এইচআরএসএস’র প্রতিবেদন
২০২৪ সালে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত ১১৮০
৩১ ডিসেম্বর ২০২৪ ২২:২৪ | আপডেট: ১ জানুয়ারি ২০২৫ ১৬:১৪
ঢাকা: দেশে রাজনৈতিক সহিংসতায় ২০২৪ সালে কমপক্ষে ১ হাজার ১৮০ জন নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন ৩৭ হাজার ৫১ জন। এ ছাড়া, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর মাধ্যমে দেশে কমপক্ষে ১৫ হাজার ৫২০ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সমর্থক গ্রেফতারের শিকার হয়েছেন বলে দাবি করেছেন হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) নামে একটি মানবাধিকার সংগঠন।
বাংলাদেশের ১২টি জাতীয় গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং নিজেদের তদন্তের ভিত্তিতে সংগঠনটির মানবাধিকার পর্যবেক্ষণ প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে আসে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবের জহুর হোসাইন চৌধুরী হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংগঠনটি। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির নির্বাহী পরিচালক ইজাজুল ইসলাম, জয়েন্ট সেক্রেটারি অ্যাডভোকেট মনিরুজ্জামান, প্রজেক্ট অফিসার সাইফুল ইসলাম, ডকুমেন্টেশন অফিসার জবা ইয়াসমিন প্রমুখ।
এইচআরএসএস’র প্রতিবেদন বলছে, ২০২৪ সালে উদ্বেগজনকভাবে রাজনৈতিক সহিংসতায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১১৮০ জন ও আহত হয়েছেন ৩৭০৫১ জন। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১০১৩ জন নিহত ও আহত হয়েছেন কমপক্ষে ৩০ হাজার মানুষ। অন্যান্য রাজনৈতিক সহিংসতার অধিকাংশ ঘটনাই আওয়ামী লীগ-বিএনপির সংঘর্ষ ও তাদের অন্তর্কোন্দলীয় আধিপত্য বিস্তারকেন্দ্রিক সংঘর্ষে ঘটে। তাছাড়া আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর দ্বারা কমপক্ষে ১৫৫২০ রাজনৈতিক নেতাকর্মী ও সমর্থক গ্রেফতারের শিকার হয়। এদের মধ্যে অধিকাংশই বিএনপি-জামায়াত ও আওয়ামী লীগের।
এইচআরএসএস প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, একই সময়ে, রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে কমপক্ষে ১৩৮৩টি মামলায় অন্তত ৬৬ হাজার জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও কমপক্ষে ৬ লাখ ৬০ হাজার জনকে অজ্ঞাত আসামি হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এছাড়া আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও আওয়ামী লীগ সরকারের দলীয় নেতাকর্মীদের দ্বারা বিরোধীদলীয় কমপক্ষে ৭০৪টি সভা-সমাবেশ আয়োজনে বাধা দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এ সময় তাদের সঙ্গে সংঘর্ষে কমপক্ষে ৩০ হাজার জন আহত এবং সমাবেশকেন্দ্রিক অন্তত ছয় হাজার জনকে গ্রেফতার করা হয়।
সাংবাদিক ও সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, এ বছর কমপক্ষে ৩০৮টি হামলার ঘটনায় ৭২৬ সাংবাদিক হত্যা, নির্যাতন ও হয়রানির শিকার হয়েছেন। ১০ জন সাংবাদিক নিহত হয়েছেন এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৪৫৯ জন, লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন ৫৯ জন, হুমকির শিকার হয়েছেন ৪৫ জন, গ্রেফতার ১৯ জন ও ১৩৪ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনকেন্দ্রিক ঘটনায় পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে কমপক্ষে ২৭০ সাংবাদিক আহত, হুমকি, গ্রেফতার ও লাঞ্ছনার শিকার হয়েছেন এবং নিহত হয়েছেন ৬ জন।
