আপনাদের ‘আন্দোলনী ঝড়ের আর্তনাদ’ শোনাব— অন্তর্বর্তী সরকারকে রিজভী
৯ অক্টোবর ২০২৪ ২০:০৭ | আপডেট: ২২ অক্টোবর ২০২৪ ১৪:৪০
ঢাকা: অন্তর্বর্তী সরকারকে ‘আন্দোলনী ঝড়ের আর্তনাদ’ শোনানোর হুমকি দিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
বুধবার (৯ অক্টোবর) মিরপুরের পল্লবীতে ডেঙ্গু প্রতিরোধে গণসচেতনামূলক লিফলেট বিতরণকালে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ হুমকি দেন।
অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘কোথায় যেন ঢিলেঢালে ভাব; এভাবে চলবে না। আপনাদের (অন্তর্বর্তী সরকার) ভেতর থেকে যদি কেউ অন্য উদ্দেশ্য নিয়ে কাজ করতে চায়; আমি শুধু বলে রাখতে চাই- আমরা আন্দোলন থেকে ইস্তফা দিইনি। কারও যদি অশুভ উদ্দেশ্য থাকে, তাহলে আমরা আন্দোলনী ঝড়ের আর্তনাদ আপনাদের শোনাব। যদি নিজেরা শুধরে না যান; যদি সংস্কার ও নির্বাচনের মধ্যে রহস্য থাকে, তাহলে আপনাদের প্রতিরোধের ঝড়ের কাব্য শোনাব।’
তিনি বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তী সরকার বিএনপিসহ সমমনা রাজনৈতিক দল এবং দেশের সর্বস্তরের জনগণের সমর্থনের সরকার। এই সরকার যদি ব্যর্থ হয়, তাহলে গণতন্ত্র ও জনগণ ব্যর্থ হবে। শেখ হাসিনার যেন প্রত্যাবর্তন না হয়- এটাই জনগণ চেয়েছে। আজকের সরকারের মধ্যে কেউ কেউ একচোখা দৃষ্টিতে দেখে; বিএনপি একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক দল। ১৬/১৭ বছর নিরন্তর সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে গুম খুনের শিকার হয়ে অসংখ্য নেতাকর্মীর হাত পা পঙ্গুত্ব বরণ করে চোখ অন্ধ করে দিয়েছে শেখ হাসিনার পুলিশ; সেই দল বিএনপি। কিন্তু কেন যেন মনে হয় উপদেষ্টা একচোখে দেখার চেষ্টা করছেন।’
রিজভী বলেন, ‘অন্তর্বর্তী সরকার সফল হোক। কিন্তু, সংস্কারের নামে যদি নির্বাচন দীর্ঘায়িত করা কয়, তাহলে মানুষ আপনাদের সন্দেহ করবে। কী এমন ঘটনা আছে নির্বাচনের তারিখ; সম্ভাব্য তারিখ নির্ধারণ করতে পারছেন না। অথচ গণতন্ত্রের একটি উপাদান অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন, যা কেড়ে নিয়েছিল শেখ হাসিনা। ভোটারদের ভোট কেন্দ্রে যেতে দেয়নি। গ্রামের পর গ্রাম পুলিশ মাইকিং করে ভোট কেন্দ্রে আসতে দেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এখন জনগণ উন্মুখ হয়ে আছে। যাদের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছর, তারা তো ১৭ বছর ধরে ভোট দিতে পারেনি। শেখ হাসিনা নির্বাচন কমিশনের তাদের লোক দিয়ে ঘোষণা দিয়েছে। সুতরাং এটা (নির্বাচনের তারিখ) যদি তারা (অন্তর্বর্তী সরকার) ঘোষণা না দেন, সময়ের কথা না বলেন, তাহলে তো মানুষ ভিন্নভাবে দেখবে।’
রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা মাঝে মাঝে তার বক্তব্যে ইচ্ছে করে ভাইরাল করে দেন। তার দলের নেতা ও তার পুলিশ প্রশাসনের কয়েকজনকে বিদেশে ঘুরতে, হাঁটতে দেখা যাচ্ছে। আর যারা দেশে আছে, তাদের হাতে বিএনপির নেতারা খুন হচ্ছে। মূলত হত্যার নির্দেশ তিনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে যাওয়ার পরও দিচ্ছেন। গোপালগঞ্জে দিদার হত্যা, নরসিংদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রনোত হত্যা— এগুলো অশুভ ইঙ্গিত।’
তিনি বলেন, ‘শেখ হাসিনা আরেকটা ভয়ংকর পরিকল্পনা করছে। এই বিষয়ে ওয়াকিবহাল থাকতে হবে। অন্তবর্তী সরকার যদি শেখ হাসিনার ময়লার বস্তা ঘাড়ে নিয়ে ঘুরে বেড়ান, তাহলে কিন্তু কোনো সংস্কার করতে পারবে না। কারণ, এখনো শেখ হাসিনার ময়লার বস্তা পুলিশ প্রশাসন বহাল আছে।’
দ্রব্যমূল্যের সীমাহীন ঊর্ধ্বগতির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, ‘শেখ হাসিনা সিন্ডিকেট করতেন আওয়ামী লীগের লোকজন দিয়ে; কারণ তিনি চাইতেন শেখ পরিবার ও আওয়ামী লীগ নেতাদের পকেট যেন সব সময় ভারী থাকে। পকেট যেন খালি না হয়। তাই বাজার আওয়ামী লোকেরা দখল করে রাখত। ঢাকা শহরে এমন কোনো বাজার নেই যে বাজারে সিন্ডিকেট করেনি আওয়ামী লীগের লোকজনেরা। কিন্তু এখন তো তারা নেই- তাহলে মোটা চাল-মাঝারি চাল কেন কেজিতে ৩/৪ টাকা বেড়েছে। এখন কেন তেলের লিটারে ৬টা বেড়েছে, বয়লার মুরগি কেজিতে ১২ টাকা বেড়েছে, এটা তো জনগণ প্রত্যাশা করেনি। জনগণ চায় সিন্ডিকেটমুক্ত বাজার। তাই বাজার মনিটরিং তীব্রতর করা হোক।’
তিনি বলেন, ‘গত জুলাই মাসের গণহত্যা আর আগস্টে আমাদের আন্দোলনের বিজয়ের পটভূমি রচনা করেছিলেন তারেক রহমান। বিএনপির লাখ লাখ নেতাকর্মীদের বার্তা দিয়েছিলেন তিনি, এবার শেখ হাসিনার পতন হবে। কারণ আমাদের সন্তানেরা, ছোট ভাইয়েরা রাস্তায় নেমেছে। দূরন্ত সাহস নিয়ে নেমেছে। তাদের বুকে রক্ত ঝড়ছে তারপরও তারা বন্ধুকে পানি খাওয়াতে মুগ্ধর মতো ছুটে বেড়িয়েছে। কত রক্ত, কত আত্মদান, কত লাশ আমরা দেখেছি। এই রক্ত কখনো বৃথা যেতে পারে না।’
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা নাজিম উদ্দীন আলম, সাইফুল আলম নীরব, আমিনুল হক, তাবিথ আউয়াল, যুবদল নেতা এস এম জাহাঙ্গীর, মেহবুব মাসুম শান্ত প্রমুখ।
সারাবাংলা/এজেড/পিটিএম