আমরা গণতন্ত্রের কথা বললেও চর্চা করি না: মির্জা ফখরুল

দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে সুবর্ণজয়ন্তীতে প্রধান অথিতি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর

দিনাজপুর: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, আমরা গণতন্ত্রের কথা বললেও গণতন্ত্রকে চর্চা করি না। এদেশে বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠতে দেওয়া হয়নি। রাজনৈতিক দলগুলো পরস্পরের সঙ্গে বিরোধে লিপ্ত হয়েছি। কিন্তু সহনশীলতার মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে চর্চা করে যদি এগিয়ে যেতে পারি তাহলে আমরা গণতন্ত্রকে লাভ করতে পারব। অধিকারকে অর্জন করতে পারব।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) দিনাজপুর সরকারি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষ্যে ‘সুবর্ণজয়ন্তী ও গুণীজন সম্মাননা’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি আরও বলেন, ‘গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হলেও আমাদের ঐক্যের যুদ্ধে ব্যর্থতা রয়েছে। সকলকে সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠে একটি সত্য, সুন্দর, সুখী, সমৃদ্ধ, প্রেমময় বাংলাদেশ নির্মাণ করতে হবে বলে।’

মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমাদের ব্যর্থতা, আমরা ৫২-৫৩ বছরেও সুখী, শান্তিময়, প্রেমময়, ভালোবাসাময় এক দেশ গড়তে পারলাম না। আমরা রাজনীতি নিয়ে সংকীর্ণতায় ভুগি, নৈতিকতার সর্বনিম্ন পর্যায়ে চলে গেছি। আমাদের গর্ব করে বলার কথা, আমরা জাতি হিসেবে অত্যন্ত গর্বিত এক জাতি। কিন্তু কিছুদিন আগেও আমরা বলতে পারিনি সেই জাতি আমরা হয়েছি। এখন আবার সেই আশা জেগে ওঠেছে আমাদের মাঝে। আমরা ফের একটি স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছি। সেই স্বপ্নটি হচ্ছে যে সত্যিকার অর্থেই আমাদের স্বাধীনতার ঘোষক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সাহেব যে স্বপ্ন দেখেছিলেন। একটি সুখী, সুন্দর, সমৃদ্ধ, প্রেমময় গণতান্ত্রিক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন। সেই বাংলাদেশকে নির্মাণ করার আমরা চেষ্টা করেছি।’

তিনি বলেন, ‘আমরা ৭১ সালে যুদ্ধে ছিলাম, এরপরে গণতান্ত্রিক যুদ্ধেও ছিলাম। আজকে সেই গণতান্ত্রিক যুদ্ধ শেষ হয়েছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা ঐক্যের যে যুদ্ধ, সকলে মিলে একসঙ্গে দেশটাকে যে গঠন করব, নির্মাণ করব, একটা পথরেখা দেখাব সেই জায়গায় আমাদের ব্যর্থতা আছে। সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের ছেলেরা জীবন দিয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরাও জীবন দিয়েছে। আমাদের রাজনৈতিক কর্মীরা দীর্ঘদিন অস্বাভাবিক, অমানবিক নির্যাতন সহ্য করেছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘৭০০-৮০০ রাজনৈতিক নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। ৬০ লাখের অধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে বিনা বিচারে হত্যা করা হয়েছে। এই একটা অবস্থা আমরা পার করেছি। নতুন সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কিন্তু কেন জানি না আমরা সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে ওঠতে পারছি না। আমি সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আবেদন জানাবো, আমরা ওঠে দাড়াই। আমরা আমাদের এই সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে দাঁড়াই। দাঁড়িয়ে আমরা একটা সুষ্পষ্ট, সত্য, সুন্দর একটা পথ নির্ধারণ করি। যেটা স্বপ্ন আমরা দেখেছিলাম সেই স্বপ্নকে আমরা বাস্তবায়িত করি।’

শিক্ষার্থীদের নিয়ে তিনি বলেন, ‘গত রাতে একটা টেলিভিশন চ্যানেলে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তরুণ শিক্ষার্থীদের মতামত নিচ্ছে দেশ সম্পর্কে, নতুন বাংলাদেশ নির্মাণ সম্পর্কে। দেখলাম এত অমৃত সম্ভাবনাময় ছেলেরা-মেয়েরা অত্যন্ত দেশপ্রেম নিয়ে পরিবর্তণের কথা বলছে। অনেকে আমাকে অভিভূত করেছে। তারা সত্যিকার অর্থেই একটা বাংলাদেশ নির্মাণ করার পথ তারা দেখাতে পারে। শুধু নেতিবাচক চিন্তা করলে হবে না। আমাদের পরস্পরকে সহনশীলতার মধ্য দিয়ে আনতে হবে। সম্মান করতে হবে। আমি যেই রাজনৈতিক চিন্তাই করি না কেন। দেশপ্রেম যদি থাকে, দেশের প্রতি ভালোবাসা যদি থাকে তা নিশ্চয় আমার আজকে যে সুযোগ এসেছে সেই সুযোগের সৎ ব্যবহার আমরা যেন করতে পারি।’

তিনি বলেন, ‘১৫ বছর গেছে আমরা ভোট দিতে পারিনি। এ কেমন গণতন্ত্রের কথা, এ কেমন স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের কথা যেখানে মানুষ ভোট দেওয়ার সুযোগ হারিয়েছে। গত ১৫ বছরে আমাদের দেশের সমস্ত সম্পদকে লুন্ঠন করে বিদেশে পাচার করে দেওয়া হয়েছে। প্রতি বছর ১৬ বিলিয়ন ডলার করে ১৫ বছরে ২৮০ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাচার হয়েছে। ফ্যাসিবাদী নির্বাচন করে, নির্বাচনে জয়লাভ করে, তারপরে সমস্ত ক্ষমতা দখল করে নিয়ে, রাষ্ট্রকে দখল করে নিয়ে সে তার ক্ষমতাকে নিরুঙ্কুশ করতে চায়। দেশে একটি ভয়-ভীতি সৃষ্টি করে যেন কেউ কোনো কথা বলতে না পারে। আল্লাহর অশেষ রহমতে আমরা সেই জায়গা থেকে বেরিয়ে এসেছি। একটা সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে যে বাংলাদেশকে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে পরিণত করার।’

অনুষ্ঠানটিতে অর্থনীতি বিভাগের প্রধান জাহেদা পারভীনের সভাপতিত্বে কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর একেএম আল আব্দুল্লাহ, জেলা বিএনপির সভাপতি অ্যাড. মোফাজ্জল হোসেন দুলালসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সারাবাংলা/এইচআই

দিনাজপুর বিএনপি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর