Saturday 04 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

প্রতিবেদনে ‘গোঁজামিল’, প্রশ্নের মুখে পার্বত্য ৩ জেলায় প্রাণিজ আমিষের প্রকল্প

জোসনা জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
১৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৮:০০ | আপডেট: ১৫ অক্টোবর ২০২৪ ০৩:৫০

ঢাকা: রাঙ্গামাটি, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি— পার্বত্য চট্টগ্রামের তিন জেলায় প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য প্রণয়ন করা হয়েছে একটি প্রকল্প। সেই প্রকল্পের সম্ভাব্যতা সমীক্ষাও করেছে প্রাণিসম্পদ গবেষণা প্রতিষ্ঠান। কিন্তু সমীক্ষার যে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হয়েছে, তাতে প্রকল্পের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য কীভাবে পূরণ হবে, সে বিষয়ে নেই পর্যাপ্ত তথ্য।

অন্যদিকে চার বছর মেয়াদি প্রকল্প শেষে পর পঞ্চম বছর থেকে আরও বরাদ্দ বিনিয়োগে প্রায় দ্বিগুণ আয়ের কথা বলা হয়েছে। কিন্তু কোন খাত থেকে কী পরিমাণ আয় হবে, সে বিষয়গুলো স্পষ্ট করা হয়নি প্রতিবেদনে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জনিয়েছে, এ অবস্থায় প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় প্রকল্পটি কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে যাচ্ছে।

বিজ্ঞাপন

‘৩ পার্বত্য জেলায় সমন্বিত প্রাণিসম্পদ উন্নয়ন’ প্রকল্প নিয়ে পাওয়া গেছে এসব তথ্য। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪৬৫ কোটি ৮২ লাখ টাকা। তিন পার্বত্য জেলার ২৬টি উপজেলার ১২৮টি ইউনিয়নে এটি বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে। এই প্রকল্প নিয়েই আজ মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) হবে পিইসি সভা। এতে সভাপতিত্ব করবেন পরিকল্পনা কমিশনের কৃষি, পানি সম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের সদস্য (সচিব) জাহাঙ্গীর আলম।

পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, পার্বত্য তিন জেলার জন্য প্রণয়ন করা প্রকল্পের যে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে সেটি পূর্ণাঙ্গ নয়। এতে বলা হয়েছে, প্রকল্প শেষে অর্থাৎ চার বছর পর পঞ্চম বছর অতিরিক্ত ৩৭৪ কোটি ৭৯ লাখ টাকা ব্যয় করা হলে প্রকল্প থেকে আয় হবে ৬৩৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা।

একইভাবে পরবর্তী ছয় বছরে প্রতি বছর আরও অতিরিক্ত ৩২৭ কোটি ৫৯ লাখ টাকা করে ব্যয় করা হলে প্রতিবছর ৬৭৫ কোটি ৩৮ লাখ টাকা করে আয় হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে প্রতিবেদনে। কিন্তু এ আয় প্রকল্পের কোন কোন খাত থেকে কীভাবে হবে, সে হিসাব এতে নেই। এ ছাড়া ষষ্ঠ বছর থেকে এ আয়ের জন্য প্রতিবছর অতিরিক্ত যে অর্থ ব্যয় করতে হবে তার সংস্থান সম্পর্কে কোনো পরিকল্পনাও সমীক্ষা প্রতিবেদনে নেই। ফলে বাড়তি আয়ের হিসাবকে গ্রহণযোগ্য মনে করছে না পরিকল্পনা কমিশন।

বিজ্ঞাপন

এদিকে প্রস্তাবিত চার বছর মেয়াদি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য এডিপি (বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি) থেকে প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১১৬ কোটি টাকা বরাদ্দের প্রয়োজন হবে। কিন্তু মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের মধ্যমেয়াদি বাজেট কাঠামো থেকে দেখা যায়, চলতি অর্থ বছরের এক হাজার ১২২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা ও আগামী অর্থবছরের ৬২৬ কোটি ২১ লাখ টাকার ঘাটতি রয়েছে। এ অবস্থায় এডিপিতে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের বাজেট সিলিংয়ের মধ্যে থেকে এই প্রকল্পের অর্থায়ন কীভাবে করা হবে, সে বিষয়েও কোনো পরিকল্পনা সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ নেই বলে জানিয়েছে পরিকল্পনা কমিশন।

