Sunday 29 Dec 2024
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

২ মাস ধরে বন্ধ আন্তঃদেশীয় ট্রেন, কেউ জানে না চালু হবে কবে

ঝর্ণা রায়, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট
২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪ ২৩:০০ | আপডেট: ৬ অক্টোবর ২০২৪ ২১:৩৭

ঢাকা: কাউন্টারে ঝুলছে মাকড়সার জাল। চারদিক ধূলাবালিতে পূর্ণ। নেই যাত্রীদের চিরচেনা লাইন। প্রায় দুই মাস ধরে এমন দৃশ্য কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশনে আন্তঃদেশীয় টিকিট কাউন্টারের। বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় যাত্রীদের আনাগোনা নেই এই কাউন্টারে।

দীর্ঘ সময় ট্রেন চলাচল বন্ধ থাকায় দুর্ভোগে পড়েছেন রোগী, পর্যটক, ব্যবসায়ী ও সাধারণ যাত্রীরা। তারা বলছেন, যাত্রা স্বস্তিদায়ক হওয়ায় ভারতে যাওয়ার জন্য ট্রেনকেই প্রাধান্য দিতেন তারা। এখন ট্রেন না থাকায় বিপাকে পড়েছেন তারা। দ্রুত এই ট্রেন চালুর দাবি তাদের।

বিজ্ঞাপন

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ট্রেন চলাচলের কথা বলা হলেও ভারতের দিক থেকে কোনো ধরনের আগ্রহ দেখা যায়নি। এ পরিস্থিতিতে ট্রেন কবে থেকে চলতে পারে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না।

বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে যাতায়াত সহজ করতে তিন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু করা হয়। এর মধ্যে মৈত্রী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে কলকাতা, মিতালী এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে নিউ জলপাইগুড়ি এবং বন্ধন এক্সপ্রেস খুলনা থেকে কলকাতা রুটে চলাচল করত।

তিনটি ট্রেনের মধ্যে ২০০৮ সালের ১৪ এপ্রিল ঢাকা-কলকাতা রুটে চালু করা হয় মৈত্রী এক্সপ্রেস। ট্রেনটি সপ্তাহে চার দিন— বুধ, শুক্র, শনি ও রোববার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন থেকে সকাল সোয়া ৮টায় ছেড়ে কলকাতার চিতপুর স্টেশনে পৌঁছাত বিকেল ৪টায়। কলকাতা থেকেও সপ্তাহে চারদিন— সোম, মঙ্গল, শুক্র ও শনিবার ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে যেত।

২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-কলকাতা রুটে চালু হয় বন্ধন এক্সপ্রেস। ট্রেনটি রোববার ও বৃহস্পতিবার এই দুই দিন চলাচল করত। আর ২০২১ সালের ২৬ মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে ঢাকা-নিউ জলপাইগুড়ি রুটে চালু হয় মিতালী এক্সপ্রেস। দুই দেশের দুই প্রধানমন্ত্রী ট্রেনটির উদ্বোধন করেন। ট্রেনটি ঢাকা থেকে সোম ও বৃহস্পতিবার ছেড়ে যেত। রাত ৯টা ৫০ মিনিটে রওয়ানা দিয়ে নিউ জলপাইগুড়ি পৌঁছাত সকাল ৭টা ৫ মিনিটে। আবার নিউ জলপাইগুড়ি থেকে বোরবার ও বুধবার দুপুর ১২টা ১০ মিনিটে ঢাকার উদ্দেশে রওয়ানা দিত।

বিজ্ঞাপন

সহজ যাত্রীসেবা ও স্বস্তিদায়ক ভ্রমণের জন্য এই তিন রুটে ট্রেন চালু করা হলেও অতিরিক্ত ভাড়া ও দীর্ঘ সময় লাগার কারণে যাত্রী সংখ্যা খুব বেশি হতো না। তারপরও সময় বা ভাড়া নিয়ে যাদের আপত্তি ছিল না, বরং আরামদায়ক যাত্রাকে যারা অগ্রাধিকার দিতেন, তারা এই তিনটি ট্রেনকেই বেছে নিতেন যাতায়াতের মাধ্যম হিসেবে। এ ছাড়া অনেক রোগীই একটু আরামদায়ক ভ্রমণের জন্য বেছে নিতেন ট্রেনকে।

সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা সংস্কারের আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ১৮ জুলাই শিক্ষার্থীদের ডাকা ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচির সময় থেকেই যাত্রী ও পণ্যবাহী সব ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের ১০ দিন পর ১৫ আগস্ট সারা দেশে আন্তঃনগর ট্রেন চলাচল শুরু হয়। এর মধ্যে ভারতের সঙ্গে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলও শুরু হয়েছে। তবে আন্তঃদেশীয় যাত্রীবাহী ট্রেন এখনো ছাড়েনি। কবে থেকে এসব ট্রেন চলতে শুরু করবে, সেটিও বলতে পারছেন না কেউই।

এদিকে ছাত্র-জনতার গণআন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর থেকে বাংলাদেশিদের জন্য ট্যুরিস্ট ভিসাও বন্ধ রেখেছে ভারত। সীমিত আকারে দেওয়া হচ্ছে মেডিকেল ও জরুরি প্রয়োজনীয় ভিসা। সেসব ভিসা যারা পাচ্ছেন, তাদের অনেকেও ট্রেন না থাকায় ভোগান্তির কথাই বলছেন।

কমলাপুর রেলস্টেশনে বিকাশ সাহার সঙ্গে কথা হয় সারাবাংলার। তিনি জানান, বাবার চিকিৎসা করান কলকাতায়। এ কারণে তিন মাস পরপরই চিকিৎসকের সঙ্গে দেখা করতে কলকাতা যেতে হয় তাকে। বৃদ্ধ বাবাকে নিয়ে বাসযাত্রা কঠিন, উড়োজাহাজের ভাড়াও সাধ্যের বাইরে। তাই ট্রেনকেই ভারতে যাওয়ার মাধ্যম হিসেবে স্বচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতেন তিনি।

বিকাশ সাহা বলেন, ‘আবার বাবাকে নিয়ে যাওয়ার সময় হয়ে এসেছে। কিন্তু ট্রেন চলবে কি না বা কবে থেকে চলবে, বুঝতে পারছি না। ট্রেন না চললে বাবাকে নিয়ে কলকাতা যাওয়া কঠিন হয়ে পড়বে। এত রাস্তা বাসে করেও যেতে পারব না, আবার প্লেনে যাওয়ার জন্য যে ভাড়া গুনতে হবে, তার সংস্থান করাও কঠিন। দেখি কী হয়।’

মোহসিনুল হকের মা ক্যানসারের রোগী। তাকে কেমো দিতে প্রতি মাসেই কলকাতার টাটা ক্যানসার হাসপাতালে নিয়ে যেতে হয়। মোহসিনুল বলেন, ‘মাকে নিয়ে ট্রেনেই যাতায়াত করি সবসময়। কমলাপুর এ নিয়ে তিন দিন এসেছি ট্রেন চালু হলো কি না দেখার জন্য। আমরা চাই, দ্রুত ট্রেন চালু হোক।’

ভারতীয় গণমাধ্যমগুলোর খবর অনুযায়ী, ভারতের রেলপথ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে এখনই তারা এই ট্রেন সেবা চালু করতে চাইছেন না। তারা বলছেন, আকাশপথে যোগাযোগব্যবস্থায় কোনো বিঘ্ন ঘটেনি, সড়কপথেও বাস চলাচল করছে। কিন্তু ট্রেনের বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারেনি ভারত।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সূত্র বলছে, তাদের পক্ষ থেকে বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে চলাচল করা তিন রুটে পুনরায় ট্রেন চালুর তাগাদা দেওয়া হয়েছে। রেলওয়ের মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ট্রেন চালুর বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও এ বিষয়ে এখনো কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।

সারাবাংলা/জেআর/টিআর

আন্তঃদেশীয় ট্রেন কলকাতা নিউ জলপাইগুড়ি বন্ধন এক্সপ্রেস বাংলাদেশ-ভারত মিতালী এক্সপ্রেস মৈত্রী এক্সপ্রেস

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর