Friday 19 Dec 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

পাহাড়ে ১৫ দিনের মধ্যে বিদ্যুৎ-গ্যাসের সংযোগ বিচ্ছিন্নের নির্দেশ

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট
২০ জুন ২০২৪ ১৯:৫৭ | আপডেট: ২০ জুন ২০২৪ ২০:২৩

ভারী বর্ষণে চট্টগ্রামে পাহাড় ধসের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। সেখানকার অবৈধ স্থাপনায় গ্যাস, বিদ্যুৎ, পানির সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার। ছবি: সারাবাংলা

চট্টগ্রাম ব্যুরো: পাহাড়ে অবৈধ বসতিতে দেওয়া বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাসের সংযোগ ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করার নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম। এসব অবৈধ বসতিতে চলাচলের জন্য কারা সড়ক নির্মাণ করেছে, তা খতিয়ে দেখতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২০ জুন) বিকেলে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৮তম সভায় তিনি এসব নির্দেশনা দেন।

সভায় বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘একটু ভারী বৃষ্টি হলেই পাহাড় ধসের শঙ্কা দেখা দিচ্ছে। পাহাড়গুলোতে সাড়ে তিন হাজারের বেশি অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ আছে। অবৈধ এসব বিদ্যুৎ সংযোগ আগামী ১৫ দিনের মধ্যে বিচ্ছিন্ন করতে হবে। পানি ও গ্যাসের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা থাকবে। ১৫ দিন পর এ সংক্রান্ত বিষয়ে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির কাছে তথ্য দিতে হবে।’

বিজ্ঞাপন

‘যারা পাহাড়ে অবৈধভাবে আছে তাদের পুনর্বাসনের ব্যবস্থা আমরা যতটুকু পেরেছি করেছি। যদি কেউ যেতে চায় তাদের আশ্রয় দেওয়া হবে। কয়েকদিন আগেও চট্টগ্রাম বিভাগে সাড়ে তিন হাজারের বেশি মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নেওয়া হয়েছে। তাদের আশ্রয় দেওয়া হচ্ছে,’— বলেন বিভাগীয় কমিশনার।

বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামে পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির ২৮তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। ছবি: সারাবাংলা

পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনায় এনজিওগুলো পিচঢালা রাস্তা করে দিচ্ছে— সাংবাদিকরা এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে তোফায়েল ইসলাম বলেন, ‘কোন কোন এনজিও এ কাজ করছে, নামগুলো দেন। কারা করেছে? পাহাড়ে অবৈধ স্থাপনায় বৈধ রাস্তা, এটা কীভাবে সম্ভব! রাস্তার কাজ তো সিডিএ ও সিটি করপোরেশন করে।’

এ সময় বিভাগীয় কমিশনার চসিক ও সিডিএ প্রতিনিধির কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বিষয়টি জানেন না বলে জানান। এরপর তিনি পাহাড়ে রাস্তার করার পেছনে যারা দায়ী তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সিটি করপোরেশনকে নির্দেশনা দেন।

সভা শেষে জেলা প্রশাসক আবুল বাসার মোহাম্মদ ফখরুজ্জামান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত এক বছরে প্রায় ১০ একর খাসজমি অবৈধ দখলদারদের হাত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। ৩৬টি পাহাড় উদ্ধার করে সেখানে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে, যেন সেখানে কেউ পাহাড় না কাটে। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন সময় দেখা যায় পাহাড় কাটা হচ্ছে।’

‘আগামী তিন দিন ভারী বর্ষণ হলে কিন্তু পাহাড় ধসের আশঙ্কা আছে। কিছু পাহাড়ের মালিকানায় সরকারি বিভিন্ন দফতর আছে। সেখানে আমরা অভিযান চালাতে পারিনি। সেখানে পাহাড় কেটে রাস্তা বানানো হচ্ছে। বাড়ি তৈরি করা হচ্ছে,’— বলেন জেলা প্রশাসক।

পাহাড় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভায় বক্তব্য রাখছেন চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলাম। ছবি: সারাবাংলা

পাহাড়গুলোতে অবৈধ স্থাপনাকারীদের উচ্ছেদ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক আরও বলেন, ‘তালিকা করে আমাদের দিলে আমরা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে সেখানে অভিযান চালাব। গত এক বছরে আমরা ৫১টি উচ্ছেদ অভিযান আমরা করেছি। কয়েকজনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দুজন কাউন্সিলরও পাহাড় কাটার দায়ে অভিযুক্ত ছিলেন। তাদেরও শাস্তির আওতায় আনা হয়েছে। তাদের বরখাস্ত করতে সুপারিশ করা হয়েছিল। সে সুপারিশের ভিত্তিতে তাদের বরখাস্তও করা হয়। পরে তারা হাইকোর্টে গিয়ে একটি আদেশ নিয়ে এসে আবার কাজ করছেন।’

সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে জেলা প্রশাসক বলেন, ‘ছয় হাজার পরিবারের ২০ হাজার মানুষ পাহাড়ে অবৈধভাবে বসবাস করছে। এ রকম বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠীকে একসঙ্গে সরিয়ে আনা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয়।

চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার তোফায়েল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশনের ব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর আলম, চসিকের সহকারী প্রকৌশলী মাহমুদ শাফকাত আমিন, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপসহকারী পরিচালক আবদুর রাজ্জাক, পরিবেশ অধিদফতরের আঞ্চলিক পরিচালক হিল্লোল বিশ্বাস, ওয়াসার নির্বাহী প্রকৌশলী সজীব বড়ুয়া, র‍্যাব-৭-এর ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক মেজর সানরিয়া চৌধুরী, প্রেস ক্লাব সভাপতি সালাউদ্দিন রেজা ও সহসভাপতি চৌধুরী ফরিদ।

সারাবাংলা/আইসি/টিআর