Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চিকিৎসক-কর্মী সংকটে খুলনার ৯ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, মিলছে না সেবা

রেজাউল ইসলাম তুরান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:৪১

খুলনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ব্যহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। ছবি: সারাবাংলা

খুলনা: চিকিৎসক ও জনবল সংকটে খুলনা জেলার ৯ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে চিকিৎসা সেবা। চিকিৎসা নিতে গিয়ে ফিরে যেতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে। বাধ্য হয়ে তাদের যেতে হচ্ছে শহরে কিংবা বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রে। তাতে বাড়ছে খরচ, পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

খুলনা শহর থেকে প্রায় ২০ কিলোমিটার দূরে রূপসা উপজেলার কাজদিয়া এলাকায় অবস্থিত ৫০ শয্যা রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। পর্যাপ্ত জনবল না থাকার কারণে স্বাস্থ্য সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে উপজেলার লাখো মানুষ। অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট থাকায় দুই মাস ধরে রোগীদের হাসপাতালে যাতায়াতের সেবাও বন্ধ। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাওয়া যায় না বিশুদ্ধ পানি। দীর্ঘদিন ধরে এক্স-রে মেশিনটিও অকেজো হয়ে পড়ে আছে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২৮ জন চিকিৎসকের জায়গায় বর্তমানে ১৬ জন চিকিৎসক কাজ করছেন এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। বাকি ১২টি পদ শূন্য পড়ে রয়েছে। এ ছাড়াও দ্বিতীয় শ্রেণির নার্স পদেও ৩৬টি পদের মধ্যে তিনটি পদ শূন্য। এ ছাড়া তৃতীয় শ্রেণির ৯৭টি পদের মধ্যে রয়েছেন ৬৪ জন, বাকি ৩৩টি পদে কোনো লোকবল নেই। সবচেয়ে করুণ অবস্থা চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীদের। তাদের ১৯টি পদের মধ্যে হাসপাতালে কর্মরত মাত্র চারজন।

একই অবস্থা তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও। এখানকার মোট ১৭৪টি পদের মধ্যে প্রথম শ্রেণির ১৮টি পদসহ দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি মিলিয়ে মোট শূন্য পদের সংখ্যা ৮০টি। সে হিসাবে হাসপাতালটিতে প্রায় অর্ধেক পদেই লোকবল নেই। এই হাসপাতালেও অ্যাম্বুলেন্স নষ্ট দুই মাস ধরে।

বিজ্ঞাপন

হাসপাতালে রয়েছে অ্যাম্বুলেন্স সংকট। ছবি: সারাবাংলা

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ২০১৫ সালের ৩ মার্চ ৩১ শয্যার হাসপাতালটি ৫০ শয্যায় উন্নীত করা হয়। কিন্তু সে শুধু কাজগে-কলমেই। নতুন কাঠামো অনুযায়ী জনবল নিয়োগ না দেওয়ায় হাসপাতালে সেবার মান বাড়েনি।

এই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জুনিয়র কনসালট্যান্ট (সার্জারি), পেডিয়াট্রিক, নাক-কান-গলা, অর্থোপেডিক, সার্জারি, কার্ডিওলজি, অপথ্যালমোলজিসহ গুরুত্বপূর্ণ ৯টি চিকিৎসকের পদ দীর্ঘদিন ধরে শূন্য। সব মিলিয়ে চিকিৎসকের ২৪টি পদের মধ্যে শূন্য পদই ১৭টি। হাসপাতালে মোট কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা ১৯৪ জন। এর বিপরীতে রয়েছেন ১০১ জন, শূন্য পড়ে রয়েছে ৯৩টি পদ। দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে এক্সরে, আল্টাসনোগ্রাফির কার্যক্রম। চালক না থাকায় অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাচ্ছে না সাধারণ মানুষ।

দাকোপ উপজেলায় স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সটি দাকোপ উপজেলায় হলেও ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আশপাশের রামপাল, বটিয়াঘাটা, পাইকগাছা ও কয়রা উপজেলার রোগীরাও সড়ক ও নৌ পথে এখানে স্বাস্থ্য সেবা নিতে চলে আসেন। কিন্তু রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। কেবল জনবল সংকটের কারণে কাঙ্ক্ষিত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছের সেবাগ্রহীতারা।

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালটিতে ৩১ জন চিকিৎসকের জায়গায় মাত্র ১২ জন চিকিৎসক কাজ করছেন, বাকি ১৯টি পদই শূন্য। দ্বিতীয় শ্রেণির নার্সদের পদ ফাঁকা নেই। তবে তৃতীয় শ্রেণির ১১৭টি পদের মধ্যে ৩৬টি পদ খালি। চতুর্থ শ্রেণির ২৬টি পদের মধ্যে খালি পদের সংখ্যাই ২১টি।

রোগীর চাপে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসকরা। ছবি: সারাবাংলা

জনবল ও চিকিৎসক সংকটে ভুগছে ফুলতলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সও। চিকিৎসকের ২৫টি পদের বিপরীতে কর্মরত ১৫ জন, বাকি ১০টি পদ শূন্য। ফাঁকা রয়েছে দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির অনেক পদও।

এই স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩০০ এমএলের একটি এক্সরে মেশিন থাকলে তা দীর্ঘদিন ধরে অকেজো। বর্তমান কাজ চলছে মাত্র একটি ২০ এমএল এক্সরে মেশিন দিয়ে। এ ছাড়া জেলার কয়রা, ডুমুরিয়া, দিঘলিয়া ও বটিয়াঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও রয়েছে জনবল ও চিকিৎসক সংকট।

রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসা জাফর শেখ বলেন, ‘পায়ে প্রচুর আঘাত লেগেছে। হাসপাতালে এসেছিলাম এক্সরে করতে। এসে শুনি দীর্ঘদিন ধরে নাকি এক্সরে মেশিন অকেজো। এখন শহরে যেতে হচ্ছে এক্সরে করাতে।’

পাইকগাছা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চিকিৎসা নিতে আসা আলাউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। অসুস্থ হলে একটু ভালো সেবা পাওয়ার আশায় হাসপাতালে আসি। এসে শুনি, ডাক্তার নাই, যন্ত্রপাতি সংকটের কারণে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ এসব বিষয়ে নজর না দিলে আমরা কার কাছে যাব সেবা নিতে?’

চিকিৎসক সংকটে খুলনা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে জনদুর্ভোগ। ছবি: সারাবাংলা

জানতে চাইলে দাকোপ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সুদীপ বালা সারাবাংলাকে বলেন, ‘জনবলের সংকট না থাকলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেই সর্বোচ্চ মানের চিকিৎসাসেবা দেওয়া সম্ভব। আমাদের সব চিকিৎসক যথেষ্ট আন্তরিকতা নিয়ে সেবা দেওয়ার চেষ্টা করেন। শূন্য পদসহ নানা সমস্যার বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। তারা ব্যবস্থা নিলে আমরা সেবা দিতে পারব।’

রূপসা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মাজেদুল ইসলাম কাউছার সারাবাংলাকে বলেন, ‘আমি কয়েক দিন আগে এখানে যোগ দিয়েছি। হাসপাতালে চিকিৎসক, তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির জনবল সংকট রয়েছে। সীমিত জনবল দিয়ে চিকিৎসা নিতে আসা রোগীদের যথাসাধ্য সেবা দেওয়ার চেষ্টা করছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘হাসপাতালে মোট ২২ জন আউটসোর্সিং কর্মী রয়েছে। তারা প্রায় ১৮ মাস বেতন পান না। যে কারণে সবাই ঠিকমতো কাজে আসছেন না। যেকোনো দিন বাকিরাও আসা বন্ধ করে দিতে পারেন।’

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে খুলনার সিভিল সার্জন ডা. শেখ সফিকুল ইসলামও উপজলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোর নানা সীমাবদ্ধতার কথা স্বীকার করে নিলেন। তিনি সারাবাংলাকে বলেন, ‘জেলার ৯টি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসক ও নার্সসহ অন্যান্য জনবলের সংকট রয়েছে। আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি। আশা করি দ্রুত তারা সংকট নিরসনে ব্যবস্থা নেবেন।’

সারাবাংলা/এমপি/টিআর

উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স খুলনা চিকিৎসক সংকট জনবল সংকট

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর