Monday 06 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

‘প্রজন্মকে স্মরণে রাখতেই ওয়াসিমের নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৫:০৯ | আপডেট: ৩ জানুয়ারি ২০২৫ ১৭:১৮

আদিলুর রহমান খান।

চট্টগ্রাম ব্যুরো: জুলাই অভ্যুত্থানে শহিদের স্মৃতি পরবর্তী প্রজন্মের জন্য স্মরণে রাখতে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নাম ওয়াসিম আকরামের নামে করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান।

শুক্রবার (৩ জানুয়ারি) সকালে চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল আদায় কার্যক্রম উদ্বোধনের পর সাংবাদিকদের এ কথা বলেন উপদেষ্টা।

চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে সাবেক মেয়র প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নামে নামকরণ করেছিলেন বিগত আওয়ামী লীগ সরকার। সেটি এখন জুলাই অভ্যুত্থানে চট্টগ্রামে প্রথম শহিদ ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম আকরামের নামে করা হয়েছে।

নতুন নামকরণ প্রসঙ্গে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘চট্টগ্রামে জুলাই গণঅভুত্থানে প্রথম শাহাদাত বরণ করেছিলেন যিনি, সেই ওয়াসিম আকরামের নামে এই উড়াল সেতু। আমরা সারাদেশে যারা এই জুলাই অভুত্থানে শাহাদাত বরণ করেছেন তাদের জন্য বিভিন্ন জায়গায় স্মৃতিচিহ্ন তৈরি করছি, যেন সারাদেশের মানুষ এবং আগামী প্রজন্ম তাদের অবদানের কথা স্মরণ করতে পারে।’

‘এই লক্ষ্যেই আজ আসা। চট্টগ্রামের মানুষ যে সংগ্রামে শামিল হয়েছেন আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের যেন পরবর্তী প্রজন্ম সবসময় স্মরণ করতে পারে সেজন্য আমরা আমাদের উদ্যোগ চালিয়ে যাব।’

এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল করিম, বোর্ড সদস্য জাহিদুল করিম কচি এবং সিডিএর প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস উপস্থিত ছিলেন।

বিজ্ঞাপন

ফলক উন্মোচন করে উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানের উদ্বোধনের মধ্যে চট্টগ্রামে নির্মিত প্রথম এই এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল আদায় কার্যক্রমের সূচনা হয়েছে। এক্সপ্রেসওয়েতে প্রথম টোল দিয়েছেন সিটি মেয়র শাহাদাত হোসেন। এরপর সিডিএ চেয়ারম্যান মো. নুরুল করিমও টোল দিয়ে পার হন।

সিডিএ’র সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে মোটর সাইকেল ও ট্রেইলার ব্যতীত মোট ১০ ধরনের গাড়ি চলাচল করতে পারবে। এর মধ্যে প্রাইভেট কারকে ৮০ টাকা, মাইক্রোবাস ১০০ টাকা, পিকআপ ১৫০ টাকা, মিনিবাস ২০০ টাকা, বাস ২৮০ টাকা, চার চাকার ট্রাক ২০০ টাকা, ছয় চাকার ট্রাক ৩০০ টাকা, কভার্ড ভ্যানকে চলাচলের জন্য ৪৫০ টাকা টোল দিতে হবে।

উল্লেখ্য, চার হাজার ২৯৮ কোটি ৯৫ লাখ টাকা ব্যয়ে নগরীর পতেঙ্গা থেকে লালখান বাজার পর্যন্ত ১৬ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ৫৪ ফুট প্রশস্ত চার লেনের এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ করেছে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ)। গত বছরের নভেম্বরে এর উদ্বোধন হলেও যান চলাচলের জন্য তখন পুরোপুরি খুলে দেওয়া হয়নি। ২৪টি লুপ ও ১৪টি র‌্যাম্প নির্মাণের জন্য প্রকল্পের মেয়াদ ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। বর্ধিত সময়েও কাজ শেষ হয়নি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতা নেওয়ার পর ৫টি র‌্যাম্প আপাতত নির্মাণ না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

২০২৩ সালের ২৪ আগস্ট চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) ৪৫৮তম বোর্ড সভায় প্রস্তাব করা ‘মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরী সিডিএ এক্সপ্রেসওয়ে’ নামটি মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছিল। একই বছরের ১৪ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওই নামে এক্সপ্রেসওয়ে উদ্বোধন করেছিলেন।

বিজ্ঞাপন

সর্বশেষ গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে মহিউদ্দিনের নাম বাদ দিয়ে শহিদ ওয়াসিম আকরামের নামে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের নামকরণ করা হল।

ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম গত বছরের ১৬ জুলাই বিকেলে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিতে গিয়ে নগরীর মুরাদপুরে ছাত্রলীগ-যুবলীগের সন্ত্রাসীদের হামলায় নিহত হন। তিনি চট্টগ্রাম কলেজ শাখা ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন।

এদিকে শুক্রবার সকালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান নগরীর পাঁচলাইশে ‘জুলাই স্মৃতি উদ্যানের’ উদ্বোধন করেন। জাতিসংঘ পার্ক হিসেবে পরিচিত স্থানটির নামও মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে পরিবর্তন করা হয়েছে।

এসময় সিটি মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন, জেলা প্রশাসক ফরিদা খানমসহ গণপূর্ত বিভাগের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।

উদ্বোধনের পর পার্কটি সাধারণ মানুষের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

উল্লেখ্য, নগরীর পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় ১৯৬৪ সালে ২ দশমিক ১৭ একর জমিতে পার্কটি নির্মাণ করা হয়। তৎকালীন গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পার্কটি তৎকালীন চট্টগ্রাম মিউনিসিপ্যাল করপোরেশনের কাছে হস্তান্তর করেছিল। ২০০২ সালে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের এক প্রস্তাব অনুসারে এর নামকরণ করা হয় ‘জাতিসংঘ পার্ক’।

২০১২ চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন ওই পার্কে সুইমিং পুল নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করে। পার্কে নিয়মিত যাতায়াতকারী জনসাধারণ এতে বিরক্তি প্রকাশ করেন। গৃহায়ণ ও গণপূর্ত বিভাগও এর বিরোধিতা করে। এ নিয়ে টানাপড়েনে তখন থেকেই কার্যত পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে ছিল পার্কটি।

২০১৭ সালে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় পার্কটির উন্নয়নে ‘পাঁচলাইশ আবাসিক এলাকায় আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন জাতিসংঘ সবুজ উদ্যান উন্নয়ন’ নামে একটি প্রকল্প নেয়। প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয় ১১ কোটি ৭০ লাখ ১২ হাজার টাকা, পরবর্তীতে যা বেড়ে ১২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকল্পের কাজ শুরু হয়।

নতুন করে নির্মিত পার্কটিতে সবুজকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। এছাড়াও আছে দৃষ্টিনন্দন সীমানা প্রাচীর ও প্রবেশপথ। দীর্ঘ ওয়াকওয়ে, বসার সিট, শিশুদের জন্য খেলাধূলা এবং শরীরচর্চার জন্য বিভিন্ন সরঞ্জাম।

সারাবাংলা/আরডি/এমপি

আদিলুর রহমান খান গৃহায়ণ ও গণপূর্ত উপদেষ্টা চট্টগ্রাম এলিভেটেড এক্সপ্রেস ওয়ে জুলাই অভ্যুত্থান

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর