Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

বরগুনা শুঁটকি পল্লির স্বাস্থ্য-স্যানিটেশন উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:০০ | আপডেট: ৬ জানুয়ারি ২০২৫ ০৮:১২

বরগুনা শুঁটকি পল্লি। ছবি: সংগৃহীত

বরগুনা: জেলার তালতলী উপজেলার শুঁটকি পল্লিতে স্বাস্থ্য, স্যানিটেশন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য সরকারিভাবে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এতে করে বরগুনার সম্ভাবনাময় শুঁটকি শিল্পের বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যার নিরসন হবে এবং দেশের অন্যতম শুঁটকি উৎপাদন কেন্দ্রটিতে উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে আশা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

বরগুনার তালতলী উপজেলার আশারচর, সোনাকাটা, জয়ালভাঙ্গা ও ফকিরহাটসহ আরও কয়েকটি এলাকায় নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত পাঁচ মাস ধরে চলা মৌসুমে বিভিন্ন জেলা থেকে শ্রমিকরা পরিবারসহ বরগুনার কাজ করতে আসেন। স্থানীয় শ্রমিকদের সঙ্গে শুঁটকি উৎপাদনের কাজ করেন তারা। এ সময় দূর থেকে আসা শ্রমিকদের অস্থায়ী ছোট-ছোট ঘর তৈরি করে থাকতে হয় শুঁটকি পল্লিতে। প্রতিটি শুঁটকি পল্লি থেকে প্রতি সপ্তাহে ১০০-১৫০ মণ শুঁটকি দেশের বিভিন্ন জেলায় পাঠানো হয়।

বিজ্ঞাপন

তবে থাকা-খাওয়াসহ পল্লিতে পয়ঃনিষ্কাশনের ভালো ব্যবস্থা না থাকায় নানান সমস্যায় পড়তে হচ্ছে এখানকার শ্রমিকদের। বিশেষ করে স্থায়ী কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় বেশি বিপাকে পড়েছেন নারী শ্রমিকরা। প্রতিবছর নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত চলা শুঁটকি মৌসুমে বিভিন্ন চরে অস্থায়ী ঘর নির্মাণ করে বসবাস করেন শ্রমিকরা। এখানে কর্মসংস্থান হয় সারাদেশে থেকে আসা শ্রমিকসহ স্থানীয় কয়েক হাজার নারী-পুরুষের। তবে বিভিন্ন অবকাঠামোগত সমস্যার কারণে বাধার মুখে পল্লির সম্ভাবনা। অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার কারষে বেড়ে যায় শুঁটকির উৎপাদন খরচ।

বরগুনা জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. মহসীন বলেন, ‘আমি শুঁটকি পল্লি পরিদর্শন করেছি। এখানকার শুঁটকিতে কোনো প্রকার কীটনাশক বা অতিরিক্ত লবণ দেওয়া হয় না। ফলে বরগুনার শুঁটকির চাহিদা বেশি। শুঁটকি তৈরির জন্য নদী থেকে প্রথমে কাঁচা মাছ পল্লিতে নিয়ে হয়। এর পর নারী শ্রমিকরা তা পরিষ্কার করেন। পুঁটি, শোল, ট্যাংরা, খলিশা, পাবদা, কই, শিং, মাগুর, মেনি, বৈরাগী, ফলিসহ প্রায় ২৫ প্রজাতির মাছ সংগ্রহের পর শুঁটকি তৈরির কাজ শুরু হয়। মাছগুলো পানিতে ধুয়ে বানায় (মাচা) শুকানো হয়। তিন-চার দিনের রোদে মাছগুলো শুকিয়ে শক্ত হয়। এভাবেই তৈরি হয়ে যায় শুঁটকি।’

বিজ্ঞাপন

তিনি বলেন, ‘এখানকার সমস্যাগুলো সমাধানে আমরা কাজ করব। এজন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে।’

এদিকে ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এ চরের শুঁটকি চট্টগ্রাম, সৈয়দপুর, খুলনা, জামালপুরসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি হচ্ছে। বর্তমানে প্রতিকেজি ছুরি মাছের শুঁটকি ৮০০-৯০০ টাকা, রূপচাঁদা ১২০০-১৫০০ টাকা, মাইট্যা (সরমা) ৯০০-১০০০ টাকা, লইট্টা ৬৫০-৭০০, চিংড়ি ৭৫০-৯০০ টাকা এবং অন্যান্য ছোট মাছের শুঁটকি ৪০০-৫৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

শুঁটকি শ্রমিকরা বলেন, আমরা নারী-পুরুষ এখানে সমানভাবে কাজ করলেও নারীদের জন্য বিশেষ প্রয়োজনে কোনো টয়লেটের ব্যবস্থা নেই। পুরুষরা যেকোনো জায়গায় যেতে পারে, কিন্তু নারীরা তা পারে না। টিউবওয়েলসহ এখানে যদি স্থায়ীভাবে টয়লেট নির্মাণ করে দেওয়া হয়, তাহলে আমাদের জন্য সুবিধা হয়।

তালতলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার উম্মে সালমা বলেন, ‘শুঁটকি পল্লিতে কর্মরত নারীদের জন্য ফ্রি মেডিকেল সেবার ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাবলিক টয়লেট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সুপেয় পানির ব্যবস্থা করতে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের মাধ্যমে টিউবওয়েল স্থাপনও করা হবে। এছাড়া রাস্তাঘাটের উন্নয়নের বিষয়টিও দেখা হচ্ছে।’

সারাবাংলা/পিটিএম

উদ্যোগ বরগুনা শুঁটকি পল্লি স্বাস্থ্য-স্যানিটেশন উন্নয়ন