বাংলাদেশ-পাকিস্তানের বাণিজ্য বাড়ার অপার সম্ভাবনা রয়েছে
১৪ জানুয়ারি ২০২৫ ১৮:৩০
ঢাকা: বাংলাদেশে ও পাকিস্তানের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির অপার সম্ভবনা রয়েছে। দুই দেশের ব্যবসায়ীকে সে সুযোগ কাজে লাগাতে হবে। এজন্য প্রয়োজন ভিসা সহজীকরণ ও পণ্য রফতানিতে প্রতিবন্ধকতা দূর করা।
মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ডিসিসিআই অডিটোরিয়ামে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘বাংলাদেশ-পাকিস্তান বিজনেস ফোরাম’ শীর্ষক দ্বিপাক্ষিক মতবিনিময় সভায় এসব কথা উঠে আসে।
বাংলাদেশ সফররত পাকিস্তানের বাণিজ্য প্রতিনিধিদলের এ মতবিনিয়ম সভার আয়োজন করে ডিসিসিআই। ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বারর্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখের নেতৃত্বে ১০ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল ওই সভায় অংশ নেয়।
প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে ডিসিসিআই সভাপতি তাসকীন আহমেদ বলেন, ‘বর্তমানে সমুদ্রপথে শুরু হওয়া পণ্য পরিবহণের ধারাবাহিকতা থাকলে আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে দু’দেশের দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।
২০২৩-২৪ অর্থবছরে দু’দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ ছিল ৬৮৯ দশমিক ৭৬ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। যেখানে বাংলাদেশের আমদানি-রফতানির পরিমাণ ছিল যথাক্রমে ৬২৭ দশমিক ৭৮ মিলিয়ন ও ৬১ দশমিক ৯৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। এর মধ্যে ঔষধ, অর্গানিক কেমিক্যাল, চামড়াজাত পণ্য, প্লাস্টিক এবং কৃষিপণ্য উল্লেখযোগ্য।’
তিনি বলেন, ‘দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের ব্যাপক সুযোগ থাকা সত্ত্বেও ভিসা প্রাপ্তিতে জটিলতা, শুল্ক বিষয়ক প্রতিবন্ধকতা, পণ্য পরিবহণে সরাসরি যোগাযোগ স্বল্পতা ও বন্দর সুবিধার অপর্যাপ্ততার কারণে দু’দেশের বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এখনো কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেনি। যার নিরসন একান্ত অপরিহার্য। এছাড়াও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণের লক্ষ্যে তিনি পিটিএ ও এফটিএ সইয়ের প্রস্তাব করেন।’
ফেডারেশন অব পাকিস্তান চেম্বারর্স অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফপিসিসিআই) সভাপতি আতিফ ইকরাম শেখ বলেন, ‘ব্যাপক সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য এখনও কাঙ্খিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। বাংলাদেশে পাকিস্তানের মোট রফতানির প্রায় ৫৫ শতাংশ আসে টেক্সটাইল ও পোশাক খাত থেকে। অপরদিকে বাংলাদেশের রফতানির সিংহভাগই নির্ভর করে তৈরি পোশাক খাতের উপর। তাই আমদানি-রফতানি কার্যক্রমে আরও নতুন পণ্য সংযোজনের সুযোগ রয়েছে।’ পাকিস্তান থেকে কৃষি পণ্য, চাল, সিরামিকসহ অন্যান্য পণ্য আরও বেশি হারে আমদানির জন্য বাংলাদেশের উদ্যোক্তাদের প্রতি তিনি আহ্বান জানান তিনি।
এছাড়া তথ্য-প্রযুক্তি ও মোবাইল ফিন্যান্সিং খাতে সম্প্রতি বাংলাদেশ বেশ উন্নতি করেছে উল্লেখ করে আতিফ ইকরাম বলেন, ‘বিশেষ করে তথ্য-প্রযুক্তি খাতে দু’দেশের ব্যবসায়ীরা যৌথ বিনিয়োগে কাজ করতে পারে।’
বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ বলেন, ‘সম্প্রতি সমুদ্রপথে দু’দেশের পণ্য পরিবহন কার্যক্রম শুরু হয়েছে, বাণিজ্য ও বিনিয়োগে এ ধরনের ইতিবাচক কার্যক্রমের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে আগামী ২ থেকে ৩ বছরের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য ৩ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছাতে সক্ষম হবে।’
এফপিসিসিআই-এর ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি সাকিব ফায়াজ মাগুন বলেন, ‘দেশদুটোর বেসরকারিখাতের প্রতিনিধিদের মধ্যকার সম্পর্ক উন্নয়নে দুদেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলোর কার্যক্রম আরও জোরাদার করতে হবে।’
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি স্বাক্ষরের উপর জোরারোপ করে তিনি বলেন, ‘দু’দেশের মধ্যকার পণ্য আমদানি-রফতানির পরিমাণ যত বেশি হবে, পণ্যের মূল্য তত হ্রাস পাবে।’
ডিসিসিআই ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি রাজিব এইচ চৌধুরী দুদেশের তরুণ জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনী সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাংলাদেশের হাইটেক পার্কে পাকিস্তানের তথ্য-প্রযুক্তিখাতের উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
আলোচনা সভা শেষে অনুষ্ঠিত বিজনেস টু বিজনেস (বিটুবি) সেশনে পাকিস্তানের প্রতিনিধিদলের সাথে ডিসিসিআই’র সদস্যভুক্ত শতাধিক প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। ডিসিসিআই সহ-সভাপতি মো. সালেম সোলায়মান সহ পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
সারাবাংলা/ইএইচটি/এমপি