Sunday 05 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

চুরির অপবাদে নির্যাতন, ক্ষত স্থানে ছিটানো হয় মরিচ-লবণ

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
১ নভেম্বর ২০২৪ ২০:০৭ | আপডেট: ২ নভেম্বর ২০২৪ ০১:২৩

গাজীপুর: জেলার শ্রীপুর দুই যুবককে গাছের সঙ্গে বেঁধে নির্যাতন করা হয়েছে। চুরির অভিযোগ তুলে দিনভর পিটিয়ে ক্ষত স্থানে দেওয়া হয়েছে লবণ-মরিচের গুঁড়া।

গত দুইদিন ধরে নির্যাতনে ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। ২ মিনিট ১৪ সেকেন্ডের ভিডিওয়ের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত দুই যুবকের আর্তনাদ শোনা যায়। এ সময় তাদের রক্ষা করতে কাউকে এগিয়ে আসতে দেখা যায়নি।

এর আগে মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) শ্রীপুরে আবদার গ্রামে অটোরিকশা চুরির অপবাদ দিয়ে দুই যুবককে এমন নির্যাতন করা হয়। ফের মারধরের আশঙ্কায় আহত দুই যুবক পুলিশে অভিযোগ করতে সাহস পাননি।

নির্যাতনের শিকার যুবকরা হলেন- উপজেলার আবদার গ্রামের আছিম উদ্দিনের ছেলে মো. আলমগীর হোসেন (২৪) ও ফেনী জেলার সোনাগাজীর ভাতাদিয়া গ্রামের জয়নাল আবেদীনের ছেলে মাইনুদ্দিন সোহেল (২৬)।

অভিযুক্তরা হলেন আবদার গ্রামের বাসিন্দা ফাইজুদ্দিন ও তার স্ত্রী লিমা।

স্থানীয়রা জানান, শুক্রবার (২৫ অক্টোবর) ফাইজুদ্দিনের মালিকানাধীন অটোরিকশা চালককে নেশা জাতীয় খাবার খাইয়ে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। ফাইজুদ্দিন ও তার চালক মঙ্গলবার ভোরে কারখানার সামনে থেকে চুরির অভিযোগে আলমগীর ও সোহেলকে আটক করে আবদার গ্রামে বাড়ির কাছে নিয়ে আসে।

সকাল ৭টায় তাদের দুইজনকে গাছের সঙ্গে বেঁধে চালানো হয় নির্যাতন। তাদের রড, রোল, বাঁশ, কাঠ দিয়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত করা হয়। ধাপে ধাপে বেলা ৩টা পর্যন্ত চলে এমন নির্মম নির্যাতন। এতে তাদের হাত, পাসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে রক্তাক্ত ও ক্ষত হয়। মারধরের এক পর্যায়ে ফাইজুদ্দিনের স্ত্রী লিমা ওই দুই যুবকের চোখে-মুখে মরিচের গুড়া ও লবণ ছিটিয়ে দেন। ক্ষত স্থানেও দেওয়া হয় মরিচের গুড়া ও লবণের ছিটা।

বিজ্ঞাপন

অটোরিকশার মালিক ফাইজুদ্দিন বলেন, শুক্রবার দুই যুবক আমার একটি অটোরিকশা ভাড়া নিয়ে কাওরাইদ, বরমী ও শ্রীপুরসহ বিভিন্ন স্থানে ঘোরাঘুরি করে। এক পর্যায়ে স্যালাইনে নেশা জাতীয় কোনো দ্রব্য খাইয়ে চালকের কাছ থেকে অটোরিকশা ছিনিয়ে নিয়ে যায়। আমি ওই অটোরিকশা উদ্ধারে চালককে নিয়ে বিভিন্ন জায়গাতে যাই। এক পর্যায়ে চালকই ওই দুইজনকে শনাক্ত করে। পরে তাদের ধরে এনে এলাকার শত শত মানুষ মারধর করেছে। আমার কিছুই করার ছিল না।

নির্যাতনে যুবক আলমগীর গুরুতর আহত হওয়ায় কারখানার কাজে যোগ দিতে পারেননি। শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত নিয়ে ঘরের মধ্যে শুয়ে-বসে সময় কাটছে তার। এবিষয়ে আলমগীর বলেন, আমি সোমবার রাতে কারখানায় ডিউটি করেছি। সকালে কারখানা থেকে বের হতেই তারা আমাকে আটক করে গাছের সঙ্গে রশি দিয়ে হাত পা বেঁধে অনেক মারধর করেছে। আমাকে খুব পেটানো হয়েছে, আমি তাদের বারবার বলেছি “আমি অটোরিকশা চুরির বিষয়ে কিছুই জানি না। তারা আমার কথা না শুনেই পিটিয়েছে। এক পর্যায়ে আমার চোখ-মুখ ও শরীরের ক্ষত স্থানে মরিচের গুঁড়া ও লবণ ছিটিয়ে দেন তারা।

থানা পুলিশের সহযোগিতা কেন চাননি, এমন প্রশ্নের জবাবে আলমগীর বলেন, তারা এলাকায় খুব প্রভাবশালী। অন্যায়ভাবে আমাদের পেটালেও কেউ এগিয়ে আসেনি। তাদের ভয়ে কেউ কথা বলতে পারছে না। এখন থানায় গেলে আবার মারধর করতে পারে। এমন শঙ্কায় আমরা থানায় যেতে ভয় পাচ্ছি।

নির্যাতনের শিকার অপর যুবক মাইনুদ্দিন সোহেল বলেন, ‘আমাকে অন্যায়ভাবে শুধু সন্দেহের বশে এভাবে পেটানো হয়েছে। ঘটনার দিন আমি কারখানার ভেতরে ছিলাম। আমাকে এত নির্যাতন করছে, আমি বারবার বলেছি, আমি চুরির বিষয়ে কিছুই জানি না। কিন্তু আমার কথা কেউ শোনেননি। পিটিয়েই তারা ক্ষ্যান্ত হননি, আমার ভাইয়ের কাছ থেকে তারা ৩০ হাজার টাকা নিয়ে ছেড়ে দিয়েছে।

বিজ্ঞাপন

শ্রীপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) কর্মকর্তা জয়নাল আবেদীন মন্ডল বলেন, এ ঘটনায় এখনো কেউ থানায় আসেননি। লিখিত বা মৌখিক অভিযোগও জমা দেননি। নিজ থেকে উদ্যোগ নিয়ে নির্যাতনের শিকার যুবককে সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। এ বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

সারাবাংলা/এসআর

গাজীপুর চুরির অপবাদ নির্যাতন লবণ-মরিচ শ্রীপুর

বিজ্ঞাপন

চলে গেলেন প্রবীর মিত্র
৫ জানুয়ারি ২০২৫ ২৩:৪২

আরো

সম্পর্কিত খবর