Thursday 09 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

ফের বাড়ছে মোবাইল খরচ, ১০০টাকা রিচার্জে পাওয়া যাবে ৪৪ টাকা!

এমদাদুল হক তুহিন, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১০:০০ | আপডেট: ৯ জানুয়ারি ২০২৫ ১১:১৯

মোবাইল ফোন গ্রাহক। ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারে খরচ আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানোর প্রক্রিয়া চলছে। এটি করা হলে ১০০ টাকা রিচার্জে গ্রাহকরা ৪৩ টাকার কিছু বেশি ব্যবহার করতে পারবেন। বাকি অর্থ যাবে সরকারের কোষাগারে। আর এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন হলে দেশে মোবাইল ফোনে কথা বলা ও ইন্টারনেট ব্যবহার আরও কমে যাবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), মোবাইল অপারেটর, তথ্যপ্রযুক্তি খাতের উদ্যোক্তা ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

বিজ্ঞাপন

জানা গেছে, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের তৈরি মূল্য সংযোজন কর ও সম্পূরক শুল্ক (সংশোধিত) অধ্যাদেশ-২০২৫ এখন চূড়ান্ত অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে। অধ্যাদেশটি পাস হলে, সম্পূরক শুল্ক আরও তিন শতাংশ বেড়ে মোট কর হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। যার মধ্যে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ কাটবে ২৯ দশমিক ৮ টাকা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স কাটবে ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর কাটবে ২০ দশমিক ৪ টাকা। অর্থাৎ গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর দিতে হবে ৫৬ দশমিক ৩ টাকা। ফলে গ্রাহক ১০০ টাকায় ব্যবহার করতে পারবেন মাত্র ৪৩ দশমিক ৭০ টাকা।

বিজ্ঞাপন

জানতে চাইলে এনবিআর’র শীর্ষ এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে সারাবাংলাকে বলেন, ‘অধ্যাদেশটি উপদেষ্টা পরিষদে পাস হয়েছে। এখন তা প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে রয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার নীতিগত অনুমোদন শেষে বঙ্গবভনে যাবে। অর্থাৎ যেকোনো সময় এটি অধ্যাদেশ আকারে পাশ হতে পারে।’

তিনি আরও বলেন, ‘মোবাইলে সম্পূরক শুল্ক ২০ থেকে বাড়িয়ে ২৩ শতাংশ করা হচ্ছে। ফলে আগামী ছয় মাসে অতিরিক্ত ৫০০ কোটি টাকার রাজস্ব বেশি সংগ্রহ হতে পারে। যেহেতু ২০২৪-২৫ সালের বাজেটে মোবাইলের ওপর সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে, ফলে আগামী ২০২৫-২৬ সালের বাজেটে নতুন করে আর কর বাড়ানো হবে না।’

এ বিষয়ে বাংলালিংকের করপোরেট ও রেগুলেটরি অ্যাফেয়ার্স বিভাগের প্রধান তাইমুর রহমান সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোবাইলে আরও ৩ শতাংশ সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হলে গ্রাহকের খরচ আরও ৩ দশমিক ২৫ শতাংশ বেড়ে যাবে। চলতি অর্থবছরের বাজেটেই সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো হয়েছে। এর প্রভাবে এরই মধ্যে মোবাইলে ডাটা ও ইন্টারনেট ব্যবহার কমে গেছে। এখন আরও কমে যাবে। মূল্যস্ফীতির কারণে মানুষ খাদ্যে খরচ বাদ দিয়ে মোবাইলে তো খরচ করবে না। সামগ্রিকভাবে ডাটা ও ইন্টারনেট ব্যবহার করলে শিক্ষা ও দেশের জিডিপিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। আমাদের মনে হয় রাজস্ব বাড়াতে গিয়ে স্বল্পমেয়াদী চিন্তা না করে দীর্ঘমেয়াদী চিন্তা করা উচিত।’