প্রকল্পের যে মূল উদ্দেশ্য— পার্বত্য জেলার প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বাড়ানো— সমীক্ষা প্রতিবেদনে সেই জেলাগুলোর প্রাণিজ আমিষের চাহিদা, ঘাটতি বা সরবরাহের তেমন কোনো তথ্যও পাওয়া যায়নি। প্রতিবেদনে সারা দেশের দুধ, মাংস ও ডিমের চাহিদা এবং উৎপাদন ও প্রাপ্যতার একটি তথ্য উপস্থাপন করা হলেও সেটি পার্বত্য জেলাগুলোর আলাদা কোনো তথ্য সেখানে নেই।

প্রকল্প প্রস্তাবনায় তিনটি অঙ্গের কথা বলা হয়েছে, পরিকল্পনা কমিশন সেখানেও খুঁজে পেয়েছে গরমিল। প্রথম অঙ্গে পার্বত্য এলাকার জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে ৭২ হাজার ২৭টি পরিবারকে অনুদান হিসাবে সম্পূর্ণ বিনামূল্যে গরু, ছাগল, হাঁস, মুরগি, ভেড়াসহ বিভিন্ন প্রাণী বিতরণের কথা বলা হয়েছে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থসামাজিক উন্নয়নে পল্লি উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগ সমবায়ের মাধ্যমে ক্ষুদ্র ঋণ মডেলের আওতায় এ ধরনের কাজ করে থাকে। সম্পূর্ণ বিনামূল্যে অনুদান হিসেবে উপকরণ সহায়তা দিয়ে টেকসই আর্থসামাজিক উন্নয়ন কতটা ফলপ্রসূ, তার জন্য ক্ষুদ্র ঋণ মডেলের সঙ্গে কোনো তুলনামূলক বিশ্লেষণ সমীক্ষা প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়নি।

প্রকল্পের দ্বিতীয় অঙ্গ রাঙ্গামাটির শূকরের খামারের আধুনিকীকরণ। এর জন্য ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে ৩৮ কোটি ২৭ লাখ টাকা। রাঙ্গামাটি জেলায় অবস্থিত খামারটি রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদের অধীন এবং রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অধী। ফলে খামারটির আধুনিকায়ন কীভাবে বাস্তবায়ন হবে, তা নিয়ে জটিলতা রয়েছে।

প্রস্তাবিত প্রকল্পের তৃতীয় অঙ্গ বান্দরবান জেলায় একটি ইনস্টিটিউট অব লাইভস্টক সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (আইএলএসটি) স্থাপন করা। কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানটি গড়ে তোলা হলে সেখান থেকে প্রশিক্ষিত ডিপ্লোমা গ্র্যাজুয়েটদের চাহিদা বা কর্মক্ষেত্র সম্পর্কেও সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে তেমন কোনো তথ্য নেই।

পরিকল্পনা কমিশনে কর্মকর্তারা বলছেন, সব দিক থেকেই পাহাড়ি এলাকায় প্রাণিজ আমিষের উৎপাদন বাড়ানোর প্রকল্প প্রস্তাবনাটি অসম্পূর্ণ। কীভাবে এই প্রকল্পের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য পূরণ হবে কিংবা প্রকল্পে আয়-ব্যয়ের সংস্থান কীভাবে হবে— সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনে এর কিছুই উল্লেখ নেই। অনেকটা দায়সারাভাবে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়েছে বলেই প্রতীয়মান হয়। এসব বিষয় নিয়ে পিইসি সভায় কঠিন প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে প্রকল্প সংশিষ্টদের। প্রশ্নগুলোর যথাযথ উত্তর না মিললে প্রকল্পটির জন্য আলোর মুখ দেখা দুষ্কর হয়ে পড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে পরিকল্পনা কমিশনের একাধিক কর্মকর্তা সারাবাংলাকে বলেন, পিইসি সভায় সম্ভাব্যতা সমীক্ষা প্রতিবেদনের ফাঁক-ফোকড়গুলো কঠোরভবে ধরা হবে। প্রশ্নের মুখে পড়বেন প্রকল্প সংশিষ্টরা। এ ক্ষেত্রে সন্তোষজনক জবাব না পেলে প্রকল্পটি নিয়ে ভিন্ন সুপারিশও দেওয়া হতে পারে।

সারাবাংলা/জেজে/টিআর

পরিকল্পনা কমিশন পার্বত্য চট্টগ্রাম প্রাণিজ আমিষ প্রাণিজ আমিষ উৎপাদন প্রাণিসম্পদ অধিদফতর

বিজ্ঞাপন

না ফেরার দেশে অঞ্জনা
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৫৪

এই তাসকিনকে সমীহ করবেন যে কেউ
৪ জানুয়ারি ২০২৫ ০১:৪৭

আরো

সম্পর্কিত খবর