশীল নারীরা
১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৪:০৩ | আপডেট: ১৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:০৬
ঢাকা: দেশের নাগরিক হিসেবে যেকোনো সুবিধা পেতে প্রয়োজন জাতীয় পরিচয়পত্র বা এনআইডি। কিন্তু ছবির কারণে বিগত ১৬ বছর ধরে নাগরিক সব সুবিধা থেকে বঞ্চিত পূর্ণ পর্দানশীল নারীরা। এমতাবস্থায় ছবি ছাড়া ফিঙ্গার পদ্ধতির মাধ্যমে ভোটার হতে নির্বাচন কমিশনের দারস্থ হয়েছেন তারা।
বুধবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনের সামনে ফিঙ্গার প্রিন্টের মাধ্যমে এনআইডি তৈরির দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন মহিলা আনজুমানের পর্দানশীল নারীরা।
সেই সঙ্গে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে দাবি না মানলে দেশব্যাপী ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা মাঠে নামবে বলেও হুঁশিয়ারী দেন তারা।
সমাবেশ থেকে মহিলা আনজুমানের আহ্বায়ক শারমিন ইয়াসমিন বলেন, ‘গত ১৬ বছর ধরে শুধুমাত্র ছবির অজুহাতে পর্দানশীল নারীদের জাতীয় পরিচয়পত্র আটকে রাখা হয়েছে, যা এক প্রকার মানবতাবিরোধী অপরাধ। এতে পর্দানশীল নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার বঞ্চিত হয়ে নিদারুণ কষ্ট করছেন। যে বা যারা গত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীল নারীদের নাগরিক অধিকার হরণ করেছে, আমরা তাদের বিচার চাই।’
মহিলা আনজুমানের সদস্যরা তাদের ধর্মীয় অধিকার এবং প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখে এনআইডি’র দাবি জানান।
তিনি বলেন, ‘একজন নারী ছবি তুললে ২টি গুনাহ হয়। একটি ছবি তোলার গুনাহ, অন্যটি বেপর্দা হওয়ার গুনাহ। আমরা পর্দানশীল নারীরা সেই গুনাহ থেকে বাঁচতে চাই। ইসি কর্মকর্তারা আমাদের নাগরিকত্ব আটকে রেখে সে গুনাহ করতে বাধ্য করতে পারে না। আমি আমার চেহারা কাউকে দেখাব না, এটা আমার গোপনীয়তা বা প্রাইভেসির অধিকার। অর্থাৎ পর্দানশীল নারীদের আজকের এই দাবি শুধু ধর্মীয় অধিকারের মধ্যেই পরে না, প্রাইভেসির অধিকারের মধ্যেও পরে। ফলে দুই দিক থেকেই পর্দানশীল নারীদের দাবি মানবাধিকার ও সাংবিধানিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।’
তিনি আরও বলেন, ‘এনআইডি ছাড়া পর্দানশীল নারীরা মৌলিক ও নাগরিক অধিকার হারিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অনেক পর্দানশীল নারী অর্থাভাবে বিনা চিকিৎসায় মারা যাচ্ছেন। কিন্তু এনআইডি ছাড়া ওয়ারিশসূত্রে প্রাপ্ত জমি বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ সম্পত্তি বিক্রি করতে পারলে তিনি চিকিৎসার খরচ বহন করতে পারতেন। অনেক পর্দানশীল নারীর বাড়িঘর দুর্ঘটনায় আগুনে পুড়ে গেছে। এনআইডি ছাড়া ত্রাণ নিতে পারছেন না তারা। অনেক বিধবা বা তালাকপ্রাপ্ত পর্দানশীল নারী এনআইডির অভাবে বাসা ভাড়া করতে পারছেন না। বাচ্চাদের স্কুলে ভর্তি করাতে পারছেন না। পর্দার সঙ্গে কোনো চাকরি করে জীবন নির্বাহ করতে পারছেন না। গত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীল নারীদের সাবেক ইসি কর্মকর্তারা যে কষ্ট দিয়েছেন, তা বর্ণনা করে শেষ করা যাবে না।’
শারমিন ইয়াসমিন বলেন, ‘গত জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মূল লক্ষ্য ছিল বৈষম্যহীন সমাজ প্রতিষ্ঠা। গত ১৬ বছর শুধুমাত্র পরিপূর্ণ পর্দা করার কারণে নারীদের সঙ্গে যে বৈষম্য হয়েছে, আমরা এ বৈষম্যের পরিসমাপ্তি চাই। অবিলম্বে পর্দানশীল নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুন্ন রেখে এনআইডি দেওয়া হোক। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন ২০১০ এবং ২০২৩-এ পরিচয় শনাক্তে চেহারা বা ছবির কথা উল্লেখ নেই। এমনকি বায়োমেট্রিক যাচাইয়ে ফেসিয়াল রিকগনিশনকেও বাধ্যতামূলক করা হয়নি। কিন্তু তারপরও স্বৈরাচারি মনোভাব থেকেই পর্দানশীল নারীদের নাগরিকত্ব বঞ্চিত করে রেখেছিল সাবেক ইসি কর্মকর্তারা।’
সমাবেশ শেষে ইসি বরাবর একটি স্মারকলিপিও দেন তারা।
প্রধান নির্বাচন কমিশনার বরাবর দেওয়া স্মারকলিপিতে তিনটি দাবি জানিয়েছেন তারা। দাবিগুলো হলো-
১. বিগত ১৬ বছর যাবত পর্দানশীল নারীদের মানবাধিকার হরণ করা ইসি কর্মকর্তাদের বিচার করা হোক;
২. পর্দানশীল নারীদের ধর্মীয় ও প্রাইভেসির অধিকার অক্ষুণ্ণ রেখেই এনআইডি প্রদান করা হোক;
৩. পর্দানশীল নারীদের ফিঙ্গার প্রিন্ট নেওয়ায় নারী অফিস সহকারী বাধ্যতামূলক করা হোক।
সারাবাংলা/এনএল/এসডব্লিউ
জাতীয় পরিচয় পত্র নির্বাচন কমিশন (ইসি) পর্দানশীল নারীদের দাবি