জানতে চাইলে বেসিসের সাবেক সভাপতি ও বিডিজবসের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফাহিম মাশরুর সারাবাংলাকে বলেন, ‘মোবাইলে সম্পূরক শুল্ক বাড়ানো একটি বাজে সিদ্ধান্ত। এশিয়ার মধ্যে মোবাইলে সবচেয়ে বেশি কর বাংলাদেশে। ১০০ টাকার মধ্যে ৫০ টাকার উপরে বেশি কর। এখন আরও ৩ শতাংশ বাড়ানো হচ্ছে। ডাক টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এখন তরুণদের প্রতিনিধিত্ব করছে। আমরা আশা করেছিলাম, এই সময়ে ইন্টারনেটের দাম কমবে। অনেক উপদেষ্টা জানেনই না, ইন্টারনেটের দাম বাড়ানো হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যে ছাত্র-আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই সরকার গঠিত হয়েছে, ইন্টারনেটে আন্দোলন বেগবান হয়েছে। আবার ইন্টারনেট বন্ধের কারণেও আন্দোলন দানা বেঁধে উঠেছে; সেখানে ইন্টানেটের দাম কমার পরিবর্তে বাড়ানোর উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে- এটি ছাত্র-আন্দোলনের স্পিরিটের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। এটির ব্যাপক প্রতিক্রিয়া তৈরি হবে। আমরা এরইমধ্যে মানববন্ধনের উদ্যোগ নিয়েছি। ছাত্র-জনতাও এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে মাঠে নামবে।’

বাংলাদেশ মুঠোফোন গ্রাহক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মো. মহিউদ্দিন আহমেদ সারাবাংলাকে বলেন, ‘৫ আগস্টের পর অনেকেরই আয় কমেছে। এমনিতেই অনেকেই এখনও মুঠোফোন সেবার বাইরে রয়েছেন। ফলে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর ওপর করের বোঝা আরও বাড়বে। অনেকেই মোবাইল সেবা থেকে আরও বিচ্ছন্ন হয়ে যাবেন। এটি একটি হঠকারী সিদ্ধান্ত। এই সিদ্ধান্ত বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।’

সদ্য ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ বাজেটে অর্থাৎ ২০২৪-২৫ অর্থবছরের বাজেটে মোবাইল ফোন সেবায় সম্পূরক শুল্ক ১৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২০ শতাংশ করা হয়েছিল। সে অনুযায়ী, বর্তমানে মোবাইল ফোনে ১০০ টাকার রিচার্জ করলে সম্পূরক শুল্ক, ভ্যাট ও সারচার্জ দিতে হয় ২৮ দশমিক ১ টাকা। রেভিনিউ শেয়ার ও মিনিমাম ট্যাক্স দিতে হয় ৬ দশমিক ১ টাকা, পরোক্ষ কর দিতে হয় ২০ দশমিক ৪ টাকা। অর্থাৎ, গ্রাহক ১০০ টাকা রিচার্জ করলে সবমিলিয়ে কর বাবদ বাদ যায় ৫৪ দশমিক ৬ টাকা।’

এদিকে ৫ আগস্টের পর দেশে মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারকারী কমেছে। কমেছে ডাটা ও ইন্টারনেটের ব্যবহারও। বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, গত নভেম্বরে মোবাইল ফোনের গ্রাহক ছিল ১৮ কোটি ৮৭ লাখ, যা গত জুনের চেয়ে ৭৩ লাখ কম। অন্যদিকে জুনের চেয়ে মোবাইল ফোনে ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯৭ লাখ কমে ১৩ কোটি ২৮ লাখে এসেছে।

সারাবাংলা/ইএইচটি/পিটিএম

ইন্টারনেট কল মোবাইল খরচ রিচার্জ

বিজ্ঞাপন

জাজিরা থানার ওসির মরদেহ উদ্ধার
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৫৯

৪২২ উপজেলায় ৩০ টাকায় মিলবে চাল 
৯ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:২৯

আরো

সম্পর্কিত খবর