ঈদযাত্রায় অতিরিক্ত ভাড়া নিলে ৯৯৯ এ অভিযোগের পরামর্শ
১৬ জুন ২০২৪ ০৮:৪২ | আপডেট: ১৬ জুন ২০২৪ ০৮:৪৩
ঢাকা: ঈদুল আজহা উপলক্ষে নাড়ির টানে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বাড়ি ফিরছে মানুষ। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদযাত্রায় যাত্রীদের রয়েছে নানা ধরণের অভিযোগ। বিশেষ করে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, ফিটনেসবিহীন বাস চলাচল, যাত্রীসেবায় গাফিলতিসহ বিভিন্ন ধরনের হয়রানি ও ভোগান্তিতে পড়ার অভিযোগ রয়েছে এবারও।
এমন অবস্থায় দেশের যে কোনো রুটে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করা হলে তাৎক্ষণিকভাবে জাতীয় জরুরি পরিষেবা নম্বর ৯৯৯ এ অভিযোগের পরামর্শ দিয়েছেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী।
শনিবার (১৫ জুন) সারাবাংলাকে এ কথা বলেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব।
এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, বিভিন্ন মহাসড়কে পাশে বিভিন্ন এলাকার সংশ্লিষ্ট ইউএনও, এসি ল্যান্ড, ওসি (ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা) সবাইকে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করার কাজে যুক্ত করা আছে। এক্ষেত্রে পরিষ্কারভাবে নির্দেশনা দেওয়া আছে সবখানে। কোনো অবস্থাতেই কোনো জায়গায় বাস ভাড়া বৃদ্ধি করা যাবে না। এছাড়া সড়কে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি বরদাস্ত করা হবে না। যেকোনো সময় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য তৈরি থাকবে প্রশাসন। সিগন্যাল ভঙ্গ করে কোনো গাড়ি সড়কে চলতে পারবে না।
যদি কোথাও অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার পাশাপাশি কোনো ধরনের ব্যত্যয় দেখা যায় তবে তাৎক্ষণিক ৯৯৯ নম্বরে ফোন দিয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ জানাতে পারেন।
তিনি বলেন, আমাদের জাতীয় পরিষেবা ৯৯৯ কিন্তু খুবই কার্যকরী একটি সেবা। যাত্রীর অভিযোগ পাওয়া মাত্র সংশ্লিষ্ট এলাকার প্রশাসন অবশ্যই বিষয়টি সমাধান করবে ও কার্যকর পদক্ষেপ নেবে।
তিনি আরও বলেন, আমি বিভিন্ন কাউন্টারে বিগত কয়েকদিন নিজে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। সেখানে অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার বিষয়টি তেমনভাবে অভিযোগ আকারে পাওয়া যায়নি। তবে ঈদ উপলক্ষে দেখা যায় একদিনের জন্য কিছু গাড়ি সড়ক, মহাসড়কে নামে। তারা লুকিয়ে এই ট্রিপগুলো চালানোর চেষ্টা করে। সবখানে তো আর ক্যামেরা থাকে না। আবার সবখানে প্রশাসনের মাধ্যমেও নজরদারি করা সম্ভব হয় না ২৪ ঘণ্টা।
সচিব বলেন, ঈদযাত্রায় সবাই যেন নিরাপদে বাড়ি পৌঁছাতে পারে সেজন্য নিরলসভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের পাশাপাশি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। কিন্তু অনেক সময় দেখা যায় প্রশাসনের চোখ এড়িয়ে নানা ধরণের অনিয়মের চেষ্টা করা হয়। এক্ষেত্রে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানাই। সবাইকে বুঝতে হবে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে বাড়িতে যাওয়া যে কারণে একটা দুর্ঘটনা কিন্তু সেখানে সব শেষ করে দিতে পারে।
