বগুড়ায় বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ
১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৪৮ | আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫০
বগুড়া: প্রায় দুই যুগ পর বগুড়া বিমানবন্দর চালুর উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। ইতোমধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই করার জন্য কমিটি গঠন করা হয়েছে।
রোববার (১২ জানুয়ারি) সরেজমিনে বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শনে আসবে কমিটি। পরিদর্শন শেষে বিমানবন্দর চালুর জন্য প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন তারা।
বিমানবন্দর চালু করতে ১২শ কোটি টাকা প্রয়োজন। বেসরকারি বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (বেবিচক) সূত্রে এ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।
বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া রোববার বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শনে যাওয়ার বিষয়টি জানিয়েছেন।
সূত্র জানিয়েছে, রোববার বিমান মন্ত্রণালয়, বিমানবাহিনী প্রধান ও বেবিচক চেয়ারম্যানসহ সংশ্লিষ্টরা সরেজমিনে বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শন করবেন। বগুড়ায় বিমানবন্দর চালু করতে আরও জমি অধিগ্রহণ করতে হবে। শুরুতে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চালুর কথা চিন্তা করা হচ্ছে।
বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, বগুড়ায় বিমানবন্দর স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয় ১৯৮৭ সালে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই উদ্যোগে ভাটা পড়ে। এরপর ১৯৯১-৯৬ মেয়াদে বিএনপি সরকারের শেষ দিকে এখানে বিমানবন্দর স্থাপনের নীতিগত সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়। এ জন্য ২২ কোটি টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন পায়। ১৯৯৫ সালে সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় বগুড়া-নওগাঁ মহাসড়কের পাশে ১০৯ একর জমি অধিগ্রহণ করেন সরকার। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পের আওতায় রানওয়ে, কার্যালয় ভবন ও কর্মকর্তাদের জন্য আবাসিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ ও পানি সরবরাহ, রাস্তাঘাট নির্মাণসহ প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে। প্রকল্পের কাজ শেষ হয় ২০০০ সালে। কিন্তু বাণিজ্যিকভাবে বিমান আর ওড়েনি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত নেতৃত্বাধীন জোট সরকার বিমানবন্দরটি বাণিজ্যিকভাবে চালুর কোনো উদ্যোগ নেয়নি।
জানা গেছে, এর আগে বিগত সরকারের আমলে বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু করতে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে চার সদস্যের কমিটি গঠন করে বেবিচক। বগুড়া-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মো. রেজাউল করিম বাবলুর প্রস্তাবনার আলোকে সম্ভাব্যতা যাচাইপূর্বক স্বয়ংসম্পূর্ণ প্রতিবেদনসহ মতামত দিতে বলা হয় কমিটিকে। কমিটির সদস্যরা বিমানবন্দর এলাকা পরিদর্শন করে একটি প্রতিবেদনও দাখিল করেন। কিন্তু সেটি আমলে নেওয়া হয়নি। এবার সেটিও আমলে নেওয়া হবে।
রেজাউল করিম বাবলু বেসরকারি বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী বরাবর লিখিত আবেদন করেন। ওই আবেদনে বলা হয়, উত্তরবঙ্গের প্রবেশদ্বার বগুড়ায় বাণিজ্যিকভাবে বিমান চলাচলের জন্য নব্বইয়ের দশকে বগুড়া সদর উপজেলার এরুলিয়া এলাকায় প্রায় ১১০ একর জায়গাজুড়ে বিমানবন্দরটি নির্মাণ করা হয়। আন্তর্জাতিক মানের এই বিমানবন্দর নির্মাণে খরচ হয় ২২ কোটি টাকা। কিন্তু ২৪ বছরেও বগুড়া বিমানবন্দর বাণিজ্যিকভাবে চালু হয়নি। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার বিমানবন্দরের কাজ সম্পন্ন করলেও ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার এটি বাণিজ্যিকভাবে চালু না করে বিমানবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করে। এমন প্রেক্ষাপটে রাজস্ব আয় এবং দেশি-বিদেশি যাত্রীদের সুবিধার্থে বাণিজ্যিকভাবে বিমানবন্দরটি চালু করার সুপারিশ করেন।
স্থানীয় হোটেল-মোটেল ব্যবসায়ী ও পুলিশের তথ্যানুযায়ী, প্রতি বছর গড়ে প্রায় ৫ হাজার বিদেশি পর্যটক বগুড়ায় যান। বাংলার প্রাচীন রাজধানী মহাস্থানগড়সহ দর্শনীয় ও ধর্মীয় একাধিক ঐতিহাসিক স্থাপনা রয়েছে এখানে। বগুড়া জেলায় সরকারি-বেসরকারি মিলিয়ে ছোট-বড় প্রায় ২০টি শিল্পকারখানা রয়েছে। এসব শিল্পকারখানার মধ্যে এসেনশিয়াল ড্রাগস, ওয়ান ফার্মাসিউটিক্যালস, ট্রান্সকম কনজ্যুমার প্রোডাক্ট, উত্তরা মোটরস, এবিসি টাইলস, এস আর কেমিক্যাল কারখানা অন্যতম।
বগুড়ায় চার তারকা মানের হোটেল রয়েছে দুটি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, বাণিজ্যিকভাবে বিমানসেবা চালুর মতো সব ধরনের অনুকূল পরিবেশ বগুড়ায় রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের (বেবিচক) চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মার্শাল মো. মঞ্জুর কবীর ভূঁইয়া বলেন, আমরা রোববার বগুড়া বিমানবন্দর পরিদর্শনে যাচ্ছি। চালু করতে পারলে সেটা আমাদের দেশের জন্য ভালো হবে। পরিদর্শন শেষে সবাই মিলে প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
সারাবাংলা/এসআর