Tuesday 07 Jan 2025
Sarabangla | Breaking News | Sports | Entertainment

রেমালের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত সুন্দরবনও

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট
২৮ মে ২০২৪ ১৯:১৫ | আপডেট: ২৮ মে ২০২৪ ২৩:৩৯

বাগেরহাট: ঘূর্ণিঝড় রেমালের তাণ্ডবে সুন্দরবনের প্রাণ-প্রকৃতির ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ২৬টি হরিণের মৃতদেহ ও ১৩টিকে জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।গাছপালার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বন বিভাগের বিভিন্ন বন অফিসসহ টহলবোট, টিনের চালা, জানালা-দরজা, সোলার প্যানেল ও অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।

জলোচ্ছ্বাসের কবলে পড়ে কটকা অভয়ারাণ্যে অফিস ঘাটের জেটি ও পুকুর বঙ্গোপসাগর গর্ভে বিলিন হয়ে গেছে। দুবলা, কটকা, কোচিখালি, বগিসহ বিভিন্ন বন অফিসসহ ২৫টি টহলফাঁড়ির রান্নাঘরসহ অবকাঠামোর টিনের চালা উড়িয়ে নিয়ে গেছে।

বিজ্ঞাপন

সুন্দরনে অভ্যন্তরে মিঠাপানির পুকুরগুলোও জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে গেছে। সুন্দরবনের ৮০টি মিঠাপানির উৎস পুকুরে ৮ থেকে ১০ ফুট উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে লোনা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় বনকর্মীদের পাশাশাশি বাঘ, হরিণসহ বন্যপ্রাণীরাও সুপেয় পানির সংকটে পড়েছে। সুন্দরবনের বন্যপ্রাণীরা অধিক উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গিয়ে মারা যাওয়ারও খবর মিলেছে।

মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুরে খুলনা অঞ্চলের বন সংরক্ষক (সিএফ) মিহির কুমার দো এসব তথ্য জানিয়েছেন।

তিনি আরও জানান, রোববার (২৬ মে) বিকেল থেকে একটানা ২০ ঘণ্টা ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডব চালায়। সোমবার (২৭ মে) বিকেলে সুন্দরবনের কটকা এবং দুবলা এলাকার নদ থেকে দুইটি মৃত হরিণ উদ্ধার করা হয়। এসময় দুবলা এলাকা থেকে আহত আরও নয়টি হরিণ ভাসমান অবস্থায় উদ্ধার করে বনরক্ষীরা। হরিণের পাশাপাশি আরও বণ্যপ্রাণী মারা যেতে পারে। তাই বন জুড়ে বনরক্ষীদের তল্লাশি চলছে।

এছাড়া, ঝড়ে বনের অভ্যন্তরে ২৫টি টহল ফাঁড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বনের ভেতরে লবণ পানি ঢুকে নষ্ট হয়েছে অন্তত ৮০টি মিষ্টি পানির পুকুর।

বিজ্ঞাপন

পূর্ব সুন্দরবনের একমাত্র করমজল বন্যপ্রাণী প্রজনন ও পর্যটন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাওলাদার আজাদ কবির জানান, ঘূর্ণিঝড় রিমালের তাণ্ডবে পর্যটক চলাচলের কাঠের পোল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপড়ে পড়েছে অসংখ্য গাছপালা। তবে পুরো সুন্দরবনে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা নিশ্চিত করে এখনই বলা সম্ভব নয়।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ নূরুল করিম বলেন, সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের কটকা অভয়ারণ্যের জামতলা এলাকা থেকে ২৬টি হরিণের মৃতদেহ, আর ১৩টি জীবিত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে।

রেমালের আঘাতে মোংলায়ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। টানা ৭২ ঘণ্টা বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকার পর মঙ্গলবার (২৮ মে) দুপুর ১টার দিকে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হয়েছে।

মোংলা উপজেলা প্রশাসন জানিয়েছেন, উপজেলার প্রায় ৬০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। আট হাজার গাছ পালা ও কাচা ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তলিয়ে গেছে দুই হাজার চিংড়ি ঘের। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ এখনো চলমান।

জোয়ার-জলোচ্ছ্বাসে বাগেরহাটে মাছ চাষিদের অন্তত ৭৩ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ঘেরের পাড় ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় আরও তিন কোটি টাকার অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। জেলার অন্তত ৩৫ হাজার মৎস্য ঘেরের মাছ ভেসে গেছে।

বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এ এস এম রাসেল বলেন, ঘূর্ণিঝড় রিমালের প্রভাবে বাগেরহাটের মৎস্য চাষিদের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণের কাজ করছি।

জেলা প্রশাসক মোহা. খালিদ হোসেন জানান, বাগেরহাট জেলায় পাঁচ লাখ মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন। তাদের দুর্ভোগ লাগবে উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

সারাবাংলা/এনইউ

ঘূর্ণিঝড় টপ নিউজ রেমাল

বিজ্ঞাপন

আরো

সম্পর্কিত খবর