আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মুরাদকে নেওয়া হলো থাইল্যান্ডে
২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৫:৫৭ | আপডেট: ২০ নভেম্বর ২০২৪ ১৯:০৪
ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ মুরাদ ইসলামকে উন্নত চিকিৎসার জন্য থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপতালে পাঠানো হয়েছে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে তাকে নিয়ে ব্যাংককের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইট।
বিমানবন্দরে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. মো. আবু জাফর ও নাগরিক কমিটির নেতা ডা. আহাদ তাকে বিদায় জানান।
ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্সেস ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, গলায় গুলিবিদ্ধ মুরাদের হাত ও পা সচল করতে রোবোটিক ফিজিওথেরাপি প্রয়োজন। কিন্তু দেশে রোবোটিক ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা না থাকায় তাকে থাইল্যান্ডে পাঠানো হচ্ছে।
মুরাদের স্ত্রী রানী ইসলাম বলেন, রাজধানীর গুলশানের একটি ক্যাফের ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন তার স্বামী। গত ১৮ জুলাই অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে রাত ৯টার দিকে মিরপুরের সেনপাড়ায় পানির ট্যাংক এলাকায় পৌঁছলে পুলিশের গুলিতে তিনিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ওই সময় ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মুরাদ। গুলি তার গলার ডান পাশে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। শুরুতে তাকে স্থানীয় আল হেলাল হাসপাতালে ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়।
তিনি বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চারদিক থেকে গুলিবিদ্ধ রোগী আসায় চিকিৎসা পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পরে ভাস্কুলার সমস্যার কথা বলে হৃদরোগে পাঠানো হয়। সেখান থেকে নিউরোসায়েন্স হাসপাতালে। তিন মাস ধরে মুরাদ এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
তিনি আরও বলেন, আইসিইউতে মুরাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে খালি কান্না করে। ছেলেকে নিয়ে খুব আশা ছিল ওর। ছেলের জন্য কান্না করতে করতে মুরাদ বলেন, আমার খুব ইচ্ছে ছিল ছেলেকে বড় হাফেজ করার। এখন আমার তো উপার্জন নাই। এখন কীভাবে ছেলেকে হাফেজ করব? সুস্থ হলেও তো কিছু একটা করে খেতে পারতাম।
আর্থিক অনটনের কথা জানিয়ে রানী ইসলাম বলেন, তিন মাস ধরে তো মুরাদের ইনকাম নেই। মুরাদের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা করেছেন তাতে তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
মুরাদের বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, ছেলের অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন ছিল যে চিকিৎসক মৃত্যুর সংবাদ শুনতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। এখন কিছুটা উন্নতি হলেও গলা থেকে পুরো শরীর অবশ। হাত, পা ও শরীরের কোনও অংশই সক্রিয় নয়। এজন্য রোবট থেরাপি দরকার, যা বাংলাদেশে নেই।
এর আগে আরও পাঁচজনকে চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে পাঠিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম জানিয়েছেন, বিদেশে শুধুমাত্র তাদেরই পাঠানো হবে, যাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়।
তিনি বলেন, ‘আমার প্রধান কাজ হচ্ছে আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করা। এজন্য বিদেশ থেকে অনেকগুলো মেডিকেল টিম এনেছি। ইতোমধ্যে ৫ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আরও কয়েকজনকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে তাদেরকেই বিদেশে পাঠানো হবে যাদের চিকিৎসা দেশে সম্ভব নয়।’
সারাবাংলা/এসবি/এসআর