আলজাজিরার প্রতিবেদন
বাংলাদেশিদের ভিসা কমানোয় ভারতের হাসপাতালে হাহাকার!
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ১৯:৫১ | আপডেট: ৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২১:৩৮
ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশি রোগীর সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে। বাংলাদেশিদের ভিসা দেওয়ার পরিমাণ কমিয়ে দেওয়ার ফলে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে, যা ভারতের স্বাস্থ্য খাতে বড়ধরনের সংকট সৃষ্টি করছে।
শনিবার (৪ জানুয়ারি) কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ভারতের বিভিন্ন হাসপাতালের নিয়মিত রোগীদের মধ্যে প্রায় ২০ লাখ বিদেশি রোগী থাকেন, যার মধ্যে ৬০ শতাংশই বাংলাদেশি। তবে গত বছরের আগস্ট মাসের পর থেকে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা প্রায় ৮০ শতাংশ কমে গেছে। ভিসা কমানোয় বিদেশি রোগীদের সংখ্যা প্রায় অর্ধেকে নেমে গেছে।
এদিকে, ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া বিদেশি রোগীরা শুধু হাসপাতালগুলোতেই নয়, দেশটির অর্থনীতিতেও বড় রকমের সুবিধা এনে দেয়। ২০২৩ সালে ভারতীয় ‘মেডিকেল ট্যুরিজম’ খাত থেকে ৯০০ কোটি মার্কিন ডলার বা ৭৭ হাজার ১৮৯ কোটি রুপি আয় হয়েছে। এই আয়ে বাংলাদেশি রোগীদের বড় অবদান ছিল। তবে বর্তমানে তাদের সংখ্যা কমে যাওয়ায় ভারতের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতে বিরূপ প্রভাব পড়েছে।
বাংলাদেশে ভারতীয় ভিসা কেন্দ্রের এক কর্মকর্তার বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের আগে বাংলাদেশে ভারতের পাঁচটি ভিসা কেন্দ্রে প্রতিদিন প্রায় ৭ হাজার অনলাইন ভিসা স্লট দেওয়া হতো। তবে ৫ আগস্টের পর বর্তমানে এই সংখ্যা মাত্র ৫০০-তে নেমে এসেছে।
ফলে চিকিৎসার জন্য ভারতে যাওয়া বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা কমে গেছে এবং কলকাতার হাসপাতালগুলো সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কলকাতার মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল পিয়ারলেসে আগে দিনে ১৫০ জন বাংলাদেশি রোগী চিকিৎসা নিতেন, এখন তা কমে ৩০ জনের নিচে নেমে গেছে।
ভারতের বিভিন্ন বড় হাসপাতালও এই ভিসা প্রতিবন্ধকতার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। প্রতিবেদনে ভারতের স্বাস্থ্যসেবা অ্যাসোসিয়েশনের আলেকজান্ডার থমাস জানান, বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হেলথ, চেন্নাইয়ের অ্যাপোলো হাসপাতাল এবং ভেলোরের ক্রিশ্চিয়ান মেডিকেল কলেজ (সিএমসি) এর মধ্যে রয়েছে। এই হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ায় স্বাস্থ্যসেবায় বড় ধরনের প্রভাব পড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি এই ভিসা সংকট অব্যাহত থাকে, তাহলে ভারতীয় স্বাস্থ্য খাতে আরও বড়ধরনের সংকট দেখা দিতে পারে। বাংলাদেশি রোগীদের সংখ্যা কমে যাওয়ার পাশাপাশি, চিকিৎসা খাতে বিনিয়োগও কমতে পারে, যা ভারতের অর্থনীতি ও স্বাস্থ্য খাতের জন্য এক বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে উপস্থিত হবে।
ভারতীয় হাসপাতালগুলোতে বাংলাদেশি রোগীর সংখ্যা কমে যাওয়ার এই পরিস্থিতি শিগগিরই বদলানোর সম্ভাবনা নেই বলে ধারণা করা হচ্ছে। এটি ভারতের চিকিৎসা খাতে বড়ধরনের অস্থিরতা সৃষ্টি করবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
সারাবাংলা/পিটিএম