তিনি বলেন, আমি শুক্রবার (১৪ জুন) ও শনিবার (১৫ জুন) বিভিন্ন মহাসড়কে সরেজমিনে পরিদর্শন করেছি। একটা ট্রাকে দেখলাম যাত্রী পরিবহণকরছে যারা পূবাইল থেকে আসছে সিরাজগঞ্জে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তাদের গাজীপুর নামিয়ে এভাবে যাত্রার ঝুঁকির বিষয়টা বোঝানোর পরে তারা কিন্তু বুঝতে পারে। চান্দোরা মোড়ে দাঁড়িয়ে দেখি একটা বাসের ছাদে যাত্রী পরিবহণ করা হচ্ছে। তাদের থামিয়ে ঝুঁকির বিষয়টি বোঝানোর পরে তারা বুঝতে পারে। আমাদের কিন্তু এ ধরণের মোটিভেশনাল কাজগুলোও করে যেতে হবে। শুধুমাত্র প্রশাসনই নয়, অন্যান্যদেরও কিন্তু এক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে।
তিনি আরও বলেন, শুধুমাত্র পুলিশ প্রশাসনের ওপর নির্ভর করে মহাসড়কে নিরাপত্তা আশা করাটাও কিন্তু পুরোপুরি ঠিক না। তারা অবশ্যই তাদের কাজ করবে। কিন্তু এর পাশাপাশি নাগরিক সচেতনতার জায়গা থেকেও কাজ করতে হবে আমাদের।
ভবিষ্যতে যদি আমি দায়িত্বে থাকি তবে ঈদের এক থেকে দুইদিন আগে না শুধু বরং মাস খানেক আগ থেকেই সচেতনতা বাড়ানোর কাজটা শুরু করতে চাই। যাতে সবাই মিলে উৎসবের সময়টা নিরাপদে ঘরে ফিরতে পারে- যুক্ত করেন সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব।
এখন পর্যন্ত অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া বিষয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে ৯৯৯ পরিষেবার মাধ্যমে কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে হাইওয়ে কুমিল্লা রিজিয়নের পুলিশ সুপার মো. রিজিওনের আলম সারাবাংলাকে বলেন, এখন পর্যন্ত আমরা কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে অভিযোগ পেলেই সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া আছে আমাদের পক্ষ থেকে।
এদিকে পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে বাড়ি ফেরা ও ফিরতে পথে সবার যাত্রা নির্বিঘ্ন ও নিরাপদ করতে বাংলাদেশ সড়কপরিবহণ কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) ভিজিলেন্স (তদারকি) টিম গঠন করেছে। ভিজিলেন্স টিমের এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে বৃহস্পতিবার (১৩ জুন) থেকে। এই টিমের কার্যক্রম চলবে আগামী ২২ জুন পর্যন্ত।
বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) আয়োজনে ভিজিলেন্স টিমের সহযোগিতায় রয়েছে পুলিশ বিভাগ, সিটি করপোরেশন, পরিবহণ মালিক সমিতি ও শ্রমিক ইউনিয়ন।
এ বিষয়ে সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এ বি এম আমিন উল্লাহ নুরী বলেন, পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষে সড়কে যাতায়াতের নিরাপত্তাব্যবস্থা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আমাদের এই তদারকি সেল গঠন করা হয়েছে। আমরা এর মাধ্যমে যাত্রীদের সেবার মান নিশ্চিত করতে কাজ করে যাচ্ছি। কোনো ধরনের অনিয়মের অভিযোগ পেলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নিচ্ছি। মহাখালী বাস টার্মিনাল ছাড়াও ভিজিলেন্স টিম গাবতলী ও সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে কাজ করছে।
বিআরটিএ জানায়, ভিজিলেন্স টিমের মাধ্যমে যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া দাবি না করা, বাসের ছাদে যাত্রী পরিবহণ না করা, যাত্রীসেবায় অনিয়ম ও ধারণক্ষমতার অতিরিক্ত যাত্রী বহন রোধে বাস টার্মিনালে ভিজিলেন্স টিম কাজ করছে।
সারাবাংলা/এসবি/ইআ