একই সময়ে আশঙ্কাজনকভাবে, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এর অধীনে দায়ের করা ৩২টি মামলায় গ্রেফতার হয়েছেন ২১ জন এবং অভিযুক্ত করা হয়েছে ৭৯ জন। এছাড়া ‘সংখ্যালঘু’ সম্প্রদায়ের উপর কমপক্ষে ১১২টি হামলার ঘটনায় ৫ জন নিহত, আহত হয়েছেন ৮৩ জন এবং ২৮টি মন্দির, ৩১টি প্রতিমা ও ২৮৪টি বসতবাড়ি, ২৪০টি দোকান ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, এ বছর ‘গণপিটুনির’ অন্তত ২০১টি ঘটনায় নিহত হয়েছেন কমপক্ষে ১৭৩ জন এবং আহত হয়েছেন ৮৮ জন। এ সময়ে অন্তত ৬০৯টি শ্রমিক নির্যাতনের ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর গুলিতে কমপক্ষে ২৪০ জনসহ নিহত হয়েছেন ৪৩৯ জন এবং আহত হয়েছেন ৫৯৫ জন। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ এবং শ্রমিকদের সুরক্ষামূলক সরঞ্জামের অভাবে দুর্ঘটনায় ১৬৮ শ্রমিক তাদের কর্মক্ষেত্রে মারা গেছেন। এ সময়ে ১৩টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনায় ৯ জন নিহত ও ৪ জন আহত হয়েছেন।
এছাড়াও ‘ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী’ (বিএসএফ) কর্তৃক ৫৭টি হামলার ঘটনায় ২৬ বাংলাদেশি নিহত এবং ২৫ জন আহত, গুলিবিদ্ধ ৪৭ ও ১৫৮ জন গ্রেফতার হয়েছেন। এ সময়ে ভারতীয় সীমান্তে আরও ৯ বাংলাদেশির লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও ‘মিয়ানমার সীমান্তরক্ষী বাহিনী’ (বিজিপি) ও আরাকান আর্মি কর্তৃক ১৭টি হামলার ঘটনায় ৬ বাংলাদেশি নিহত এবং ২৫ জন আহত, গুলিবিদ্ধ ১৩ ও ৭৪ জন গ্রেফতার হয়েছেন।
প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ২০২৪ সালে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দ্বারা/হেফাজতে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের কমপক্ষে ২৫টি ঘটনার শিকার হয়েছেন ২৫ জন। যাদের মধ্যে একজন তথাকথিত ক্রসফায়ার/বন্দুকযুদ্ধের নামে, ১৩ জন নির্যাতনে এবং ১০ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছেন। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে থাকা অবস্থায় একজন মারা গিয়েছেন। গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের সাথে সম্পৃক্ত শুধু পুলিশের হামলায় ৫১০ (৭৬ শতাংশ) জন, অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে ৬৩ (৯ শতাংশ) জন নিহত হয়েছেন। পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে নিহতের সংখ্যা ৮৫ শতাংশের বেশি। এছাড়াও কারা হেফাজতে ১০১ জন মারা গেছেন। যাদের মধ্যে ৪১ জন কয়েদি ও ৬০ জন হাজতি।
নারী ও শিশু নির্যাতনের বিষয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৪ সালে ১৪৯৮ জন নারী ও কন্যা শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ৫৫৭ জন, যাদের মধ্যে আশঙ্কাজনকভাবে ২৮৪ জন (৫১ শতাংশ) কম বয়সী শিশু। এটা অত্যন্ত উদ্বেগের বিষয় যে, ১৩০ জন (২৩ শতাংশ) নারী ও শিশু গণধর্ষণের শিকার হয়েছেন এবং ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ৪০ জনকে যাদের মধ্যে শিশু ২২ জন এবং ১১ জন ধর্ষণের শিকার নারী আত্মহত্যা করেছেন। ৩২২ নারী ও শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছেন, এর মধ্যে শিশু ১৩০ জন।
যৌতুকের জন্য নির্যাতনের ঘটনায় নিহত হয়েছেন ৪৮ নারী এবং শারীরিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন ৩২ জন ও আত্মহত্যা করেছেন ছয় জন। পারিবারিক সহিংসতার শিকার হয়ে নিহত হয়েছেন ৩১৯ জন, আহত হয়েছেন ৭৪ জন এবং আত্মহত্যা করেছেন ১২৭ নারী। অ্যাসিড সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১৩ নারী। অন্যদিকে, এটি উদ্বেগজনক যে, এ বছর কমপক্ষে ৪৩০০ শিশু নির্যাতনের শিকার হয়েছেন, যাদের মধ্যে ৬৬২ জন প্রাণ হারিয়েছেন এবং ৩৭১৪ জন শিশু শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। জুলাই-আগস্টের আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ১৩৬ শিশু নিহত ও কমপক্ষে ৩০০০ জন আহত হয়েছেন।
সারাবাংলা/ইউজে/পিটিএম
২০২৪ সাল এইচআরএসএস’র প্রতিবেদন টপ নিউজ নিহত ১১৮০ রাজনৈতিক সহিংসতা