‘কোনো চাপে বাবার হত্যার বিচার যেন বাধাগ্রস্ত না হয়’
১২ জুন ২০২৪ ১৭:৫৭ | আপডেট: ১২ জুন ২০২৪ ২১:৩৭
ঢাকা: কোনো তদবির বা কোনো চাপে পড়ে হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন থমকে না যায় অথবা বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে অনুরোধ জানিয়েছেন কলকাতায় খুন হওয়া ঝিনাইদহ-৪ আসনের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আজীম আনারের মেয়ে মুমতারিন ফেরদৌস।
বুধবার (১২ জুন) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের সঙ্গে দেখা করে এ অনুরোধ জানান তিনি।
সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, আমি শুনেছি যারা গ্রেফতার হয়েছেন তাদের মুক্তির জন্য বড় বড় জায়গা থেকে তদবির করা হচ্ছে। আমি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে বলেছি কোনো তদবির যেন আমার বাবার বিচারকাজকে বাধাগ্রস্ত করতে না পারে। আমি আমার বাবার সুষ্ঠু বিচার চাই।
তিনি বলেন, ডিবি অনেক দক্ষ। কারো বিরুদ্ধে তথ্য প্রমাণ না থাকলে কাউকে আটক করবে না। এরই মধ্যে আমাদের জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইদুল কবীর মিন্টুকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডিবি নিয়ে গেছে। নিশ্চয়ই ডিবির কাছে তার বিষয়ে কোনো তথ্য প্রমাণ আছে; না হলে তো গ্রেফতার করে নেওয়া হতো না। আসলে আমি এর সর্বোচ্চ বিচার চাই।
মুমতারিন ফেরদৌস বলেন, মিন্টু চাচাকে ছোট থেকে চিনি, তিনি আমার বাবার সমতুল্য। তাকে সম্মান করি, সবচেয়ে বড় কথা হলো আমার বাবার ওপরে কেউ নেই। এখানে আমার বাবা নৃশংসভাবে খুন হয়েছেন। আমি এতিম হয়ে গেছি। আমার একটা বড় ভাই নেই। আমার বাবা আমার মাথার ছাদ ছিল। এ ঘটনায় হয়তো সাজা হবে কিন্তু আমি আমার বাবাকে হারিয়ে ফেলেছি।
তিনি বলেন, আমি আমার বাবাকে আর ফিরে পাব না। কিন্তু আমি চাই আমার বাবাকে যে বা যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার। আমি যেভাবে এতিম হয়েছি এভাবে আর কেউ যেন এতিম না হয়। কোনো চাপ কিংবা তদবিরের মুখে পড়ে যেন আমার বাবার হত্যাকাণ্ডের বিচার যেন বাধাগ্রস্ত না হয়।
মুমতারিন বলেন, আমি শুনেছি অনেক তদবির করা হচ্ছে। এমন হলে তো আমার বাবার বিচার পাব না। গিয়াস বাবুর বিরুদ্ধে অথেনটিক প্রমাণ ডিবির কাছে আছে। যাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে গেছে তার বিরুদ্ধেও প্রমাণ রয়েছে সেটা আমি জানি। আমি চাই সে প্রমাণ সাপেক্ষে তদন্ত করে আইন অনুযায়ী শাস্তি হোক।
মামলা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত হচ্ছে কীনা? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার সন্দেহ গিয়াস বাবুকে যে আটক করেছে আবার শিমুল ভূইয়া নিজেই বয়ানে বলেছে তার সঙ্গে টাকার লেনদেন নিয়ে কথা হয়েছে। যে আমার বাবাকে হত্যা করেছে সেই কিলার (হত্যাকারী) নিজে বলেছে গিয়াস বাবুর সঙ্গে টাকা নিয়ে কথা হয়েছে। এতে বোঝা যাচ্ছে তা জড়িত থাকতে পারে। আপনারা দেখেছেন, জানবেন হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে ছবি আদান-প্রদান হয়েছে। কিছু না জানলে ছবি কেন আদান প্রদান করবে? এই গিয়াস বাবু, মিন্টু চাচা আমাকে তারা সান্তনা দিতে এসেছিল। আমি যখন বাবার খোঁজ চেয়ে ডিবিসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘুরছি, কাঁদছি। তখন তারা কেন জানালো না? তারা জিনিসটাকে হাইড (গোপন) করেছে। গোপনীয়তা রক্ষা করাও একটা অপরাধ। ছবি লেনদেন টাকা লেনদেন, আবার তিনটা ফোন একদিনে হারায় সব মিলিয়ে তো সন্দেহ হচ্ছে। এটার তো প্রমাণ লাগে না।
কারা তদবির করছে? এমন প্রশ্নের জবাবে মুমতারিন বলেন, দেখেন একজন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গ্রেফতার হয়েছে। এখন তদবির আসতেই পারে। কারা করছে সেটা তো বলতে পারি না। আমি শুনেছি নানা মাধ্যমে অনেক বড় বড় জায়গা থেকে তদবির করা হচ্ছে। শুনেছি তাদের ছাড়ানোর জন্য তদবির করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আমাকে আশ্বস্ত করেছেন। বলেছেন, যেটা আইনে আছে সেভাবেই বিচার হবে। আমি বিশ্বাস করি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এ বিষয়ে তিল পরিমাণ ছাড় দেবেন না।
রাজনীতিতে আসা নিয়ে কোনো চিন্তা আছে কীনা? জবাবে মুমতারিন বলেন, আপাতত রাজনীতি নিয়ে ভাবছি না। রাজনীতে আসলে জানতে পারেবেন। আমার এখন একটাই চিন্তা আমার বাবা হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী, তাদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা। এটা দৃশ্যমান দেখতে চাই।
ডিএনএ পরীক্ষার জন্য তিনি প্রস্তুত এবং কলকাতা পুলিশ ডাকলেই তিনি চলে যাবেন বলে জানান।
সারাবাংলা/জেআর/এনইউ
আনোয়ারুল আজীম আনার এমপি টপ নিউজ মুমতারিন ফেরদৌস সাক্ষাৎ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী